সেবা ডেস্ক: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পও মনে করেন যে ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধে যাওয়াটা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট ভুল। সেই যুদ্ধের ফলে ইরাকসহ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে সাম্প্রদায়িক বিচ্ছিন্নতা ছড়িয়ে পড়েছে, সৃষ্টি হয়েছে ইসলামিক স্টেটের মত নৃশংস জঙ্গিগোষ্ঠি।
সেই সময় ক্ষমতাচ্যুত ইরাকের স্বৈরশাসক সাদ্দাম হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সিআইএ কর্মকর্তা বলেছেন, সাদ্দামের হাতে ইরাকের নিয়ন্ত্রণ থাকলে এই অস্থিরতা তৈরি হত না। সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সিআইএ কর্মকর্তা জন নিক্সন তার লেখা এক বইয়ে এমন দাবি করেছেন তিনি।
টাইমস ম্যাগাজিনে ডিব্রিফিং দ্য প্রেসিডেন্ট: দ্য ইন্টারোগেশন অব সাদ্দাম হুসেন নামের বইটির সারসংক্ষেপে বলা হয়, আমি যখন সাদ্দামকে জিজ্ঞাসাবাদ করি তখন তিনি বলেছিলেন, “তোমরা ব্যর্থ হবে। তোমরা বুঝতে পারবে ইরাককে পরিচালনা করা সহজ নয়।” তখন তাকে বলি, আপনার এই ভাবনার কারণ জানতে আগ্রহী আমি। তিনি বলেন, “তোমরা ইরাকে ব্যর্থ হবে কারণ তোমরা এখানের ভাষা জানো না, ইতিহাস জানো না এবং তোমরা আরব জাতির মনও বুঝো না।”
নিক্সন মনে করেন, সাদ্দামের কথায় যুক্তি ছিল। ইরাকের মতো বহু জাতিগোষ্ঠির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ, সুন্নি মৌলবাদ এবং ইরান সমর্থিত শিয়াদের নিয়ন্ত্রণে রাখা সাদ্দামের মতো কঠিনহৃদয় শাসকের পক্ষেই সম্ভব।
তার বইয়ে তিনি লিখেছেন, সাদ্দামের নেতৃত্বের ধরণ এবং নৃশংসতার প্রতি তার আসক্তি তার শাসনামলের সবচেয়ে বড় ত্রুটিগুলোর একটি। কিন্তু তার ক্ষমতা ঝুঁকির মধ্যে পড়লে নির্মমভাবে সেটা দমন করতে পিছু হটতেন না, এবং কখনো গণ অসন্তোষের কারণে তার সরকারের পতন হতো না। একই ভাবে তার শাসনে আইএস এর মতো জঙ্গি গোষ্ঠি সাদ্দামের দমন-পীড়ন শাসনে সাফল্য অর্জন করতে পারতো না যেটি শিয়া নেতৃত্বাধীন বাগদাদ সরকারের অধীনে সম্ভব হয়েছে।
সাদ্দামের অনেক দোষ সত্ত্বেও তার প্রশংসা করার মতো গুণ ছিল তিনি বহুভাগে বিভক্ত ইরাককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছিলেন। নিক্সন তার বইয়ে বলেন, যদিও আমার মতে সাদ্দাম সম্পূর্ণ অপছন্দনীয়। তবে তার প্রতি আমার একটা সম্মানের জায়গাও আছে যে তিনি ইরাকের মতো একটা রাষ্ট্রকে এত দীর্ঘদিন একত্রে রেখে শাসন করতে পেরেছিলেন। সাদ্দাম আমাকে একবার বলেছিলেন, “আমার আগে শুধু কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও তর্কাতর্কি হতো। আমি এসব কিছুর অবসান ঘটিয়ে ছিলাম।” ওয়াশিংটন পোস্ট।
