কালোজিরের যতগুণ

S M Ashraful Azom
কালোজিরের বোটানিক্যাল নাম হচ্ছে ‘নাইজিলা সাটিভা’ (ঘরমবষষধ ংধঃরাধ), এটি পার্সলে পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এটি রাজা টুট এর সমাধি থেকে আবিষ্কৃত হয় এবং সে-সময় এটা পরকালে ব্যবহার করা হয় বলে বিশ্বাস করা হত। মানুষ ২০০০ বছর ধরে ওষুধ হিসাবে কালোজিরের বীজ ব্যবহার করে আসছে। এটি লতাপাতা জাতীয় একটি উদ্ভিদ। এর সূক্ষ্ম বেগুনি ও সাদা ফুল হয়ে থাকে। মশলা হিসাবে কালোজিরের চাহিদা অনেক। কালোজিরের বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় যা মানব শরীরের জন্য খুব উপকারী। এতে আছে ফসফেট, লৌহ, ফসফরাস। এ ছাড়া, এতে রয়েছে ক্যানসার প্রতিরোধক কেরাটিন, বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী উপাদান এবং অম্ল রোগের প্রতিষেধক। কালোজিরে গাছের বীজে প্রায় ১০০টি রাসায়নিক যৌগ আছে। এখানে নামসহ কয়েকটি উল্লেখ করা হল-রোমান সা¤্রাজ্যের মতো প্রাচীন সভ্যতাগুলো কালোজিরেকে ‘সর্ব আরোগ্য’ (চধহধপবধ) বলা হত যার আক্ষরিক অর্থ ‘সর্বব্যাধির ওষুধ’ (পঁৎব ধষষ)। রোমে ওষুধ হিসেবে কালোজিরের ব্যাপক ব্যবহার ব্যাখ্যা করা হয়েছে। কালোজিরেয় রয়েছে প্রোটিন, ভিটামিন বি-১, ভিটামিন বি-২, ভিটামিন বি-৩, ক্যালশিয়াম ও আয়রন।  কালোজিরের মূল স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলোর কিছু নিচে উল্লেখ করা হল-   * কালোজিরেয় নি¤œ রক্তচাপকে বৃদ্ধি এবং উচ্চ রক্তচাপকে হ্রাসের মাধ্যমে শরীরে রক্তচাপ এর স্বাভাবিক মাত্রা সুনিশ্চিত করতে সহায়তা করে। * এটি শ্বসনতন্ত্র সংবহন এবং ইমিউন সিস্টেম, পেট এবং অন্ত্র, কিডনি এমনকি লিভার সম্পর্কিত রোগের চিকিৎসা করে। * কালোজিরে মায়েদের বুকের দুধের প্রবাহ এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। * কালোজিরে ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা কমিয়ে ডায়াবেটিস আয়ত্তে রাখতে সহায়তা করে। * কালোজিরে চুলের গোড়ায় পুষ্টি পৌঁছে দিয়ে চুলপড়া বন্ধ করে এবং চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। * কালোজিরে মস্তিস্কের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মরণ শক্তি বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। * কালোজিরে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করে। * নিয়মিত কালোজিরে সেবন শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গকে সতেজ করে ও সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে। * অরুচি, উদরাময়, শরীর ব্যথা, গলা ও দাঁতের ব্যথা, মাইগ্রেন, চুলপড়া, সর্দি, কাশি, হাঁপানি নিরাময়ে কালোজিরে সহায়তা করে। * ক্যানসার প্রতিরোধক হিসাবে কালোজিরে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। * চুলপড়া, মাথাব্যথা, অনিদ্রা, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখশ্রী ও সৌন্দর্য রক্ষা, অবসন্নতা-দুর্বলতা, নিষ্ক্রিয়তা ও অলসতা, আহারে অরুচি তথা স্মরণশক্তি বাড়াতেও কালোজিরে উপযোগী। * মাথাব্যথায় কপালে, চিবুকে ও কানের পার্শ¦বর্তী স্থানে দৈনিক ৩/৪ বার কালোজিরে তেল মালিশ করলে উপকার পাওয়া যায়। * চায়ের সঙ্গে নিয়মিত কালোজিরে মিশিয়ে অথবা এর তেল বা আরক মিশিয়ে পান করলে হৃদরোগে যেমন উপকার হয়, তেমনি মেদও বিগলিত হয়। * জ্বর, কফ, গায়ের ব্যথা দূর করার জন্য কালোজিরে যথেষ্ট উপকারী বন্ধু। এতে রয়েছে ক্ষুধা বাড়ানোর উপাদান। পেটের যাবতীয় রোগ-জীবাণু ও গ্যাস দূর করে ক্ষুধা বাড়ায়। * কালোজিরে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট, অর্থাৎ শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান। এ উপাদানের জন্য শরীরে সহজে ঘা, ফোড়া, সংক্রামক রোগ (ছোঁয়াচে) হয় না। * দাঁতে ব্যথা হলে কুসুম গরম পানিতে কালোজিরে দিয়ে কুলকুচি করলে ব্যথা কমে, জিহ্বা, তালু, দাঁতের মাড়ির জীবাণু মরে। দেহের কাঁটা-ছেঁড়া শুকানোর জন্য কাজ করে। * কালোজিরে কৃমি দূর করার জন্য কাজ করে। * মধ্যপ্রাচ্যে প্রচলিত আছে যে কালোজিরে পুরুষহীনতা থেকে মুক্তি দিতে সহায়তা করে।তবে একটা কথা বিশেষভাবে মনে রাখা উচিত, বেশি পুরোনো হয়ে যাওয়া কালোজিরের তেল স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সাংবাদিক-কলামিস্ট।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top