মিসরের সিনাই
উপদ্বীপের উত্তরাঞ্চলে জঙ্গি হামলায় অন্তত ৬০ জন সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন।
বুধবার সিনাইয়ের তল্লাশি চৌকিগুলোতে আইএস জঙ্গিদের সিরিজ হামলার ফলে এই
হতাহতের ঘটনা ঘটে। এই হামলাগুলোর মধ্যে তিনিটি আত্মঘাতি হামলাও রয়েছে।
সিনাই প্রদেশে ইসলামিক স্টেট (আইএস) সংশ্লিষ্ট একটি জঙ্গি গ্রুপ বুধবারের এ
হামলার দায় স্বীকার করেছে।
জঙ্গি
গোষ্টি আইএসের কার্যকলাপ সম্পূর্ণ আধুনিক বলে মন্তব্য করেন রাজনাথ। তিনি
জানান, এরা ২০১৪ সালের জুলাই মাসে ডাবিক নামে একটি ইংরেজি পত্রিকা বের
করেছে। কাশ্মীর ও কেরালার মতো রাজ্যে এই পত্রিকা ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে
তিনি জানান।
এদিকে
আল কায়েদা ও আইএস যৌথভাবে ভারতের মাটিতে খুব শীঘ্রই একটি বড় ধরনের জঙ্গি
হামলার জন্য তৈরি হচ্ছে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের কেন্দ্রীয়
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার
পত্রিকাকে তিনি একথা বলেন।
মিসরে
এ সপ্তাহে এটি দ্বিতীয় বড় ধরনের হামলা। এর আগে গত সোমবার রাজধানী কায়রোয়
একটি গাড়ি বোমা হামলায় দেশটির সরকারি কৌসুলি হিশাম বারাকাত নিহত হন। এতে
জঙ্গি তত্পরতা দমনে মিসর সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দেশটির
সেনাবাহিনী জানিয়েছে, প্রায় ৭০ জন জঙ্গি ১৫টি তল্লাশিকেন্দ্রে হামলা করেছে
এবং সেনারা বিমানবিধ্বংসী অস্ত্র তাক করা তিনটি ল্যান্ডক্রুজার ধ্বংস
করেছে।
নিরাপত্তা
বাহিনী জানিয়েছে, জঙ্গিরা শেখ জুয়েইদ শহরের একটি পুলিশ স্টেশন ঘিরে রেখেছে
এবং বোমা পেতে রেখেছে। সেনা সদস্যদের পাল্টা হামলায় অন্তত ২৩ জঙ্গি নিহত
হয়েছে। প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের জুলাইয়ে দেশটির নির্বাচিত ইসলামপন্থী
প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উত্খাতের পর থেকে শুরু করে এ
পর্যন্ত জঙ্গিদের হামলায় অন্তত ৬০০ নিরাপত্তা সদস্য নিহত হয়েছেন।
গতকালের
হামলায় ২২ সন্ত্রাসীও নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র
জানায়, সিনাইয়ের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার অন্তত পাঁচটি হামলা চালানো
হয়। গাড়ি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে চালানো এ হামলায় অংশ নেয় ৭০ জনেরও বেশি
জঙ্গি। সিনাই ছাড়াও শেখ জুয়েদ শহরের একটি থানায়ও হামলা চালিয়েছে
সন্ত্রাসীরা। অবশ্য, এখানকার হামলায় কতজন হতাহত হয়েছে তা জানা যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা শেখ জুওয়েদ এবং রাফায় বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। গ্রেনেড
হামলার ভয়ে অনেক অধিবাসী ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছে।হামলার পর ফেসবুকে এক
স্ট্যাটাসে এ হামলার দায় স্বীকার করে ইসলামিক স্টেট। এতে দাবি করা হয়,
অন্তত ১৫টি সেনা চৌকি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় তিনটি আত্মঘাতী
হামলাও চালানো হয়। হামলা চালানো হয় সেনাবাহিনীর অফিসার্স ক্লাবেও। আইএসের
দাবি, এখনো লড়াই চলছে। সিনাইয়ে ইসলামপন্থী জঙ্গিদের হামলায় এ পর্যন্ত শত শত
সেনা ও পুলিশ সদস্য মারা গেছে। সিনাইয়ের জঙ্গিরাও ইসলামিক স্টেটের প্রতি
আনুগত্য ঘোষণা করেছে।
ভারতেও হামলার আশঙ্কা
রাজনাথের
ভারতের
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের আনন্দবাজার
পত্রিকাকে বলেছেন, বিভিন্ন সূত্রে তাদের কাছে খবর এসেছে জঙ্গিরা হামলার
জন্য ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে ফেলেছে। এই জিহাদি গোষ্ঠীগুলি সিরিয়া ও ইরাকে
বিশেষ ভাবে সক্রিয়। প্রায় ১৭ হাজার জিহাদি এই গোষ্ঠীগুলিতে যুক্ত হয়েছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা এবং উপসাগরীয় এলাকায় এরা সক্রিয়। আল
কায়দা নেতৃত্ব আনুষ্ঠানিক ভাবে আইএসের সঙ্গে নিজেদের একাত্মতা ঘোষণা করেছে।
এরপর আমেরিকা, কানাডা, ইউরোপ ও অস্ট্রেলিয়াতে যেমন ওরা ছড়িয়ে পড়েছে তেমনই
ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানেও শিকড় বসানোর চেষ্টায় আছে।
রাজনাথ
বলেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্র এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। কাশ্মীরে
গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হওয়ার পর জঙ্গিদের মধ্যে হতাশা এসেছে। সেই হতাশা
কাটানোর জন্য উপত্যকায় একটা বড় ধরনের হামলার চেষ্টা চলছে।
ভারতের
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, এখন পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থার
সঙ্গে আইএস তাদের কৌশল আবার বদলাচ্ছে। টুইটার এবং ফেসবুককে ছদ্মনাম ব্যবহার
করা হচ্ছে। পৃথিবীর নানা প্রান্তে প্রায় দু’হাজার আইএস সমর্থকের
অ্যাকাউন্ট রয়েছে। বিশেষত আরব জাহানে ২০১০ থেকে এই গোষ্ঠী সোশ্যাল মিডিয়াকে
কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। জিহাদ নামক শব্দটি অপব্যবহার করে জঙ্গিরা ভারতে
সন্ত্রাসের আবহ তৈরি করছে।