অভিভূত হলাম! দারুল কারীম মাদরাসায় একদিন

S M Ashraful Azom

অভিভূত হলাম! দারুল কারীম মাদরাসায় একদিন

I-am-overwhelmed-One-day-in-Darail-Karim-Madrasah
দারুল কারীম মাদরাসায় অধ্যয়ণরত শিক্ষার্থীদের একাংশ
"তোমাদের মধ্যে তিনিই উত্তম শিক্ষক যিনি তোমাদের কোরান শেখান"- আল কোরআন
৬ মার্চ শুক্রবার বিকেল ৩টা সম্ভবত। কোম্পানীর জরুরী প্রোগ্রামে ছিলাম বাঁশখালী পৌরসভাস্থ জলদী বাস কাউন্টারের সামনে সৌদিয়া মার্কেটে। মার্কেটের একদম উপরের তলায় আমাদের ডেসটিনি ২০০০ লি. ও দৈনিক ডেসটিনির অফিস। আমাদের নীচের তলায় একটি মাদরাসা আছে।

আছরের আজান হলো। নামায পড়তে যাচ্ছি সবাই। কিন্তু ঐ মাদরাসায় নামাযের ব্যবস্থা আছে বিধায় উপস্থিত ১৫-২০ জনের একদল ওজু করে নামাযে শামিল হলাম। পরক্ষণে আবার প্রোগ্রামে উপস্থিত।


মাগরিবের আযান হলো। মাথায় পাগড়ি বাঁধা নীচের থেকে ছোট্ট একটা ছেলে অফিসে এসে দরজায় দাড়িয়ে বলল আযান দিছে, আপনারা আসুন নামায পড়ি। কিন্তু আছরের সময় ডাকেনি, ডাকছে মাগরিবের সময়। কারন তারা দেখলো প্রোগ্রামের লোক গুলো আজো আছে হয়ত মাগরিবের নামায পড়বে তাই দিত্বীয়বার তারা নামাযে শামীল হতে ডাকলো। সবাই মাগরিবের নামাযে জামায়াতে শামীল হল। আমি একটু দেরিতে প্রবেশ করছিলাম।

তাড়াহুড়া করে ওযু করলাম। এক রাকাত শেষ! মাদরাসাটির সব ছাত্র ও প্রোগ্রামের লোক গুলো নামাযে খাড়া হল। একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে ততক্ষণে। আমি তাকে খেয়াল করিনি। কিন্তু নামাযে দাঁড়িয়ে হাত উঠাবো মাত্র, তার আগেই ছোট্ট ছেলেটি সামনে এগিয়ে এসে নতুন একটা তোয়েলে হাতে নিয়ে মোলায়েম ভাষায় বলল- আপনার হাত ও মুখ মুছে ফেলুন তোয়েলেটা দিয়ে। অবাক হলাম! কাজও সেরে ফেলেছি তাড়াতাড়ি। 


নামাযের নিয়্যৎ করলাম আর পাশে সেই ছেলেটিও সাথে নামায আদায় করলো। অভিভূত হলাম ছোট্ট ছেলেটির ব্যবহার ও ভদ্রতামূলক আচরণ দেখে। কে দিলো তারে এ শিক্ষা? কে শেখালো বড়দের সম্মান দিতে? কে শেখালো আজান দিলে নামাযে আহ্বান করার কথা? কে শেখালো বাহির হওয়ার আগে পায়ের জুতো গুলো স্বাভাবিকভাবে রাখার মতো ভদ্রতা? অবাক হলাম! সুন্দর এই দৃশ্যটা দেখে। মন থেকে ছেলেটাকে আদর করলাম। একদম মনভরা ভালোবাসা চলে এলো তার প্রতি। ওই প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রদের আচরণে বিমোহিত হলাম। কিন্তু তারা মাদরাসায় পড়ে! ধূর মাদরাসায় পড়ে! এরা কি আর আধুনিক? এদের নিয়ে এতো বলার কি আছে? হ্যা আছে। এরাই সবসময় অাধুনিক। অতচ মাদরাসা শিক্ষাকে, মাদরাসায় পড়ানোকে বলি সেকেলে। সুযোগ পেলে মাদরাসা শিক্ষিতদেরকে জঙ্গি বলতেও লজ্জাবোধ করেনা আমাদের সুশীলদের জিভে। অথচ তাদের আদর্শ মানুষের হৃদয়ে মানবতার পাপড়ি গজায়।

