সেবা ডেস্ক: মধ্যপ্রাচ্যে টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও গতি পেল।
![]() |
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিল আরও চার দেশ, বাংলাদেশ দিয়েছিল ১৯৮৮ সালে |
গতকাল রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগাল একযোগে ঘোষণা দেয় যে, তারা ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এ নিয়ে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৫১টি দেশ ফিলিস্তিনের সার্বভৌমত্বকে স্বীকৃতি দিল।
গাজায় দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ধরে ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক অভিযান ও জাতিগত নিধনের মধ্যে এই স্বীকৃতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনের পক্ষে এক বড় কূটনৈতিক জয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ ও স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস এই স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েল একে তীব্রভাবে নিন্দা করেছে।
এই চার দেশের স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দাবি আরও জোরালো হলো। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়িয়ে দেবে এবং গাজায় যুদ্ধ ও জাতিগত নিধন বন্ধে ভূমিকা রাখতে পারে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই গাজায় দুর্ভিক্ষ ও জাতিগত নিধনের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেছে।
বাংলাদেশের অবস্থান
ফিলিস্তিনের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন দীর্ঘদিনের এবং ঐতিহাসিকভাবে দৃঢ়। ১৯৮৮ সালের ১৫ নভেম্বর ফিলিস্তিন স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরদিনই, ১৬ নভেম্বর, বাংলাদেশ ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। সেসময় জাতিসংঘের মোট ১৩৭টি দেশ এই স্বীকৃতি দিয়েছিল, বাংলাদেশ তাদের অন্যতম।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই ফিলিস্তিনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বাংলাদেশ ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থন জানায় এবং চিকিৎসক দল ও ত্রাণ পাঠায়। ঢাকায় ফিলিস্তিনের দূতাবাস রয়েছে, কিন্তু ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো কূটনৈতিক বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক নেই।
বাংলাদেশে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন এতটাই দৃঢ় যে ১৯৮০ সালে একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করা হয়, যাতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধা ও আল-আকসা মসজিদের প্রতীকী চিত্র ছিল। ফিলিস্তিনের অবিসংবাদিত নেতা ইয়াসির আরাফাত ১৩ বার বাংলাদেশ সফর করেন, যা দুই দেশের গভীর সম্পর্কের প্রমাণ।
জাতিসংঘে ফিলিস্তিন
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ লাভের প্রচেষ্টাও অব্যাহত। ২০১২ সালে ফিলিস্তিনকে ‘সদস্যবহির্ভূত পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে পূর্ণ সদস্যপদের প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে ভেটোর কারণে পাস হয়নি। তবে সাধারণ পরিষদে পাস হওয়া প্রস্তাবে ফিলিস্তিনকে পূর্ণ সদস্যপদের যোগ্য বলে বিবেচনা করতে নিরাপত্তা পরিষদকে অনুরোধ জানানো হয়।
জি-৭ ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্য ও কানাডা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে এটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এখন দেখার বিষয়, এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করে কিনা এবং দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের অবসান ঘটাতে পারে কিনা।
ফিলিস্তিন নিয়ে আরও পড়ুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।