ঈদ মুবারক

S M Ashraful Azom
আজ মাহে রমজানের শেষ শুক্রবার-জুমাতুল বিদা। আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল উদযাপিত হইবে পবিত্র ঈদুল ফিতর। মাসব্যাপী সেহরি, সওম ও ইফতারের মাধ্যমে বিশ্বাসীগণ ‘আল্লাহ-ভীতি’ বা তাকওয়া অর্জন ও আত্মশুদ্ধির যে সাধনায় ব্যাপৃত থাকেন, ঈদ-উল-ফিতর উহার পূর্ণতার সুসংবাদ। মুসলিম উম্মাহর শ্রেষ্ঠ উত্সব ঈদ, বৈশিষ্ট্যে ও তাত্পর্যে অনন্যসাধারণ। পশ্চিম আকাশে শওয়ালের চাঁদের উদ্ভাস তাই মুসলিম জাহানের ঘরে ঘরে পুণ্যস্নাত খুশির বার্তা ছড়াইয়া দেয়। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, এইদিন রোজাদারগণ মাসুম শিশুর ন্যায় নিষ্পাপ মানুষে পরিণত হন। একজন সিয়াম সাধকের কাছে তিনটি মুহূর্ত অতীব গুরুত্বপূর্ণ, আর তাহা হইল—ইফতার, ঈদ-উল-ফিতর ও মহান আল্লাহ তায়ালার দিদার লাভের সময়। রোজার শেষে ঈদের দিনে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলে ভাগ করিয়া নেন আনন্দধারা এবং এই আনন্দ সর্বতোভাবে সামাজিক মিলনের জন্য নির্ধারিত হওয়ায় এই দিনে রোজা রাখা হারাম বা নিষিদ্ধ করা হইয়াছে।

আইয়ামে জাহিলিয়াত বা ইসলামপূর্ব অজ্ঞানতার অন্ধকার যুগে আরবে নানা প্রকার উত্সব জনপ্রিয় ছিল। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মক্কা হইতে মদীনায় হিজরত করিয়া দেখিতে পাইলেন যে, এই জাতীয় উত্সবে আবালবৃদ্ধবনিতা নানা ধরনের স্থূল ও অর্থহীন ক্রীড়া ও উত্সবে মাতিয়া উঠিয়াছে। মহানবী (সা.) তখন হইতেই তাহাদের লক্ষ্যহীন উদ্দেশ্যহীন আনন্দ-উত্সবের সেই প্রাচীন ধারার পরিবর্তে মুসলিম জাতির জন্য আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শময় ও বহুবিধ মানব-কল্যাণধর্মী ঈদ-উল-ফিতরের প্রবর্তন করিলেন, উদ্বোধন করিলেন সামাজিক সমপ্রীতি গড়িয়া তোলার এক মহা-মিলন বন্ধনের সোপান। তিনি উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করিলেন: ‘লিকুল্লি ক্কওমিন ঈদ, হা-যা ঈদুনা।’ এইভাবে হিজরি দ্বিতীয় বর্ষে ঈদের শুভ প্রচলন হয়। আসলে একজন মুসলিমের জীবনে ঈদের অর্থ হইল আত্মার আনন্দ। চিত্তলোকের পরমানন্দ। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে নফ্স-এর উপর রূহানি বা আধ্যাত্মিক শক্তির বিজয়ের আনন্দ। ইহাতে একজন আল্লাহঅলা মু’মিনের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। মনে আসে অপরিমেয় প্রশান্তি। একইসঙ্গে দীন-হীন-দুঃখী ও দুঃস্থজনদের সাদকায়ে ফিতর ও যাকাত দানের মাধ্যমে মন আরও পরিশুদ্ধ ও পুণ্যস্নাত হইয়া ওঠে। প্রসঙ্গত বলা আবশ্যক যে, ঈদের জামাতের আগেই সামর্থবান মুসলমানগণ ফিতরা প্রদান করিয়া থাকেন। ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ জাকাতের যে বিধান রহিয়াছে, তাহাও আদায় করা হইয়া থাকে মাহে রমজানে।

বস্তুত; সকল প্রকার অন্যায় অপকর্ম হইতে বিরত থাকিবার পাশাপাশি পরহীত ব্রতের মাধ্যমে যে আত্মিক আনন্দ, তাহার মধ্যেই নিহিত রহিয়াছে ঈদের মর্মবাণী। আশরাফুল মখলুকাত হিসাবে মানবজীবনের সুন্দরতম বিকাশের যে সাধনা বা ব্রত, তাহার মধ্য দিয়াই ধর্মের পরিপূর্ণতা ও পবিত্রতা পরস্ফুিট হইয়া ওঠে। প্রকৃত মুমিনদের কাছে তাই রমজান ও ঈদ-উল-ফিতরের দিনটি যেমন, তেমনি বাকি এগার মাস তথা জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মনুষ্যত্বের মহান সাধনা বৈ কিছু নয়। মাহে রমজান আমাদের সেই শিক্ষাই দিয়া যায়। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে এই মহান চেতনা জাগরুক রাখিতে আল্লাহরাব্বুল আলামীন আমাদের নামাজ-রোজাসহ সকল ইবাদত-বন্দেগি কবুল করুন।

ঈদ উত্সবে বাড়ি যাওয়া আমাদের সংস্কৃতিরই অংশ। আর এই যাত্রা প্রায়শই হইয়া ওঠে বিড়ম্বনাময়। কিন্তু এইবার পরিস্থিতি অতীতের তুলনায় অনেকটাই ভাল। দীর্ঘ পথে যানজট লাঘবের জন্য আগে হইতেই ব্যবস্থা নেওয়া হইয়াছে। পুরা রমজানে নিত্যপণ্যের দামও এইবার মোটামুটি স্বাভাবিক ছিলো। সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভাল। এই অবস্থাটি ঈদ অবকাশকে অধিকতর আনন্দময় করিয়া তুলিবে বলিয়া আশা করা যায়। মিলনের ও উত্সবের এই অবকাশে আমরা কায়োমনো বাক্যে কামনা করি দেশ ও জাতির সুখ ও সমৃদ্ধি। ঈদ মুবারক।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top