মধুপুর ও ধনবাড়ীর বিলগুলো অতিথি পাখিতে মুখরিত

S M Ashraful Azom
0
মধুপুর ও ধনবাড়ীর বিলগুলো অতিথি পাখিতে মুখরিত
আনছার আলী, মধুপুর: প্রতিবছর শীতকাল এলেই জলাশয়, বিল, হাওড়, পুকুর ভরে যায় নানা রংবেরঙের নাম না জানা পাখিতে। আদর করে আমরা সেগুলোকে বলি অতিথি পাখি। নাম অতিথি হলেও এই পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁকে আমাদের দেশে হাজির হয় নিজেদের জীবন বাঁচাতে।

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এসব পাখিদের মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের একটি নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শুধু ইউরোপ আর এশিয়ায় আছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির পাখি। কিছু কিছু পাখি তাই প্রতিবছর ২২ হাজার মাইল পথ অনায়াসে পাড়ি দিয়ে চলে যায় দূরদেশে। উত্তর মেরু অঞ্চলের এক জাতীয় সামুদ্রিক শঙ্খচিল প্রতিবছর এই দূরত্ব অতিক্রম করে দক্ষিণ দিকে চলে আসে। আমাদের দেশে অতিথি পাখিরা অতটা পথ পাড়ি না দিলেও তারাও অনেক দূর থেকেই আসে। বরফ শুভ্র হিমালয় এবং হিমালয়ের ওপাশ থেকেই বেশির ভাগ অতিথি পাখির আগমন ঘটে।

প্রকৃতির অপার লীলায় প্রতিবছর টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী অতিথি হয়ে আসে ভিনদেশি পাখিরা।

মধুপুর কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল গ্রামের বড়বিল, চাপড়াবিল ধনবাড়ীর হামিলবিল, ধলিবিল, হাচ্চাবিলসহ বিভিন্ন বিলে আসছে অতিথি পাখিরা। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে বিলগুলো। দর্শনার্থীরাও ভিড় করছেন এই পাখিদের দেখতে। দিনের ক্লান্তি শেষে কাজের ফাঁকে অনেকেই ঘুরতে আসছে চাপড়াবিল, ধলিবিল ও বড় বিলে।

বৈরি পরিবেশ থেকে টিকে থাকার জন্য হাজার হাজার কিলোমিটার দূর থেকে ঘুরতে আসে এই অতিথি পাখিরা। মধুপুর, ধনাবাড়ী ও ঘাটাইলের বেশ কিছু জায়গায় অতিথি পাখির আগমনে কলকল শব্দে ভরে উঠে জলাশয়গুলো। এসব পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে ঝাঁক বেঁধে এক সঙ্গে আকাশে উড়ার দৃশ্য বিমোহিত করে দর্শনার্থীদের।

তবে গতবারের তুলনায় এবার অতিথি পাখির আগমন কিছুটা কম। কারণ হিসেবে দর্শনার্থীরা জানান, বিলগুলোতে মানুষের আনাগোনা অনেক বেশি এবং অবৈধ শিকারীদের উপদ্রব রয়েছে। তার ওপর এখানে ভাড়ায়চালিত  শ্যালো মেশিন চলার কারণে পাখিরা ভয়ে আসতে চায় না।

সরেজমিনে ধলিবিল, বড়বিল,  চাপড়াবিল এবং নেদারবিলে গিয়ে চোখে পড়ে এমনই দৃশ্য। প্রায় বেশিরভাগ জায়গায় ধান চাষের জন্য জমি তৈরি করছেন স্থানীয় কৃষকরা। পাখিগুলো বসার জন্য তেমন কোন সুযোগ না পাওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে বেড়াচ্ছে।

চাপরা বিলে ঘুরতে আসা দর্শনার্থী সাজিদুল হাসান সিহাব এবং সুজন বলেন ‘আমরা প্রতি বছর এখানে বেশ কয়েকবার ঘুরতে আসি। বিশেষ করে শীতের সময়টা অনেক ভালো লাগে। অতিথি পাখিরা আসে, তাদের কিচিরমিচির শব্দ একটা সুরের পরিবেশ সৃষ্টি করে। তবে এবার গত কয়েক বছরের তুলনায় একটু কম পাখি দেখা যাচ্ছে।’

জহিরুল ইসলাম নামের স্থানীয় একজন জানায়, ‘আমাদের এখানে গত কয়েক বছর ধরে অনেক অতিথি পাখি আসে। আমরা পাখিগুলোকে কোনো রকম বিরক্ত করি না। এগুলো বিলে থাকলে দেখতেও ভালো লাগে।’

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মান্নান মিয়া বলেন, ‘আসলে অতিথি পাখিরা শীতের সময় অনেক দূরদূরান্ত থেকে আসে। প্রতি বছর তারা বিভিন্ন জলাশয়ে বিশেষ করে নেদার বিল এবং চাপড়া বিলে আসে এটা আমরা দেখেছি। অতিথি পাখিরা যেখানে তাদের খাবারের সুবিধা বেশি পাবে, নিরাপদ আশ্রয়স্থল পাবে সেখানেই যাবে। আমাদের উচিৎ পাখিগুলোকে কোন প্রকার অত্যাচার না করে নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া।


⇘সংবাদদাতা: আনছার আলী

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top