আ’লীগ সরকারের আমলেই ইসলামপুরে ৬ বীরাঙ্গঁনার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি

S M Ashraful Azom
0
 আ’লীগ সরকারের আমলেই ইসলামপুরে ৬ বীরাঙ্গঁনার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি
জামালপুর-ইসলামপুর থেকে উপজেলা সংবাদদাতা: মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাবার বাহিনীর সংবাদ এবং খোজ খবর মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট পৌছে দেওয়ার সময় রাজাকার আলবদরদের সহায়তা ধৃত হয়ে পাক বাহিনীদের দ্বারা নির্যাতিত জামালপুর ইসলামপুরের ছয় বীরাঙ্গঁনাকে মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রনালয় ১৫জুন জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইনে ৪৪তম সভার সিদ্ধান্তক্রমে গেজেট প্রকাশিত হয়। এতে ইসলামপুর উপজেলার চরপুটিমারী ইউনিয়নের চিনারচর গ্রামের মোঃ ভোলা শেখের স্ত্রী মোছাঃ রংমালা খাতুন,ওই গ্রামের মাহফুজুল হকের স্ত্রী সামছুন্নাহার বেগম এবং কুলকান্দি ইউনিয়নের কুলকান্দি গ্রামের জসিজলের স্ত্রী রাবেয়া বেগম,মৃত আঃ সামাদ খানের স্ত্রী ছকিনা বেগম ও আঃ রহিমের মেয়ে শেফালী বেগম ও পলবান্ধা ইউনিয়নের সিরাজাবাদ গ্রামের ছকিনা বেগম স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা (বীরাঙ্গঁনা)দের মর্যাদা দেওয়ার খবরে ওই এলাকা গুলোতে দেখাগেছে তৃপ্তির কান্না । এলাকাবাসী বলেন,ইতিহাস কথা বলে। বাঙ্গালী জাতির ইতিহাস কালের স্বাক্ষী হয়েই রবে জনম জনম ধরে। ৭১সনে পাক হানাদার বাহীনির বর্বরচিত হামলা,মা বোনের ইজ্জত লুটের মধ্যে দিয়েই স্বাধীনতা। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন দেশটি পাওয়া। আজ আমরা স্বাধীন ভাবে ঘুরতে চলতে পারছি কাদের জন্য। যাদের ইজ্জতের বিনিময়ে পেয়েছি স্বাধীন দেশ অথচ তারা দীর্ঘ ৪৬ বছর কতই না কষ্টে দিন কেটেছে। তারা শুধু বীরাঙ্গঁনাই নয় বাঙ্গালী জাতির গর্বিত সন্তান আমাদের অহংকার।

কুলকান্দি ইউনিয়নে তিনজন বীরাঙ্গঁনা খোজে গেলে নদী ভাঙ্গার কারনে তাদের পার্থশী ইউনিয়নে শশারিয়া খান পাড়ায় তাদের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে তারা বয়সের ভারে নুজু হয়ে পড়েছে। সমাজের বুকে অনেক তিরস্কার,জ্বালা যন্ত্রনা সহ্য করে আজো বেঁচে আছে। অধ্যাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছে এতোটি বছর।

এ সময় ওই এলাকার শতাধিক নারী পুরুষ সেই অতীতের নির্যাতন নিপীরন কথা উল্লেখ করে বলেন,আমাদের এই এলাকা অনেক নারী, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে। পুরুষদের গুলি করে মেরে ফেলা হয়েছে।

ইউপি সদস্য তাহের খান জানান, আমাদের এখানে শহীদ স¥তি স্কুলে পাক হানাদার বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। এসব এলাকার রাজাকার আলবদরদের সহযোগীতায় বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে নারীদের নির্যাতন ও পুরুষদের স্কুলে নিয়ে নির্বিচারে গুলি করে মেরে ফেলেছে। অনেকেই আজো কোন স্বীকৃতি পায়নি। তাদের স্বীকৃতির দাবী জানাই।

বীরাঙ্গনা শেফালী বেগম বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার বিয়ের কথা চলছিল। এ সময় বদরদের সহযোগীতায় হঠাৎ বাড়ীতে পাকবাহীনিরা এসে আমার বাবা (নুরু খান)কে বেধেঁ নিয়ে যায়। এ সময় অন্যরা আমাকে আমার বাড়িতেই শারিরিক নির্যাতন করে।

