মস্তিষ্ক ও গলার ক্যান্সার চিকিত্সায় নতুন দিগন্ত

S M Ashraful Azom
সেবা ডেস্ক:  ক্যান্সার রোগের চিকিত্সায় একটি ইমিউনিথেরাপি ড্রাগ আবিষ্কার করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এই ড্রাগ ব্যবহারের ফলাফল বিশ্লেষণ করে এই মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হচ্ছে, এই ওষুধ মস্তিষ্ক ও গলার ক্যান্সার রোগীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করবে। ইউরোপীয় ক্যান্সার কংগ্রেসে এই ওষুধের ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে।
 
মস্তিষ্ক ও গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, যাদেরকে নিভোলুম্যাব ওষুধ দেওয়া হয়েছে তারা বেশি দিন বেঁচেছিলেন। আর যাদেরকে কেমোথেরাপির সাহায্যে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে তারা তুলনামূলক কম দিন বেঁচে ছিলেন।
 
আরেকটি গবেষণায় দেখা যায়, কিডনির ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যারা নিভোলুম্যাবের সঙ্গে আরো একটি ওষুধ গ্রহণ করেছেন তাদের টিউমারও ধীরে ধীরে সঙ্কুচিত বা ছোট হয়ে গেছে।
 
চিকিত্সকরা বলছেন, এই ইমিউনিথেরাপি ড্রাগ গ্রহণের ফলে রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এটি শরীরের ভেতরে লুকিয়ে থাকা ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে। মস্তিষ্ক ও গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। সাড়ে তিনশো রোগীর ওপর  এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে। দেখা গেছে, যেসব রোগীকে ইমিউনিথেরাপি ড্রাগ নিভোলুম্যাব দিয়ে চিকিত্সা দেওয়া হয়েছে তাদের ৩৬ ভাগ এক বছর পরেও বেঁচে ছিলেন। কিন্তু কেমোথেরাপি নেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ১৭ শতাংশ।
 
যেসব রোগীদের ওপর এই গবেষণাটি চালানো হয়েছে তারা ছয় মাসেরও কম সময় বেঁচে ছিলেন। weævbxiv বলছেন, এই ইমিউনিথেরাপি চিকিত্সার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও তুলনামূলকভাবে কম।
 
জানা যায়, বাংলাদেশে নাক, কান, গলা এবং মস্তিষ্কে ক্যান্সারের চিত্র ভয়াবহ। বাংলাদেশে নাক, কান ও গলায় আক্রান্ত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ৫ লাখ। এছাড়া প্রতিবছর নতুন ৬৫ হাজার মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তদের ৪২-৫০ ভাগ ৫ বছরের মধ্যে মারা যায়।
 
জানা যায়, দেশের ৮০ ভাগ ক্যান্সার রোগী চিকিত্সার বাইরে থাকেন। রোগ নির্ণয় হয় দেরিতে। অনেকে ঠিক সময়ে চিকিত্সা করাতে আসেন না। মূলত পরিবেশগত কারণে মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়। রেডিয়েশন, ভেজাল ও বিষাক্ত খাবার গ্রহণ, পান, জর্দা, গুল এবং ধূমপানের কারণে নাক, কান ও গলায় ক্যান্সার হয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আমাদের দেশের পরিসংখ্যানের মিল রয়েছে। নাক, কান ও গলা ইনস্টিটিউটের হেড, নেক ক্যান্সার বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আবু হানিফ বলেন, দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা করা গেলে রোগী সুস্থ হয়ে যায়।
 
নিউরো সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম বলেন, মস্তিষ্কে টিউমার আক্রান্ত অনেক রোগী রয়েছে। তবে রোগী চিকিত্সকের কাছে আসে দেরি করে। প্রথমে আমরা অপারেশন করি, পরে কেমোথেরাপি দেই। আক্রান্ত হওয়ার পর দ্রুত রোগ নির্ণয় ও দ্রুত অপারেশন করা গেলে রোগীর সেরে উঠার সম্ভাবনা বেশি। অনেক টিউমার অপারেশন না করে নাক দিয়ে কিংবা ব্রেনের পিছর দিয়ে বের করা হয়। এ অপারেশনে সফলতার হার বেশি। তবে দেশের সব হাসপাতালে এই রোগের অপারেশন হয় না। এছাড়া দেশে নিউরো সার্জনদের সংখ্যাও অনেক কম বলে তিনি জানান।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top