শিব্বির আহমেদ রানা ও মাহফুজুর রহমান জিসান
মাদরাসা ছাত্র মাহফুজুর রহমান জিসানের সাথে লেখক
আজ শুক্রবার ৬ মার্চ ছোট্ট ছেলেটির সাথে কথা বললাম নাম: মাহাফুজ রহমান জিসান, পিতা- মনছুর, মাতা- রায়হানা জান্নাত লাকী, বাড়ী- জলদী পৌরসভা, গ্রীণ পার্কের পাশেই নাকি তার বাড়ী। মাদরাসার হেফজ খানায় নাজেরায় পড়ে। চমৎকার তার আচরণ। কিছুক্ষণ তার সাথে মিশে গেলাম। পরে দেখি তাদের হুজুর সহ ছাত্ররা কোরান পড়া শুরু করে দিল। সেও। বিদায় নিলাম ততক্ষণে। সাংবাদিক প্রিয় ভাই শফকত হোসেন চাটগামী এই মাদরাসার প্রতিষ্টাতা। দারুল কারীম মাদরাসা। জলদী পৌরসভায় কোরানের হাফেজ গড়ার নিরন্তর প্রয়াস চলছে। এখানে এতিমের নামে চাঁদা তোলা হয়না। ছাত্রদেরকেও ভিক্ষার ঝুলি দিয়ে মাঠে পাঠায়না। তবে চলছে সার্বিক সহযোগীতায়। জায়গার যথেষ্ট সংকুলন হচ্ছেনা। প্রথমদিকে ছাত্র সংখ্যা কম হলেও এখন বেড়েছে অনেক। শিক্ষার গুণগত মান নিয়ে অনেক অভিবাবকের কাছে যথেষ্ঠ শুনেছি। তবে আজকে পরিচয় পেলাম- ফলই গাছের পরিচয়।

আমাদের চেতনার ফেরিওয়ালা মাদরাসা শিক্ষাকে বলে সেকেলে! মাদরাসায় পড়লে নাকি তারা হয় জঙ্গি! তারা নাকি সব কিছুতে নাশকতার মূল হোতা! অতচ এসব সুশীলদের শেখানো মিথ্যা বুলি মাত্র।


তারা পড়েনা সকাল বেলায়- "হাট্টিমা টিম টিম তারা মাঠে পাড়ে ডিম, তাদের আছে দুটো খাড়া শিং.... তারা হাট্টিমা টিম টিম।।" রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে তারা দেখেনা টিভি সিরিয়ালে ব্যাঙ্গাত্মক কার্টুন। অতচ তারা সেকেলে। হা সেকেলেই ত! তারা পড়েনা নাস্তিক ফ্রোয়েবলের মনগড়া কেজি'তে।
যেখানে সকালে কোরআন পড়ার সময়টুকু কেড়ে নেয়। সুযোগ থাকেনা মক্তবে যেতে। কোরানের শিক্ষাটা থাকে অপূর্ণ। তবে শিষ্ঠাচার, ভদ্রতা, আদব-কায়দার লেশ মাত্র যাদের নাই, যাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে শিক্ষকদের পেটায় তারা নাকি আবার অাধুনিক। আমি ঐ আধুনিকে নাই। আমি সেকেলে। অতচ আমি স্কুলে পড়েছি। তারপরও আমি সেকেলে। কোরানের শিক্ষা যেখানে অনুপস্থিত সেখানে সব শিক্ষাই অর্থহীন। আমি সত্যিই দারুল কারীমের ছাত্রদের আদর্শের কাছে হেরেগেছি।


হাজারো দারুল কারীমের সূত্রপাত হোক। কোরানের শিক্ষা সমুন্নত হোক। আমি এদের মতো, এদের সাথে। যদি বলেন, ওরা সেকেলে, ওরা জঙ্গি- তাহলে আজ থেকে আমিও জঙ্গি।
আজ শুক্রবার মাদরাসা পরিচালকের মতে আজকে বেশ সংখ্যক ছাত্র থাকার কথা নয়। কিন্তু ওই রকম পরিবেশে গড়ে উঠা ছাত্রদের আচরণ সরাসরি প্রতক্ষ্য না করলে বুঝতে পারতাম না দারুল কারীমের শিক্ষক ছাত্রের পড়ালেখার এতো চমৎকার পরিবেশ আছে। কোরানের হাফেজদের মন থেকে ভালোবাসি। তাদের জন্য সবসময় শুভকামনা। দারুল কারীমের মতো ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষাপ্রতিষ্টানের সূত্রপাত হোক আরো। এতো সমন্বয়সিদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা আজ আমাদের নাই। নীতি নৈতিকতার বলি হচ্ছে দিন দিন। তাই লাঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষক, লাঞ্চিত হচ্ছে মানবতা। কোরানের পাখি খ্যাত হাফেজদের জন্য শুভ কামনা রইলো। দারুল কারীম মাদরাসার উত্তোরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি। "পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন"-[আল কোরান] অতচ কি পড়াবেন? কোথায় পড়াবেন? কোথায় প্রভুর নামে পড়ানো হয়? ভাবুন!

লেখক
শিব্বির আহমেদ রানা
বাঁশখালী, চট্টগ্রাম


#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top