একই অবস্থা বীরাঙ্গঁনা রাবেয়ার। তিনি বলেন,আমার বাড়িতে আমাকে আটকিয়ে রেখে দিনের পর দিনে আলবদর,রাজাকাররা আমার প্রতি অমানুষিক নির্যাতন করেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে আমার বিয়ে হয়। অনেক যন্ত্রনা নিয়ে আজো বেচেঁ আছি।

সুত্র জানায়,আঃ সামাদ খানের স্ত্রী বীরাঙ্গঁনা ছখিনা বেগম, দুুমুঠো খাবারের জন্য টাঙ্গাইল জেলায় অন্যের বাসায় অধ্যবদি কাজ করছেন। যুদ্ধে কুলকান্দি শহীদ সৃতি স্কুলে একদিনে এলাকার ১১জনকে গুলি করে মেরে ফেলে। তার মধ্য স্বামী সামাদ খান একজন। যেদিন সামাদ খানকে হানাদার বাহীনিরা ধরে নিয়ে যান ওই দিনে ছকিনা বেগম ৪০দিন হয় সন্তান প্রসব করেছেন। এ অবস্থাতেও তাকে নির্যাতন থেকে রেহায় দেয়নি রাজাকার আলসামসরা। একদিকে নির্যাতিত হচ্ছে অন্যদিকে স্বামীকে মেরে ফেলেছে। এমনি ভাবে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন সামাদ খানের বোন। তিনি আরো বলেন সামাদ খানকে আজো কোন শহীদি মর্যাদা দেওয়া হয়নি।

চিনারচর গ্রামের সামছুন্নাহার বলেন,যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগীতা করতেন। একদিন মুক্তিযোদ্ধাদের খবর দেওয়ার সময় বাঙ্গালীরা আমাকে দেখিয়ে দেয়। এ সময় আমাকে ঝগড়ারচর ক্যাম্পে নিয়ে আটকিয়ে রাখে এবং অমানুষিক নির্যাতন চালায়। যখন আমি মৃত্যু সয্যায় ঠিক সেই সময় আমাকে ছেড়ে দেয়। তার কয়েকদিন পরেই দেশ স্বাধীন হয়।

ওই চিনারচর গ্রামের রংমালা খাতুন বলেন,যুদ্ধের কিছুদিন আগে আমার বিয়ে হয়। নববধু ছিলেন তিনি। পাক বাহীনিরা আমাকে ধরে নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জ ক্যাম্পে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। এক সময় কৌশলে আমি পালিয়ে আসি।

সরেজমিনে তাদের সাথে কথা বলে আরো জানায়ায়,বুকভরা কষ্ট,হাহাকার,যন্ত্রনা,তিরস্কার,গঞ্জনা,অবহেলা,অবজ্ঞা সয়ে তারা আজো বেঁচে আছে। আজকে সব অবসান। আজ তাদের জন্ম সার্থক। তারা আজ বাঙ্গালীর গর্বিত সন্তান।

চরপুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান সুরুজ মাষ্টার জানান, সরকার তাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সকল ব্যবস্থা যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন হয় । শেষ বয়সে যাতে একটু শান্তিতে থাকতে পারে।

পলবান্ধা ইউনিয়নের সখিনা বেগম জানান, যুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী দারা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। এলাকার রাজাকাররা আমাদের নির্যাতনের সহায়তা করেছে। অথচ এখনো তাদের বিচার হয়নি।

ইসলামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মানিকুল ইসলাম জানান,বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধের সহায়ক সরকার। পাচঁ বীরাঙ্গনাকে স্বীকৃতি তার প্রমান। তাদের ত্যাগ বৃথা যায়নি। শেষ বয়সে তারা যাতে ভালভাবে চলতে পারে সে দিকে দৃষ্টি রেখে দ্রুত সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা দরকার। স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব ফরিদুল হক খান দুলাল জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধের পক্ষের সরকার। যাদের আত্বত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন দেশ অর্জিত হয়েছে। ছয় বীরাঙ্গনাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রমান হলো তাদের ত্যাগ বৃথা যায়নি। সারা বাংলাদেশের ১৫জনের মধ্যে ইসলামপুরে ৬জনকে স্বীকৃতি দেওয়ায় আমি গর্বিত। তারা আমাদের গর্বিত জননী। সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ইসলামপুরবাসীর পক্ষ থেকে দ্রুত তাদের সন্মাননা জানান হয়েছে।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top