দুদকের সরকারি কর্মচারী গ্রেফতারে অনুমতি লাগবে না

Nuruzzaman Khan
সেবা ডেস্ক:  সরকারি কর্মচারী আইন চূড়ান্ত আজ উঠবে মন্ত্রিসভায়
চাকরি থেকে যে কোনো সময় ইস্তফা দেওয়া যাবে * সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে ১০ শতাংশের
কোটা পুনর্বহাল 
কারো অনুমতি ছাড়াই যে কোন সরকারি কর্মচারীকে (প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী বলতে কর্মকর্তাদেরও বোঝায়) গ্রেপ্তার করতে পারবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০০৪ সালের দুদক আইনের এ সুযোগ তারা ব্যবহার করতে পারবে। তবে দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অভিযোগের জন্য দায়ের করা ফৌজদারী মামলায় আদালত কর্তৃক অভিযোগ গৃহীত হওয়ার আগে কোন কর্মচারীকে গ্রেফতার প্রশ্নে সরকারের পূর্বানুমোদন লাগবে। এ ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে সচিব পদের ক্ষেত্রে মোট সংখ্যার দশ শতাংশের বেশি নিয়োগ করা যাবে না। তবে নিয়মিত নিয়োগযোগ্য কর্মচারীরা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন না।
সাত বছর ধরে প্রক্রিয়া শেষে ওইসব বিধান রেখে ‘সরকারি কর্মচারী আইন-২০১৬’ চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভায় বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে আইনটি উত্থাপনের জন্য নির্ধারিত রাখা হয়েছে। প্রস্তাবিত এই আইনে চাকরির ২৫ বছর পূর্তিতে বাধ্যতামূলক এবং কোনো কর্মচারীর স্বেচ্ছায় অবসরের বিধানের সঙ্গে যে কোনো সময়ে একজন কর্মচারী কর্মত্যাগ করতে পারবেন মর্মে নতুন বিধান রাখা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে এ সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের নিয়োগ ও কর্মের শর্তাবলী নিয়ন্ত্রনের জন্য সংসদে আইন করার বিধান রয়েছে। ১৯৭২ সালে সংবিধানে এই বিধান সংযোজন করা হলেও এ পর্যন্ত তা করা হয়নি। উল্টো যখন যে সরকার ক্ষমতায় থেকেছে তারা তাদের মতো স্বেচ্ছাধীন বিধি তৈরি করে কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে এ নিয়ন্ত্রণ অনেকটা খোলাখুলিভাবেই চলেছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় বারের মতো সরকার গঠনের পর সরকারি কর্মচারীদের জন্য আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। ২০১২ সালে একটি খসড়াও তৈরি করা হয়।
প্রস্তাবিত আইনে এক বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত কোনো কর্মচারীকে তাত্ক্ষণিক বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ফৌজদারি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে আটক থাকলেও সাময়িক বরখাস্তের বিধান রাখা হয়েছে।
উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মেধা যাচাই করে কর্মচারীদের নিয়োগ-বদলি ও পদোন্নতি হবে। প্রস্তাবিত আইনের ৮(২) ধারায় বলা হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের বিভিন্ন কর্ম ও কর্মবিভাগে নিয়োগের পদ্ধতি এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিয়োগ পরীক্ষার ধরন, বিষয়, নম্বর বিভাজন ও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবার ন্যূনতম মান বা নম্বর বিধি দ্বারা নির্ধারন করতে হবে। ন্যূনতম নম্বর প্রাপ্তিতে ব্যর্থ কাউকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা যাবে না। প্রয়োজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকমিশনের সুপারিশ গ্রহনের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। নিয়োগ কমিটি বা কর্তৃপক্ষের সুপারিশ ছাড়া সরাসরি কোনো নিয়োগ করা যাবে না।
প্রস্তাবিত আইনের ৯ (১) ধারায় বলা হচ্ছে, কোনো স্থায়ী সরকারি কর্মচারীকে মেধা, দক্ষতা, জ্যেষ্ঠতা, প্রশিক্ষণ ও সন্তোষজনক চাকরি বিবেচনাক্রমে পদোন্নতি দেয়া হবে। পদোন্নতির জন্য গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাড়া কাউকে পদোন্নতির জন্য সুপারিশ করা যাবে না। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পিএসসি, বোর্ড বা কর্তৃপক্ষের সুপারিশ ব্যতীত কাউকে পদোন্নতি দেয়া যাবে না।
শিক্ষানবিস ও স্থায়ীকরণ সম্পর্কে প্রস্তাবিত আইনের ১০ (১) ক ধারায় বলা হয়েছে, সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছর, পদোন্নতির ক্ষেত্রে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানের তারিখ থেকে এক বছর। তবে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কারণ লিপিবদ্ধ করে শিক্ষানবিসের মেয়াদ এরূপভাবে বৃদ্ধি করতে পারবেন যেনো তা দুই বছরের অধিক না হয়। শিক্ষানবিসের চাকরিকাল সন্তোষজনক না হলে শিক্ষানবিসের চাকরির অবসান ঘটানো যাবে এবং পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাকে যে পদ থেকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল সেই পদে ফিরিয়ে নেয়ার (পদাবনতি) বিধান করা হয়েছে।
বৈদেশিক বা বেসরকারি চাকরি গ্রহনের বিষয়ে একজন সরকারি কর্মচারীকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের বেশি সময়ের জন্য অনুমোদন দেয়া যাবে না মর্মে বিধান রাখা হয়েছে।
জ্যেষ্ঠতা নির্ধারনের ক্ষেত্রে অবশ্য কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত আইনের ১৬ (২) ধারায় বলা হয়েছে, কোনো পদের ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারনের কোনো বিধান না থাকলে কর্মকর্তাদের পারস্পরিক জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ সম্পর্কিত বলবত্ কোনো আইন দ্বারা সম্ভব না হলে সরকার যেরূপ উপযুক্ত মনে করে সেভাবে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারন হবে।
চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ: রাষ্ট্রপতি অপরিহার্য মনে করলে সচিব পদে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে মোট পদের দশ শতাংশ পদে নিয়মিতভাবে নিয়োগযোগ্য কর্মচারীর বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তিকে প্রেষণে বা চুক্তিতে নিয়োগ দিতে পারবেন। এ ছাড়াও অন্যান্য পদে অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারীকে রাষ্ট্রপতি চুক্তিতে নিয়োগ দিতে পারবেন।
প্রস্তাবিত আইনের সংযুক্ত নতুন বিধান সংবলিত ৫৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো সরকারি কর্মচারী চাকরিকালীন যে কোনো সময়ে চাকরি থেকে ইস্তফা দেয়ার আবেদন করতে পারবেন, যা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শর্তে নিষ্পত্তি হবে। বর্তমানে এই বিধান নেই।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top