চার বছর আগের কথা। নাসির নামে এক যুবকের বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে
দিয়েছিলেন। এতেই রাগে কাই হয়ে গিয়েছিল আফগান সরকারের মিলিশিয়া বাহিনীতে
(স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী) কর্মরত নাসির। রাতের অন্ধকারে তার গায়ে এসিড ছুড়ে
মেরেছিলেন ওই যুবক। এ ঘটনার পর পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ২০ বছরের মমতাজ।
যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এটি কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। সেখানকার নারীরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। কট্টরপন্থি তালেবান শাসনামলে নানা প্রকার ধর্মীয় অনুশাসনের ঘেরটেপে বন্দি ছিল সে দেশের নারীরা। বর্তমানে মিলিশিয়াদের নৈরাজ্যের কারণে এখনো নির্যাতীত হচ্ছে তারা। ফলে ইসলামপন্থিদের পতনের পরও কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে না।
নীল রুমালে নিজের দগদগে ঘা ঢেকে রেখে সেদিনের ভয়াবহ রাতের কথা বর্ণনা করছিলেন মমতাজ। তার বেপোরোয়া প্রেমিক আরো ছয় যুবককে নিয়ে জোর করে তার ঘরে প্রবেশ করে। এরপর তার মুখে ঢেলে দেয় ওই তরল জারক।
উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের এক গোপন স্থান থেকে সংবাদ সংস্থা এএফপি প্রতিনিধির কাছে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরছিলেন মমতাজ। তিনি বলেন,‘সে আমার চুল টেনে ধরে মুখে এসিড ফেলে দেয়। তারপর বলে,“দেখি এখন তোকে কে বিয়ে করে।”মুখে এসিড পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে মমতাজ। কিছু ছিটকে পড়েছিল তার মা এবং বোনদের গায়েও।
মমতাজের ওপর এসিড হামলা হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর দীর্ঘ চার বছর কেটে গেছে। তার মুখে বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের কেউ কেউ এখনো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মমতাজকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলেছে। এদের ভয়েই বছরের পর বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
আফগানিস্তানে নারীদের ওপর এসিড ছোড়া একটি সাধারন ঘটনা। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে তারা এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। ধরুন, কোনো মেয়ে মাথায় স্কার্ফ পড়তে চাইলেন না কিংবা কোনো তরুণের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন –এতেই তাদের ওপর এসিড ছুড়ে মাসে প্রতিশোধকামীরা।
১৪ বছর বয়স থেকেই বোরখা পড়তেন সুন্দরী মমতাজ। এরপরও তার ওপর নজর পরে সৈনিক নাসিরের। তখন অহেতুক ঝামেলা এড়াতে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন গমচাষীর কন্যাটি। কিন্তু তালেবান বিরোধী মিলিশিয়াদের দলে থাকায় এলাকায় তার বেশ প্রভাব ছিল। তার বাড়ির সামনে এসে তাকে উত্যক্ত করতে শুরু করেন নাসির। এ নিয়ে তাকে দু কথা শোনায় মমতাজের পরিবার। এতেই ক্ষেপে যায় নাসির। এসে
দু বছর বছর পর অন্য এক যুবকের সঙ্গে মমতাজের বিয়ে ঠিক হয়। এ খবর পেয়ে ১৬ বছরের মমতাজের ওপর রাতের অন্ধকারে এসিড ঢেলে দেয় সে।
ঘটনার পর পালিয়ে গেলেও পরে ধরা পরে নাসির। বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মমতাজের প্রকৃত সমস্যা শুরু এরপর থেকেই। হামলাকারীরা মমতাজের মাথা কেটে নেয়ার হুমকি দিতে শুরু করে। তারা এই বলে হুমকি দেয়,‘জেল থেকে বের হওয়ার পর আমরা তোমার পুরো পরিবারকে হত্যা করব। আমাদের হাত থেকে তোমরা পালাতে পারবে না।’

মমতাজকে আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তা করছে নারী সংগঠন ‘উইমেন ফর আফগান উইমেন’ সংক্ষেপে ডব্লিউএডব্লিউ। সংগঠনের কুন্দুজ শাখার ব্যবস্থাপক হাসিনা সারওয়ার বলেন, ‘আমরা তার নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তিত। নিরাপত্তার জন্য রাতে পর্যায়ক্রমে বন্দুক হাতে পাহাড়া দেয় মমতাজের পুরুষ আত্মীয়রা।’
মমতাজের বাবা সুলতান জানান, মেয়ের নির্পত্তার জন্য তারা এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে জমিতে আবাদ করতে পারছেন না । ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফসল হচ্ছে।
