‘প্রবৃদ্ধি সহায়ক’ নয়া মুদ্রানীতি ঘোষণা

S M Ashraful Azom
টেকসই অর্থনীতির জন্য প্রয়োজন উত্পাদনমুখী খাতে বিনিয়োগ। তাই নির্বাচিত খাতে বিনিয়োগ করার বিকল্প নেই। সেটা করতে পারলে একদিকে ঋণের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ধীরে ধীরে কমে আসবে ব্যাংক ঋণের সুদের হার। আর বাজেটের নির্ধারিত দেশজ উত্পাদনে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ও ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির জন্য বেসরকারি খাতে ঋণ যোগানের লক্ষ্যমাত্রা ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বেসরকারি খাতের এ বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশবান্ধব খাতে গেলে তাতে কমবে আর্থিক ঝুঁকি। চলতি অর্থবছরের (২০১৫-১৬) প্রথমার্ধের নতুন মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। এবারের মুদ্রানীতিকে ‘প্রবৃদ্ধি সহায়ক’ বলে আখ্যায়িত করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
 
গতকাল বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গভর্নর ড. আতিউর রহমান মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে এসব কথা বলেন। অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নরের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের চেঞ্জ ম্যানেজমেন্ট অ্যাডভাইজার আল্লাহ মালিক কাজেমী, ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী ও প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্য ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
 
অনুষ্ঠানে গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে অভ্যন্তরীণ ঋণ প্রবৃদ্ধি জুন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও তা ১৩ দশমিক ৬ শতাংশের মতো অর্জিত হবে। আর অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপিত ১৭ দশমিক ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকটা নিচে মে পর্যন্ত ছিল ১০ দশমিক ৪ শতাংশ। জুনে তা কিছুটা বাড়লেও ১১ শতাংশের নিচে থাকবে। বিনিয়োগের জন্য অবকাঠামোগত সুবিধার অপ্রতুলতা, বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি মন্দা এবং দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে রাজনৈতিক অস্থিরতাজনিত বিঘ্নের প্রেক্ষাপটে এমন হয়েছে বলে  মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বাজেটে দেশজ উত্পাদনে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ৬ দশমিক ২ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মাত্রা ধরে অভ্যন্তরীণ ঋণ যোগানের প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বর পর্যন্ত ৮ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের জুন পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৭ শতাংশ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। আর বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৩ এবং জুন’ ১৬ পর্যন্ত ১৫ শতাংশ ধরা হয়েছে।
 
ব্যাংক ঋণের গুণগত মান রক্ষা করার জন্য নির্বাচিত খাতে ঋণ দেয়া হবে উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের উত্পাদন উদ্যোগগুলোর অর্থায়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারের সঞ্চয় যোগান বর্ধিত মাত্রায় সঞ্চালিত হচ্ছে। তিনি জানান, নতুন ২০১৬ অর্থবছরে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা) দুটি অর্থায়ন সূত্র যোগ হবে। প্রথমটি হলো বিশ্বব্যাংক থেকে আহরণ করা ৩০০ মিলিয়ন ডলারের একটি তহবিল। আর দ্বিতীয়টি হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব সূত্রের ২০০ মিলিয়ন ডলার পুন:অর্থায়ন সহায়তা।
 
প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরূপাক্ষ পাল বলেন, বেশি ঋণ দেয়ার চেয়ে মানসম্পন্ন ঋণের দিকে নজর দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর ব্যাংকগুলোর খেলাপী ঋণ কমিয়ে আনার কথা বলা হচ্ছে, একইসঙ্গে তাদের দক্ষতা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে।
 
প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ছয় মাস অন্তর আগাম মুদ্রানীতি ঘোষণা করে থাকে। দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় মুদ্রানীতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর মাধ্যমে পরবর্তী ছয় মাসে অভ্যন্তরীণ ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, অভ্যন্তরীণ সম্পদ, বৈদেশিক সম্পদ কতটুকু বাড়বে বা কমবে তার একটি পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top