সেবা ডেস্ক:
গল্পটা ২০১৬ সালের। সেই রাসেলকে নিয়ে। সেই রাসেল বলতে বরিশাল মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া রাসেল মাহমুদের কথা। অর্থের অভাবে যখন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না তখনই শুরু হয় গল্পের ।
অবশেষে বুধবার বিকালে গল্পের প্রথম পর্ব শেষ হয়েছে সফল ভাবেই। দ্বিতীয় গল্পটা শুরম্ন হবে রাসেল মাহমুদের কর্মজীবনের প্রবেশের পর।
তবে সবাইকে চমকে দিয়ে গল্পের কাহিনীকে প্রসিদ্ধ করেছেন জামালপুর জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান ও বকশীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর তালুকদার।
আপাতদৃষ্টিতে তারা চমকে দিলেও ঘটনার মূলে ছিল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু হাসান সিদ্দিক।
যেভাবে চমক দিলেন ঃ বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে বাসস্ট্যান্ড মোড় ফাঁকা ।
প্রতিদিনের চেয়ে একটু আলাদা পরিবেশ মনে হচ্ছে। বকশীগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান বাবুুল দাড়িয়ে আছেন মোড়েই।
যানজটের বাসস্ট্যান্ড আজ এতো ফাঁকা কেন জিজ্ঞাসা করতেই উত্তর দিলেন ডিসি স্যার আসছেন এখানে। উদ্বোধন করবেন একটি মনিহারী দোকান। বাহ্ , এটাতো বেশ চমকের ব্যাপার ।
উৎসুক মানুষের মত জেনে নিলাম কার দোকান উদ্বোধন করা হবে। কাউন্সিলর বাবুল বললেন রাসেলের বাবার মনিহারী দোকান উদ্বোধন করা হবে ।
আস্তে আস্তে জানা হলো মেডিকেলের সেই ছাত্র রাসেল মাহমুদের বাবার দোকান এটি। দোকানের ভেতরে মিটি মিটি হাসছেন রাসেলের বাবা মোতালেব মিয়া।
এক পর্যায়ে বলেই দিলেন এটা বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু হাসান সিদ্দিক স্যারের অবদান।
গত বছর যখন রাসেল মাহমুদ অর্থের অভাবে কলেজে ভর্তি হতে পারছিলেন না তখন বকশীগঞ্জ ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ও বকশীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুর মোহাম্মদের সহায়তায় বরিশাল মেডিকলে কলেজে ভর্তির সুযোগ পায় সে।
শুধুমাত্র একটি প্রদীপকে জ্বালিয়ে রাখার জন্য মানুষের কাছে ধরনাও ধরেছেন এই কর্মকর্তা। নুর মোহাম্মদ সাহেবের ৫ লড়্গ টাকা আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার পর রাসেলের নামে বকশীগঞ্জ স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকে একটি একাউন্টও খুলে দেন ইউএনও আবু হাসান সিদ্দিক।
৩ লক্ষ টাকা ব্যাংকে জমা রেখে বাকি ২ লড়্গ টাকা দিয়ে রাসেলের বাবার জন্য একটি দোকান ঘর ভাড়া নেয়া হয়।বকশীগঞ্জ ইউএনও’র মানসিকতা নিয়ে তখনো প্রশ্ন ছিল।
আসলে তিনি কি করতে চাইছেন। মূলত তিনি রাসেলের পড়াশুনার খরচ চালাতে এবং তার বাবা মোতালেবের পেশা বদল করতে এই উদ্যোগ নেন বকশীগঞ্জ ইউএনও আবু হাসান সিদ্দিক।
আর তার পরিবারকে ও তার বাবাকে উৎসাহিত করতে ৪০ কিলোমিটার দূর থেকে বকশীগঞ্জ এসে দোকানটি উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান।
উদ্বোধনের সময় মানুষ রাসেলের বাবার দোকানে ভিড় জমাচ্ছিলেন তখন সবাই চমকে দিল উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদার। তিনি দোকানের সব পণ্য কিনে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে।
তিনি বাংলাদেশ জনকল্যাণ সংগঠনের চেয়ারম্যান হিসেবে নগদ এক লক্ষ ২২ হাজার টাকার পণ্য গুলো কিনে এসব অসহায় , গরিব মনুষের মাঝে বিতরণ করার ঘোষণা দেন।
উক্ত উদ্বোধনের সময় এছাড়াও বকশীগঞ্জ ইউএনও আবু হাসান সিদ্দিক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুহাম্মদ সাদিকুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য জয়নাল আবেদিন,
উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তাহমিনা আক্তার পাখি, উপজেলা শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাাদক আবদুল হামিদ, রাসেলের বাবা মোতালেব মিয়া,
উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জিএম ফাতিউল হাফিজ বাবু, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই দোকানের উদ্বোধন হলে সকল অতিথির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রাসেলের বাবা মোতালেব মিয়া।
এসময় জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুর রউফ তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসান সিদ্দিক রাসেল মাহমুদের শিক্ষাজীবন সুন্দর ও সফল হোক এই প্রত্যাশা করেন।