জেলবন্দি নাসিরের আত্মীয়রা মোটর সাইকেল নিয়ে মমতাজকে অনুসরণ করে চলেছেন। সুলতানের ভাষায়,‘ওরা কখনো আমাদের একা হতে দেয় না।’
এএফপি প্রতিনিধি অপরাধীর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কুন্দুজে সরকার এবং বিদ্রোহীদের নিয়মিত সংঘর্ষের কারণে তাদের ওই চেষ্টা সফল হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানে মিলিশিয়াদের উত্থান ঘটেছে। তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কিছু এলাকা উদ্ধার করতে সফল হয়েছে। তবে তারা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ধর্ষণ, চাঁদাবজিসহ নানা প্রকার জুলুম চালাচ্ছে।
গতবছর ক্ষমতায় আসার পর এসব মিলিশিয়াদের নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আশরাফ গনি। নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ এবং পরে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ঘটনায় এসব মিলিশিয়াদের দিকে আঙ্গুল তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট গনি। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে থেকে তালেবান বিদ্রোহীরা উত্তরে ছড়িয়ে পড়ার ওঠার পর এখন এসব স্বেচ্ছাসেবী সেনাদের আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি হিউমেন রাইটস ওয়াচের আফগানিস্তান প্রতিনিধি প্যাট্রিসিয়া গসম্যান বলেছেন,‘মিলিশিয়ারা হত্যা, প্রহার এবং লুণ্ঠনের মত বিচার বহির্ভূত অপরাধ করছে। ফাঁদে পড়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ। এ কারণে কেউ কেউ আবার তালেবানদের সমর্থন করতে শুরু করেছেন।’
এখন সাধারণ আফগানদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো এই মিলিশিয়াদের পুনরায় সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত করতে শুরু করেছে দেশটির সরকার। তবে কুন্দুজসহ গোটা আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্টা করতে চাইলে মিলিশিয়াদের এসব অত্যাচার বন্ধ করতে হবে বলে মনে করছেন প্যাট্রিসিয়া গসম্যান।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে পরিবারের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এর ফলে জীবনে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন মমতাজ। তবে এখনো আতঙ্ক কাটছে না তার। ‘সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি। এই বুঝি ওরা আমাকে
যদিও যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে এটি কোনো ব্যতিক্রমী ঘটনা নয়। সেখানকার নারীরা প্রতিনিয়ত এ ধরনের সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। কট্টরপন্থি তালেবান শাসনামলে নানা প্রকার ধর্মীয় অনুশাসনের ঘেরটেপে বন্দি ছিল সে দেশের নারীরা। বর্তমানে মিলিশিয়াদের নৈরাজ্যের কারণে এখনো নির্যাতীত হচ্ছে তারা। ফলে ইসলামপন্থিদের পতনের পরও কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ছে না।
নীল রুমালে নিজের দগদগে ঘা ঢেকে রেখে সেদিনের ভয়াবহ রাতের কথা বর্ণনা করছিলেন মমতাজ। তার বেপোরোয়া প্রেমিক আরো ছয় যুবককে নিয়ে জোর করে তার ঘরে প্রবেশ করে। এরপর তার মুখে ঢেলে দেয় ওই তরল জারক।
উত্তরাঞ্চলীয় কুন্দুজ প্রদেশের এক গোপন স্থান থেকে সংবাদ সংস্থা এএফপি প্রতিনিধির কাছে নিজের দুর্দশার কথা তুলে ধরছিলেন মমতাজ। তিনি বলেন,‘সে আমার চুল টেনে ধরে মুখে এসিড ফেলে দেয়। তারপর বলে,“দেখি এখন তোকে কে বিয়ে করে।”মুখে এসিড পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে মমতাজ। কিছু ছিটকে পড়েছিল তার মা এবং বোনদের গায়েও।
মমতাজের ওপর এসিড হামলা হয়েছিল ২০১১ সালে। এরপর দীর্ঘ চার বছর কেটে গেছে। তার মুখে বেশ কয়েকবার অস্ত্রোপচারও করা হয়েছে। কিন্তু অপরাধীদের কেউ কেউ এখনো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা মমতাজকে হত্যার হুমকি দিয়ে চলেছে। এদের ভয়েই বছরের পর বছর ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
