৬ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার ১০১, গুম ২৯

S M Ashraful Azom
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত আইনশৃঙখলা বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ১০১ জন নিহত, ২৯ জন গুম এবং রাজনৈতিক সহিংসতায় ১৩২ জন মারা গেছেন।

দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে সংখ্যাগত প্রতিবেদনের মাধ্যমে মঙ্গলবার এসব তথ্য প্রকাশ করেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।

এতে বছরের প্রথম ছয় মাসে আইনশৃঙখলা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কর্তৃক এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানবাধিকার লঙ্ঘনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।


প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রথম ছয় মাসে দেশে আইনশৃঙখলা বাহিনীর হেফাজতে ও ক্রসফায়ারে ১০১ জন নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক সংঘাতে মারা গেছেন ১৩২ জন, সীমান্তে বিএসএফের গুলি ও নির্যাতনে ২৩ জন, কারাগারে ৩৪ জন, গণপিটুনিতে ৬৯ জন মারা গেছেন।

এছাড়া আইনশৃংখলা বাহিনীর পরিচয়ে ২৯ জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার পর ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। দেশে ধর্ষণের ঘটনা আশঙ্কাজনক বেড়ে গিয়ে এ সময়ে ধর্ষণ পরবর্তি মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ জনে।

জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত ও আসকের নিজস্ব সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে মানবাধিকার লংঘনের এ সংখ্যাগত প্রতিবেদন তৈরির দাবি করেছে সংস্থাটি।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ছয় মাসে জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে— আইনশৃংখলা বাহিনীর হেফাজতে/‘ক্রসফায়ারে’ মোট ১০১ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে র‌্যাবের ক্রসফায়ারে ২২, পুলিশের ক্রসফায়ারে ৪০, ডিবি পুলিশের হাতে ৭ জন, র‌্যাব-বিজিবির ক্রসফায়ারে ১, যৌথবাহিনীর হাতে ১ জন ও আনসারের ক্রসফায়ারে ১ জন নিহত হয়েছেন।

এছাড়া পুলিশ, ডিবি, র‌্যাব ও বিজিবির নির্যাতনে মারা গেছেন ৭ জন। এ সময় পুলিশের গুলিতে ১৪ জন ও ডিবি পুলিশের গুলিতে ১ জন নিহত হয়েছেন।

এদিকে থানা হাজতে আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন, গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ২ জন ও র‌্যাব হেফাজতে ১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া পরিবারের দাবি, ট্রেনের নিচে ফেলে হত্যা করা হয়েছে ১ জনকে।

সীমান্তে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র তুলে ধরে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ছয় মাসে ভারতীয় সীমান্তরক্ষা বাহিনী বিএসএফের গুলিতে ১৫ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। এছাড়া বিএসএফের নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের, আহত হয়েছেন ৩৮ জন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইন-শৃংখলাবাহিনীর পরিচয়ে এ সময়ের মধ্যে ২৯ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর ৪ জনের লাশ পাওয়া গেছে। এভাবে গুম হওয়া বাকিদের মধ্যে মাত্র একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং মাত্র একজন ফিরে এসেছেন।

এই ২৯ জনের মধ্যে রয়েছেন— বিএনপি-যুবদলের ২ জন, জামায়াতের ৪ জন, যুবলীগের ১ জন, ছাত্র ৯ জন, নারী ২ জন, চাকুরিজীবী ১ জন, মুদি ১ জন, পোশাক শ্রমিক ১ জন ও পরিচয় জানা যায়নি এমন ৩ জন।

বছরের এই সময়টিতে ৬৬০টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন কমপক্ষে ১৩২ জন। আহত হয়েছেন ৩৮৯২ জন। নিহতদের মধ্যে ৭০ জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছেন।

দেশে ধর্ষণের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে এই সময়টিতে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ছয় মাসে ৩২৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৯ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ১ নারী। এছাড়া ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে ৫২ জন নারীর ওপর।

এ সময়ে ১৬১ জন সাংবাদিক বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি ও পেশাগত কাজে বাধার সম্মুখিন হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়।

এই ছয় মাসে কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে কয়েদি ১৩ জন, হাজতি ২১ জন।

এছাড়া গণপিটুনিতে মারা গেছেন ৬৯ জন, এসিড সন্ত্রাসের শিকার ১৭ নারীর ১ জন মারা গেছেন, ২২ গৃহপরিচারিকা নির্যাতনের শিকার হয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া রহস্যজনকভাবে মারা গেছেন আরো ১১ গৃহকর্মী।

পরিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০০ জন নারী, এদের মধ্যে ১৪৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। নির্যাতনের শিকার নারীদের মধ্যে ৩২ নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।

এ সময়ে দেশে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে ৬ নারী আত্মহত্যা করেছেন। যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে ১ নারী ও ১ পুরুষ নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৯৪ জন নারী-পুরুষ হয়রানি ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন।

আসকের প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়, দেশে যৌতুক সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন ১৩৩ জন নারী। এদের মধ্যে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৭ জন। যৌতুকের জন্য নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে ৯১ জন নারীকে। আর নির্যাতনের পর আত্মহত্যা করেছেন ২০ জন নারী।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top