জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজের মেয়াদ তৃতীয় দফা বাড়ানো হলেও ধীরগতির কারণে গত ৫২ মাসে কাজ হয়েছে ৮৪ শতাংশ। সেতুমন্ত্রী বেশ কয়েকবার সরেজমিন পরিদর্শনে এসেও ভালুকা অংশে কাজের গতি বাড়াতে পারেননি।
মন্ত্রীর বেঁধে দেওয়া ২০১৫ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে চার লেন সড়কের কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় তৃতীয় দফায় ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। মহাসড়কে ভালুকা অংশের বেশ কয়েকটি গভীর স্থানে এখনও শুরু হয়নি মাটি ভরাটের কাজ। এ ছাড়া বক্সকালভার্ট নির্মাণে গাফিলতি করায় রাস্তার পাশে বিভিন্ন সময় যানজট লেগেই থাকে।
সামান্য বৃষ্টিতেই মহাসড়কে কাদার সৃষ্টি হয় আর রোদ উঠলে ধুলাবালিতে অন্ধকার হয়ে যায় চারপাশ। ফলে প্রতিনিয়তই পথযাত্রীরা কাদা আর ধুলাবালিতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বাকি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ হচ্ছে না রাস্তা নির্মাণের কাজ। ফলে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না। সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চার লেন প্রকল্পের কাজ চারটি ভাগে চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়।
গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর চৌরাস্তা থেকে শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজারের নয়নপুর পর্যন্ত কাজের দায়িত্ব নেয় সেনাবাহিনী। নয়নপুর থেকে ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা হয়ে ত্রিশালের চেলেরঘাট পর্যন্ত প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড (পিবিএল), চেলেরঘাট থেকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ মোড় পর্যন্ত শামীম এন্টারপ্রাইজ ও তমা এন্টারপ্রাইজ নামে যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কাজের দায়িত্ব নেয়।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার মহাসড়কের কাজ তদারকি করতে আসেন। এ সময় তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার নির্দেশ দিলেও মন্ত্রীর নির্দেশকে উপেক্ষা করে ভালুকা অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড (পিবিএল) প্রতিষ্ঠানটি তাদের ইচ্ছামতো ধীরগতিতেই কাজ করে যাচ্ছে। ভরাডোবা নতুন বাসস্ট্যান্ড থেকে কাঁঠালীহাজীর বাজার পর্যন্ত রাস্তার বেশ কয়েকটি স্থানে দীর্ঘ সময় ব্যয়ে কালভার্ট নির্মাণ করলেও শুরু হয়নি মাটি ভরাটের কাজ। যেভাবে সড়ক নির্মাণ কাজ চলছে তাতে কবে এ নির্মাণকাজ শেষ হবে তার সঠিক সময় বলা যাচ্ছে না।
ভালুকা পৌর সদরসহ জনবহুল এলাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি গাফিলতি করে মহাসড়কের সঙ্গে আঞ্চলিক সড়কের সংযোগ স্থান কয়েক বছর ধরে কেটে ফেলে রাখায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয় লোকজনসহ মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচলরত যাত্রী সাধারণ। অন্যদিকে ভালুকা অংশের বেশ কয়েক স্থানে মহাসড়কের এক পাশের কাজ চলমান থাকায় এবং অপর অংশে মাটি ভরাটের কাজ শেষ না হওয়ায় মহাসড়কে চলাচলরত বিশেষ করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর এলাকার যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এমনকি শুধু ভালুকা অংশের জন্যই আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না বলে মহাসড়কে চলাচলরত যাত্রী সাধারণ ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ রয়েছে।
এ ছাড়া প্রায় সময়ই সালনা ব্রিজ এলাকায় চরম যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এ সমস্যা দূর করা না গেলে ঈদে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে পৌঁছতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগবে বলে একাধিক ট্রাক ও বাসচালক জানান।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর, আরামপ্রদ, নিরাপদ ও যানজটমুক্ত করার লক্ষ্যে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ময়মনসিংহ থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৮৭ দশমিক ১৮ কিলোমিটার সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে ৯০২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে কাজ শুরু করতে বিলম্ব হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বেড়ে গেলে প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ব্যয় ৯৯২ কোটি ১০ লাখ টাকা করা হয়। পরবর্তী সময়ে প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেড প্রায় ১২ কোটি টাকা নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করে।
২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অধীনে ভালুকা, বানার, খীরু, সুতিয়া ও পাগারিয়া নদীর ওপর পাঁচটি সেতু (৪২৯ মিটার), মাওনা বাজারে ৪৫০ মিটার একটি ফ্লাইওভার, সালনায় একটি রেলওয়ে ওভারপাস, জয়দেবপুর, ভালুকা, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহে চারটি স্টিল ফুট ওভারব্রিজ এবং ১১১টি নতুন বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ৩৯টি বক্স কালভার্ট বর্ধিতকরণ করার কথা রয়েছে। চারটি প্যাকেজে কাজ শুরু করার পরপরই দুটি প্যাকেজ মামলার বেড়াজালে দুই বছর আটকে থাকে। গত ৮ এপ্রিল ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাওনা ফ্লাইওভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
২০১০ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রকল্পের অধীনে ভালুকা, বানার, খীরু, সুতিয়া ও পাগারিয়া নদীর ওপর পাঁচটি সেতু (৪২৯ মিটার), মাওনা বাজারে ৪৫০ মিটার একটি ফ্লাইওভার, সালনায় একটি রেলওয়ে ওভারপাস, জয়দেবপুর, ভালুকা, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহে চারটি স্টিল ফুট ওভারব্রিজ এবং ১১১টি নতুন বক্স কালভার্ট নির্মাণ ও ৩৯টি বক্স কালভার্ট বর্ধিতকরণ করার কথা রয়েছে। চারটি প্যাকেজে কাজ শুরু করার পরপরই দুটি প্যাকেজ মামলার বেড়াজালে দুই বছর আটকে থাকে। গত ৮ এপ্রিল ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মাওনা ফ্লাইওভার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন।
২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ চার লেন রাস্তার কাজ শুরু হয়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয় দফা মেয়াদ বৃদ্ধি করে এক মাস বাকি থাকতে কাজ হয়েছে ৮৪ শতাংশ। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো দুই দফা সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করলে প্রথমে ২০১৪ সালের জুন মাস এবং পরে ২০১৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করা হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে পুনরায় সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়। সর্বশেষ ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বর্ধিত করে।
প্রজেক্ট বিল্ডার্স লিমিটেডের (পিবিএল) প্রজেক্ট ডিরেক্টর ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী বলেন, আমরা ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় বর্ধিত করার আবেদন জানাই। তবে আমাদের ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়। ভালুকা অংশের বিলের মাঝে মাটি ভরাটের বিষয়ে তিন বছর ধরে চিঠি চালাচালি করেও সঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করা যাচ্ছে না। তবে ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।
জয়বেদপুর-ময়মনসিংহ চার লেন সড়কের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হাফিজুর রহমান বলেন, প্যাকেজ-১-এর ৯৪ ভাগ, প্যাকেজ-২-এর ৯২, প্যাকেজ-৩-এর ৭৭ ও প্যাকেট-৪-এর ৮০ ভাগ কাজ হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে কাজ শেষ না হলেও খুব দ্রুতই কাজ শেষ হবে।