আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো ও ঢাকা ফেরত মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা থেকে যান চলাচলের প্রচলিত রুটের বাইরে আরও ১০টি রুট নির্ধারণ করেছে সরকার। একই সঙ্গে ঈদের আগের তিন দিন ও পরের তিন দিন মহাসড়কে কাঁচাপণ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও পোশাকশিল্পের পণ্য বহনকারী ট্রাক বা লরি ছাড়া সব ধরনের ট্রাক-লরি, নসিমন-করিমন, ইজিবাইক, মাহেন্দ্র ও টেম্পো চলাচল বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে আগামী ১০ থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশের সব সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ের এক বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে বৈঠকে রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাসির, পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামানসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, ঈদের সময় একই দিন সব গার্মেন্ট ফ্যাক্টরি ছুটি দেওয়া ও খোলা যাবে না। যানজট ও মানুষের চাপ কমাতে ভিন্ন ভিন্ন দিনে গার্মেন্টগুলোকে ছুটি দেওয়া ও খোলার জন্য এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মহানগরীতে প্রবেশ ও বহির্গমনের মূল সড়কগুলোকে বাদ দিয়ে যানজট কমানোর জন্য যাত্রাবাড়ী-ডেমরা-সুলতানা কামাল সেতু-সিলেট রুট; বাবুবাজার ব্রিজ-ইকুরিয়া-পোস্তগোলা ব্রিজ-পাগলা-চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড-সাইনবোর্ড-চট্টগ্রাম রুট; টঙ্গী স্টেশন রোড-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু-মীরেরবাজার-উলুখেলা-কাঞ্চন ব্রিজ-ভুলতা-মদনপুর-চট্টগ্রাম; বাবুবাজার ব্রিজ-ইকুরিয়া পোস্তগোলা ব্রিজ-পাগলা-চাষাঢ়া; নারায়ণগঞ্জ লিঙ্ক রোড-সাইনবোর্ড-সিলেট; টঙ্গী স্টেশন রোড-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু-মীরেরবাজার-ঘোড়াশাল-পাঁচদোনা-সিলেট রুট; টঙ্গী স্টেশন-শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু-মীরেরবাজার-উলুখোলা-কাঞ্চন ব্রিজ-ভুলতা-সিলেট রুট; হাতিরঝিল-রামপুরা-শেখের জায়গা-আমুলিয়া-ডেমরা-সুলতানা কামাল-কাঁচপুর ব্রিজ-সিলেট-চট্টগ্রাম; গাবতলী-মাজার রোড-মীরের দৌড়-আশুলিয়া-ইপিজেড-চন্দ্রা হয়ে উত্তরবঙ্গ; রায়ের বাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী সেতু-জিঞ্জিরা-কেরানীগঞ্জ-মাওয়া এবং মিরপুর মাজার-ধৌউর-বিরুলিয়া-আশুলিয়া-মহাসড়ক-উত্তরবঙ্গ-এই ১০টি রুটের মাধ্যমে যাত্রীবাহী যানবাহনকে ঢাকা ছাড়তে এবং ঈদের পর ঢাকায় প্রবেশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বৈঠকে ঘরমুখো ও ঢাকা ফেরত মানুষের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা দাবি করতে যেন না পারে সেজন্য ঢাকা মহানগরীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী বাস টার্মিনালের জন্য পৃথক তিনটি ভিজিলেন্স টিম গঠন করা হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে মগবাজার ফ্লাইওভারের কাজ ঈদের আগের সাত দিন ও পরের তিন দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ সময় সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের মগবাজার ফ্লাইওভারের ধীরগতির কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোম্পানির সমালোচনা করে বলেন, তারা কি করছেন আমি জানি না। তারা জনগণের ভোগান্তির বিষয়টা কি দেখে না? তাদের কাজ শেষ করতে কত দিন সময় লাগবে? এই প্রকল্পের পিডি (প্রকল্প পরিচালক) চুপ করে আছেন কেন? আমি যোগাযোগ সচিবকে বলব, আপনি গুরুত্বসহকারে কাজটি দেখুন। তারা যদি কাজ করতে না পারে তাহলে তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হোক। নতুন ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হোক। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না।
মগবাজার ফ্লাইওভারের কাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা ও সিডিএর আওতাধীন রাস্তাগুলো ১০ জুলাইয়ের মধ্যে মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা এবং কাটা রাস্তা মেরামত করার নির্দেশ দেওয়া হয় বৈঠক থেকে।
এ ছাড়া গত বছর ভয়াবহ নৌ-দুর্ঘটনা মাথায় রেখে এ বছর যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকাজের জন্য ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর বিশেষ টিম প্রস্তুত রাখার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী ও র্যাবের হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখার কথা বৈঠকে বলা হয়েছে।