সেবা ডেস্ক: দেশে নতুন করে বিনিয়োগ হচ্ছে না। ফলে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও বাড়ছে না। উল্টো কমে যাচ্ছে। তবে বিলাসজাত পণ্যের আমদানি বেড়ে যাচ্ছে। অবশ্য গত কয়েক মাসে বিদ্যুত্ খাতের যন্ত্রপাতি ও পদ্মা সেতুর যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। এসব কারণে সার্বিক আমদানি ব্যয়ও বাড়ছে। আর তাতে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারে। গত বছরে একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। অর্থাত্ এ সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ১২ দশমিক ৫২ শতাংশ বেড়েছে।
সাধারণত, আমদানি ব্যয়ের চেয়ে রফতানি আয় কম হলে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যায়। অন্যদিকে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ার পাশাপাশি চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) উদ্বৃত্তও কমে আসছে। অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর এ দুই মাসে চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত রয়েছে মাত্র ৭০ কোটি ডলার। সেখানে গেল অর্থবছরের একই সময়ে চলতি হিসাবের ভারসাম্যে উদ্বৃত্তের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি ডলার। সাধারণত চলতি হিসাবের মাধ্যমে দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝানো হয়। আমদানি-রফতানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এখানে উদ্বৃত্ত হলে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে এক হাজার ৫৪ কোটি ১০ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে রফতানি থেকে আয় হয়েছিল ৭৯০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি বাবদ বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে এক হাজার ৩৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা গেল অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাত দশমিক ৯৩ শতাংশ বেশি। গেল অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আমদানি ব্যয় হয় এক হাজার ২৩৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৭৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার। তবে গেল অর্থবছরের পুরো সময়ে পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৪৭ কোটি ৩১ লাখ ডলার। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৬৪৫ কোটি ডলার। আর ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ছিল ৬৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এদিকে পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা বাণিজ্যে ঘাটতিও বাড়ছে। সেবা খাতে ঘাটতি রয়েছে ১০৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে সেবা খাতের ঘাটতি ছিল ৮৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ও সেবা খাতের ঘাটতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ভারসাম্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে চলতি হিসাবের ঘাটতি হয়েছে এক কোটি ৬০ লাখ ডলার। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১২৪ কোটি ১০ ডলার।
চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১৯ কোটি ডলার যা গত অর্থবছরের একই সময়ে চেয়ে ১৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। রেমিট্যান্স কমলেও সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) ও পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী আলোচ্য চার মাসে ৫৭ কোটি ৭০ লাখ ডলারে নিট এফডিআই এসেছে। যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশের বেশি। আগের বছর বিনিয়োগ ছিল ৫২ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময় পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ এসেছে ৯ কোটি ১০ লাখ ডলার। যা আগের বছর একই সময়ে এক কোটি ৭০ লাখ ডলার তুলে নিয়েছিল বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।