কোটচাঁদপুর-মহেশপুরে মাদক সিন্ডিকেড সক্রিয়

S M Ashraful Azom
ঝিনাইদহের সীমান্ত সংলগ্ন মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর উপজেলায় বেপরোয়া মাদক ব্যবসা চলছে। কখনও কখনও শীর্ষ জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সুশিল সমাজ ও প্রশাসনের কর্তাদের চাপের মুখে  মাদক ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেডের বিরুদ্ধে পুলিশ নিরুপায় হয়ে অভিযান শুরু করলেও তাদের বাণিজ্য ঘাটতির আশংকায় তা আর স্থায়ী হয়না ।
অন্যদিকে কোটচাঁদপুর শহরের মাঠপাড়া এলাকায়  কথিত এক সাংবাদিকের নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে বিশাল মাদক সিন্ডিকেড। এ সিন্ডিকেডের আওতায় প্রায় অর্ধশত ব্যক্তি মাদক চোরাকারবারির কাজ করছে। তারা মাদক আমদানিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের আমদানিকৃত নেশাজাত দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় মদ, ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা। আমদানি করা মাদকের একটি বড় অংশ কোটচাঁদপুর শহরের বিভিন্ন মাদক স্পট ও আলমপুর ব্রীজঘাট এলাকায় বিক্রি হচ্ছে। পুলিশ সোর্স ওই মাদক  বিক্রেতাকে প্রায়শই তার নিজস্ব সাদা প্রাইভেটে চড়ে কোটচাঁদপুর-কালীগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে চেকপোষ্ট বসিয়ে বিভিন্ন পরিবহনে তল্লাশি করতে দেখা যাচ্ছে। মাঝে মাঝে তার সাথে পুলিশের মধ্যম সারির অফিসার ও কনেস্টবলদের থাকতে দেখা যায়। এতে মাদক উদ্ধার হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আটককৃতদের কাছ থেকে মোটা দাগের টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ  রয়েছে। মাদকসহ কাউকে গ্রেফতার করা হলেও সিংহভাগ গায়েব করে ১০/১৫ বোতল উদ্ধার দেখান হচ্ছে ।
জানা যায়, গত ১৩ মে চৌগাছা উপজেলার জগদিশপুর ইউনিয়নের দক্ষিণসাগর গ্রামের সবুরকে মটর সাইকেল ও শতাধিক বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার করে মহেশপুর পুলিশ। অভিযোগ আছে  গ্রেফতারের  মাত্র চার ঘন্টার মাথায় ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। গত ৯ জুন বিকালে কোটচাঁদপুর শহর সংলগ্ন মহেশপুরের আলমপুর ব্রীজঘাটে  বাজার বণিক সমিতির ব্যানারে সচেতন নাগরিক সমাজ ব্যবসায়ি ও জন প্রতিনিধিরা মাদক বিক্রি বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে আজমপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও বাজার বণিক সমিতির সভাপতি শাহজাহান আলী, সম্পাদক আলী হোসেন মোল্যা ইউপি সদস্য, সুশিল সমাজের প্রতিনিধিসহ সচেতন নাগরিকগণ অংশ নেন। মানববন্ধনে  বক্তারা বলেন, ব্রীজঘাট এলাকায় দানেজের ছেলে আশরাফের নেতৃত্বে অবাধে মাদক বিক্রি করা হচ্ছে। তাঁরা এ ঘটনার জোর প্রতিবাদ জানিয়ে অবিলম্বে মাদক বিক্রি বন্ধের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা কামনা করেন। কিন্তু এতেও পুলিশের কোন টনক নড়েনি। বরং ঠিক ঠাকভাবেই চলছে মাদকের রমরমা ব্যবসা। সরেজমিনে  তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রতি বোতল ভারতীয় মদ ১ হাজার ২শ’ থেকে ২ হাজার ৫শ’ টাকা দরে প্রতিদিন ৪০-৪৫ পিচ, ফেন্সিডিল ৪শ’ থেকে ৪শ’ ৫০ টাকা দরে ১শ’ ৫০ থেকে ১শ’ ৮০ পিচ, ইয়াবা ১শ‘ ৩০ থেকে ১শ’ ৫০ টাকা দরে ১শ’ ৪০ থেকে ১শ‘ ৫০ পিচ ও প্রতি পুরিয়া গাঁজা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ পুরিয়া বিক্রি হচ্ছে।
গত ১৪ মে কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ কোটচাঁদপুর কালীগঞ্জ সড়কের এলাংগি থেকে ফেন্সিডিল বহনকারী একটি ট্রাকসহ মাদক ব্যবসায়ি ও ট্রাকচালককে আটক করে। পরবর্তিতে ৪ লাখ টাকা নিয়ে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগে জানা যায়।  ১৯ মে দুপুরে মাইক্রোচালক রেজাউল সিন্ডিকেডের সদস্য আব্দুল খালেকে ঢাকা মেট্রো-ক-০৩-৯৭২৫ নম্বর প্রাইভেটসহ জনৈক মাদক ব্যবসায়িকে আটক করে। আটকের পর খালেকের মধ্যস্থতায় ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে মাদকসহ তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। ঘটনার পরদিন বিকালে উক্ত খালেক উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনকে নিয়ে ছিনতাই করে পালাবার সময়  জনতার হাতে ধরা পড়ে। জনতা ছিনতাই করা মটর সাইকেল, নগদ ৮০ হাজার টাকা ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত ওই প্রাইভেটটি আটক করে  পুলিশে সোপর্দ করে। উক্ত প্রাইভেটটি বর্তমানে থানার সামনে পড়ে আছে। ২৮ মে সকালে কোটচাঁদপুর থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত হয়। থানা অফিসার ইনচার্জ আহমেদ কবীরের সভাপতিত্বে মেয়র সালাউদ্দিন বুলবুল সিডল, জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার আজবাহার আলী শেখ, কোটচাঁদপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও সুধি মহল উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান স্থলে স্থানীয় আমন্ত্রিতরা পুলিশের কৃতকর্মের জোর সমালোচনা করেন । তাঁরা পুলিশের পালিত সোর্স কর্তৃক জন হয়রানি, তদবীরবাজ দৌরাত্ম, গ্রেফতারের পর অপরাধীকে ছেড়ে দেয়া ও দালালদের কঠোর সমালোচনা করেন। এক পর্যায়ে অনুষ্ঠানে হৈচৈ শুরু হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে থানা কর্তা নড়ে চড়ে বসেন। এক পর্যায়ে গত ৭জুন  শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ি জবেদা (৪২) ও কালিয়া (৪০) কে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায় ।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top