যুক্তরাষ্ট্রের
বাজারে গত ১৪ বছরে বাংলাদেশি পোশাকের দর কমেছে প্রায় ৪১ শতাংশ!
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকের গবেষণায় বিষয়টি উঠে
এসেছে। গতকাল বিজিএমইএ ভবনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন মার্ক অ্যানার
নামে ওই মার্কিন গবেষক। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পোশাকের বড়
ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের মধ্যে জোট করে দাম কমিয়ে দেয়। এর ফলে পোশাক
উত্পাদনকারীরা কম দামে অর্ডার নিতে বাধ্য হয়।
গবেষণা
প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি
শহীদুল্লাহ আজিম, রিয়াজ বিন মাহমুদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই)
নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর প্রমুখ।
যুক্তরাষ্ট্রের
বাজারে কটন ট্রাউজার জাতীয় পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রথম। দেশটিতে এই
পণ্য রপ্তানিতে বাংলাদেশের পরে চীন, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও
ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান। মার্ক অ্যানার কেবল এ পোশাক পণ্যের দামের ওপর ভিত্তি
করে গবেষণা কর্মটি পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, সাম্প্র্রতিক সময়ে
বাংলাদেশের মতো অন্যান্য দেশে কারখানায় শ্রমিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে
গিয়ে কারখানা মালিককে বিনিয়োগ করতে হয়েছে। অথচ পোশাকের দাম বাড়েনি।
গবেষণা
প্রতিবেদনটি উপস্থাপনকালে বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলামসহ গার্মেন্টস
রপ্তানিকারক ও অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এ
সময় বক্তারা পোশাকের দর বাড়ানোর জন্য ক্রেতাদের সচেতন করার ওপর জোর দেন।
তারা বলেন, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরির জন্য পোশাকের দাম বাড়ানো জরুরি। রানা
প্লাজা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের নিরাপত্তা মানের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব
করে না। সুতরাং এ অজুহাতে পোশাকের দর কমানোর যুক্তি নেই।
বাংলাদেশ
উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের (বিআইডিএস) গবেষক ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, ‘পোশাকের
দর বাড়ানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভূমিকা নিতে পারে। সেই সঙ্গে ক্রেতাদের
মধ্যে সচেতনতাও সৃষ্টি করতে পারে।’ শ্রমিক নেতা সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন,
পোশাকের ন্যায্য দাম না পাওয়া গেলে শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি পাওয়া সম্ভব হবে
না।
এ সময়
বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ খাতের নানামুখী চ্যালেঞ্জ
তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পোশাকের নৈতিক মূল্য (এথিক্যাল প্রাইস) এখন প্রকৃত
ইস্যু। বায়াররা দাম কমিয়ে বলছে, অর্ডার দাও নয়তো ব্যবসা ছেড়ে দাও। আলোচ্য
সময়ে অন্তত আড়াই হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বাজেটে পোশাক
রপ্তানির উেস কর তিন গুণেরও বেশি বাড়ানোর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমরা
বিশ্বাস করি সরকার আমাদের সমস্যা বুঝতে সমর্থ হবে।
তবে
১৪ বছরে দাম না বেড়ে ৪১ শতাংশ কমে যাওয়ার পরও রপ্তানিকারকরা কীভাবে টিকে
আছেন এ বিষয় গবেষণা প্রতিবেদনে বা আলোচনায় আসেনি। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত
ছিলেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম
মোয়াজ্জেম। অনুষ্ঠানশেষে ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ৪১ শতাংশ দাম কমে যাওয়া
মানেই যে রপ্তানিকারকদের ৪১ শতাংশ মুনাফা কমল, তা নয়। এই সময়ে নিশ্চয়ই
উত্পাদনশীলতা বেড়েছে। একই সময়ে হয়তো কাঁচামালের দামও কমতে পারে। নইলে তো
বছরের পর বছর এভাবে লোকসান স্বীকার করে তারা ব্যবসায়ে থাকার কথা নয়।