আফগানিস্তানে নারীদের ওপর এসিড ছোড়া একটি সাধারন ঘটনা। তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে তারা এসিড সহিংসতার শিকার হয়ে থাকে। ধরুন, কোনো মেয়ে মাথায় স্কার্ফ পড়তে চাইলেন না কিংবা কোনো তরুণের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন –এতেই তাদের ওপর এসিড ছুড়ে মাসে প্রতিশোধকামীরা।
১৪ বছর বয়স থেকেই বোরখা পড়তেন সুন্দরী মমতাজ। এরপরও তার ওপর নজর পরে সৈনিক নাসিরের। তখন অহেতুক ঝামেলা এড়াতে বাড়ির বাইরে যাওয়া বন্ধ করে দেন গমচাষীর কন্যাটি। কিন্তু তালেবান বিরোধী মিলিশিয়াদের দলে থাকায় এলাকায় তার বেশ প্রভাব ছিল। তার বাড়ির সামনে এসে তাকে উত্যক্ত করতে শুরু করেন নাসির। এ নিয়ে তাকে দু কথা শোনায় মমতাজের পরিবার। এতেই ক্ষেপে যায় নাসির। এসে
দু বছর বছর পর অন্য এক যুবকের সঙ্গে মমতাজের বিয়ে ঠিক হয়। এ খবর পেয়ে ১৬ বছরের মমতাজের ওপর রাতের অন্ধকারে এসিড ঢেলে দেয় সে।
ঘটনার পর পালিয়ে গেলেও পরে ধরা পরে নাসির। বিচারে তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। মমতাজের প্রকৃত সমস্যা শুরু এরপর থেকেই। হামলাকারীরা মমতাজের মাথা কেটে নেয়ার হুমকি দিতে শুরু করে। তারা এই বলে হুমকি দেয়,‘জেল থেকে বের হওয়ার পর আমরা তোমার পুরো পরিবারকে হত্যা করব। আমাদের হাত থেকে তোমরা পালাতে পারবে না।’
মমতাজকে আইনি এবং চিকিৎসা সহায়তা করছে নারী সংগঠন ‘উইমেন ফর আফগান উইমেন’ সংক্ষেপে ডব্লিউএডব্লিউ। সংগঠনের কুন্দুজ শাখার ব্যবস্থাপক হাসিনা সারওয়ার বলেন, ‘আমরা তার নিরাপত্তা নিয়ে ভীষণভাবে চিন্তিত। নিরাপত্তার জন্য রাতে পর্যায়ক্রমে বন্দুক হাতে পাহাড়া দেয় মমতাজের পুরুষ আত্মীয়রা।’
মমতাজের বাবা সুলতান জানান, মেয়ের নির্পত্তার জন্য তারা এখান থেকে ওখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এতে জমিতে আবাদ করতে পারছেন না । ফলে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ফসল হচ্ছে।
জেলবন্দি নাসিরের আত্মীয়রা মোটর সাইকেল নিয়ে মমতাজকে অনুসরণ করে চলেছেন। সুলতানের ভাষায়,‘ওরা কখনো আমাদের একা হতে দেয় না।’
এএফপি প্রতিনিধি অপরাধীর পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু কুন্দুজে সরকার এবং বিদ্রোহীদের নিয়মিত সংঘর্ষের কারণে তাদের ওই চেষ্টা সফল হয়নি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আফগানিস্তানে মিলিশিয়াদের উত্থান ঘটেছে। তারা তালেবানদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বেশ কিছু এলাকা উদ্ধার করতে সফল হয়েছে। তবে তারা দেশের সাধারণ মানুষের ওপর ধর্ষণ, চাঁদাবজিসহ নানা প্রকার জুলুম চালাচ্ছে।
গতবছর ক্ষমতায় আসার পর এসব মিলিশিয়াদের নিরস্ত্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন আশরাফ গনি। নব্বইয়ের দশকে আফগানিস্তানের গৃহযুদ্ধ এবং পরে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের ঘটনায় এসব মিলিশিয়াদের দিকে আঙ্গুল তুলেছিলেন প্রেসিডেন্ট গনি। কিন্তু সম্প্রতি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে থেকে তালেবান বিদ্রোহীরা উত্তরে ছড়িয়ে পড়ার ওঠার পর এখন এসব স্বেচ্ছাসেবী সেনাদের আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
সম্প্রতি হিউমেন রাইটস ওয়াচের আফগানিস্তান প্রতিনিধি প্যাট্রিসিয়া গসম্যান বলেছেন,‘মিলিশিয়ারা হত্যা, প্রহার এবং লুণ্ঠনের মত বিচার বহির্ভূত অপরাধ করছে। ফাঁদে পড়েছে আফগানিস্তানের সাধারণ মানুষ। এ কারণে কেউ কেউ আবার তালেবানদের সমর্থন করতে শুরু করেছেন।’
এখন সাধারণ আফগানদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ানো এই মিলিশিয়াদের পুনরায় সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত করতে শুরু করেছে দেশটির সরকার। তবে কুন্দুজসহ গোটা আফগানিস্তানে দীর্ঘমেয়াদি শান্তি প্রতিষ্টা করতে চাইলে মিলিশিয়াদের এসব অত্যাচার বন্ধ করতে হবে বলে মনে করছেন প্যাট্রিসিয়া গসম্যান।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে পরিবারের পছন্দের পাত্রের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এর ফলে জীবনে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন মমতাজ। তবে এখনো আতঙ্ক কাটছে না তার। ‘সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকি। এই বুঝি ওরা আমাকে