ঢাকা, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস): ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) একযোগে এই তিন দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, যা ইসরাইলিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
![]() |
কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি: দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান ও আন্তর্জাতিক চাপের নতুন মাত্রা |
লন্ডন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর নিশ্চিত করেছে। একই দিনে পর্তুগালও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে।
এই পদক্ষেপগুলো ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলে হামাসের হামলার জেরে ফিলিস্তিনে ব্যাপক দমন-পীড়ন শুরু হওয়ার পর ইসরাইলের ওপর ক্রমেই বেড়ে চলা আন্তর্জাতিক চাপকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট ও পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান পরিবর্তন:
দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো যুক্তি দিয়ে আসছিল যে, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কেবল ইসরাইলের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি শান্তি চুক্তির অংশ হিসেবেই হওয়া উচিত।
তবে, কানাডা, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত কার্যত যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের দীর্ঘদিনের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এটি ফিলিস্তিনিদের কয়েক দশক ধরে চলে আসা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য ও কানাডার প্রতিক্রিয়া:
ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক বার্তায় উল্লেখ করেছেন, "আজ ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের শান্তির আশায় এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য যুক্তরাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।"
শিল্পোন্নত (জি সেভেন) সাত দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও কানাডা প্রথম ফিলিস্তিনকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে, যা আগামীকাল সোমবার নিউইয়র্কে শুরু হতে যাওয়া জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফ্রান্স ও অন্যান্য দেশগুলোর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনার পথ খুলে দেবে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নিও এক্স-এ দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেছেন, "আজ থেকে কানাডা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। একই সঙ্গে ফিলিস্তিন ও ইসরাইল উভয় রাষ্ট্রের শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি পূরণে কাজ করারও প্রস্তাব দেন তিনি।"
অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের পদক্ষেপ:
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতির ঘোষণা দেন। তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন যে, এই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না।
অন্যদিকে, পর্তুগাল জানিয়েছে যে, তারা রোববারই নিউইয়র্কে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। পর্তুগিজ প্রেসিডেন্ট বলেছেন, "পর্তুগিজ সরকার যেভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা দুটি রাষ্ট্র থাকার সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখছি।"
ইসরাইলের তীব্র প্রতিক্রিয়া:
এই স্বীকৃতির ঘটনা ইসরাইলিদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং জাতিসংঘে এর বিরোধিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আজ নেতানিয়াহু বলেছেন, "ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি আমাদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করবে এবং সন্ত্রাসবাদ ছড়ানোর কাজ করবে।"
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের অবস্থান:
বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে তিন-চতুর্থাংশেরও বেশি, অর্থাৎ ১৪০টিরও বেশি দেশ ইতিমধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এই নতুন স্বীকৃতিগুলো ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিক সমর্থনকে আরও সুসংহত করবে এবং দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াবে।
এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
ফিলিস্তিন নিয়ে আরও পড়ুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।