চিহ্নিত প্রতিষ্ঠানের ৬৫ ভাগই ইসিআর ব্যবহার করে না আইনি ব্যবস্থা নেবে এনবিআর

S M Ashraful Azom
পণ্য বা সেবা বিক্রয়কালে সঠিক হিসাব রাখার স্বার্থে ‘ইলেক্ট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার’ (ইসিআর) মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হলেও তাতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ১১ ক্যাটাগরির সাড়ে ৮ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে লেনদেনের ক্ষেত্রে এ মেশিন ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু গত ৭ বছরে মাত্র ৩৫ শতাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এই মেশিন ব্যবহারের আওতায় এসেছে। সমপ্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর’র এক জরিপে দেখা গেছে, চিহ্নিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫ শতাংশই ইসিআর মেশিন ব্যবহার করছে না।
 
এদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের সঠিক হিসাব সংরক্ষণ না হওয়ায় কাঙ্ক্ষিত ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আদায় হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া যে সব প্রতিষ্ঠান এটি ব্যবহার করছেন তারাও কোন না কোন উপায়ে কারসাজি করছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন খোদ এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান। সমপ্রতি সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইসিআর ব্যবহারকারী অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ‘মেশিন ট্যাম্পারিংয়ের’ মাধ্যমে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে। এনবিআর বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। এ প্রক্রিয়ায় ভ্যাট ফাঁকিবাজদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান। ইত্তেফাককে তিনি বলেন, এটি পরীক্ষা করার জন্য ইতোমধ্যে কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছি। এ জন্য ভ্যাট গোয়েন্দা দপ্তরকে আরো শক্তিশালী করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব ফাঁকি প্রশ্রয় দেয়া হবে না।
 
সূত্র জানায়, এনবিআরের মাঠ পর্যায়ের অফিস ২০০৮ সালে ১১ ক্যাটাগরির মধ্যে প্রায় সোয়া ১১ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ইসিআর ব্যবহার উপযোগী বলে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ৮ হাজার ৫৫৯টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করে। তাদের পণ্য সেবা বিক্রয় সংক্রান্ত লেনদেন ইসিআর বা পয়েন্ট অফ সেলস-পিওএস সফটওয়্যারের মাধ্যমে হিসাব রাখা বাধ্যতামূলক করে। এই তালিকায় রয়েছে হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুড, মিষ্টির দোকান, ফার্নিচার, বিউটি পার্লার, কমিউনিটি সেন্টার, ডিপার্টমেন্টাল ও জেনারেল স্টোর, জুয়েলারি, মাঝারি ও বড় আকারের পাইকারি ও খুচরা দোকান এবং মেট্রোপলিটন এলাকার শপিংমলে অবস্থিত সব ধরনের দোকান।
 
কিন্তু এনবিআর সমপ্রতি জরিপ চালিয়ে দেখেছে, চিহ্নিত করা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৩৫ শতাংশ ইসিআর বা পিওএস সফটওয়্যার ব্যবহার করছে। যার সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৯৭০টি। বাকি ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানেই ইসিআর নেই বা তারা এটা ব্যবহার করছে না।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইসিআর বাধ্যতামূলক করা নিয়ে ওই সময় এনবিআর ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে মতানৈক্য তৈরি হয়। এ ব্যবস্থার কিছু দুর্বলতা তুলে ধরে ওই সময় দোকান মালিক সমিতি এ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তখন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ভ্যাট বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির প্রধান ছিলেন ব্যবসায়ী নেতা আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল ইত্তেফাককে তিনি বলেন, ‘ইসিআর ব্যবহারের যৌক্তিকতা থাকলেও সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে এটির ব্যবহার সম্ভব নয়। যেমন বড় মিষ্টির দোকানের পাশাপাশি গলির মধ্যে ছোট আকারের দোকানও আছে। জেনারেল স্টোর ও ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের আয়তন আর আয়ে তারতম্য রয়েছে। একই ক্যাটাগরিতে পড়লেও সবার আয় এক নয়। ফলে প্রকৃত অর্থে কারা ইসিআর বা পিওএস ব্যবহার করবে সেটি আগে ঠিক করতে হবে।’
 
এফবিসিসিআইয়ের সাবেক এ পরিচালক আরো বলেন, এ ধরনের একটি মেশিনের দামও মানভেদে অনেক। এটি ক্রয়ের সামর্থ্য সব ধরনের ব্যবসায়ীর পক্ষে না-ও থাকতে পারে। এ ধরনের অনেক দুর্বলতা রয়েছে। এনবিআর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে এসব দুর্বলতা চিহ্নিত করে এটি চালু করলে ভালো ফল দেবে। তবে এটি চালু না করার মানসিকতা থেকেও দোকান মালিক সমিতিকে বের হতে হবে বলে মনে করেন তিনি।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top