
সেবা ডেস্ক: কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে মটরসাইকেল মেকারের দোকানে হামলা এবং সাদা পোশাকে থানার এক পুলিশ সদস্যকে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ওই মামলায় পুলিশ ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ প্রতিরাতে উপজেলার করাতিপাড়া গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে।
পুলিশের ভয়ে উপজেলার করাতিপাড়া ও জহিরমন্ডল পাড়া দুই গ্রামের চারশ পরিবারের মাঝে আতংক বিরাজ করছে। পুলিশের ভয়ে ওই দুই গ্রাম এখন পুরুষ শূণ্য। বৃহস্পতিবার থেকে গত ৫ দিন ধরে দুই গ্রামের পুরুষ মানুষ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলায় অভিযুক্ত ছাড়াও নিরাপরাধ মানুষও পুলিশের ভয়ে বাড়িতে থাকতে পারছে না। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫০ জনের মতো কিন্তু দুই গ্রামের ৪০০ পুরুষ মানুষ কেন পালিয়ে বেড়াবে? এমন তথ্য জানার জন্য সোমবার সরেজমিনে ওই দুই গ্রামে গিয়ে কোনো পুরুষ মানুষকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। বাড়িতে শুধুমাত্র গৃহবধু ও শিশুদের পাওয়া গেছে।
করাতিপাড়া গ্রামের আইয়ুব আলীর স্ত্রী ছানোয়ারা বেগম বলেন, পোলার বাপে কামলা দিয়া খায়। কারো সাথে কোনো ঝামেলা করে না। মারামারি করল তাগরে তো পুলিশ ধরাই হায়নি। এহন বাড়িতে যাকে পায় তাকেই ধইরা নিয়া যায়। কোনো অপরাধ না কইরাও মানুষডা (স্বামী) পালাইয়া বেড়াচ্ছে। সব বড় বিপদ অইছে আমার পোলা সাব্বির হোসেন এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পুলিশের ভয়ে সেও বাড়িতে থাকবার পারছে না। একই গ্রামের মন্তাজ আলীর স্ত্রী লাল বানু বলেন, আমার পোলা এরশাদ আলীও এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে থিকা পুলিশ তাকে ধরবার চাইছিল। কিন্তু স্যার সহযোতিায় রক্ষা পাইছে। মাইনসে কয় পুলিশ বাড়িতে যাকে পাবো তাকেই নাকি ধইরা নিয়া যাবো। ভয়ে পোলা আমার বাড়িতে থাকবার পারছে না।
করাতিমন্ডল পাড়া গ্রামের আলমগীর হোসেন ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। তারপরও সে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার স্ত্রী লাভলী বেগম বলেন, আমার স্বামী ওই মারামারির সঙ্গে জড়িত নয়। মাইনসে কয় নাম ছাড়া আসামি রয়েছে। ফলে পুলিশ গেরামের যাকে পাবে তাকে ধইরা নিয়া নাম ঢুকিয়ে দিবে। এই ভয়ে পোলার বাপে বাড়ি ছাড়ছে। একই ধরণের অভিযোগ করেন, গৃহবধু মর্জিনা বেগম, শামসুন্নাহার, মরিয়ম বেগ ও ঝর্না খাতুন। শহর বানু নামের এক গৃহবধু বলেন, আমার স্বামী (আব্দুর করিম) কোনো ঝামেলায় যায়নি, কামলা দিয়া খায়। পুলিশের ভয়ে ৫ দিন থিকা বাড়িছাড়া। আয়রোজগার বন্ধ। ধারকর্জ করে ছেলেমেয়েদের খাওন জোগাইছি। আরো কতদিন যে এভাবে পালাইয়া থাকবে। একই ধরণের অভিযোগ করেন করাতিপাড়া গ্রামের নিরাপরাধ অনেকেই।
রাজীবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা পরিষদের সদস্য আলহাজ্ব আজিম উদ্দিন বলেন, ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, যারা অভিযুক্ত তাদেরকে পুলিশ গ্রেপ্তার করুক। তা না করে নিরীহদের পুলিশ হয়রানি করছে। মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫০ জনের মতো সেখানে দুই গ্রামের ৪০০ পুরুষ মানুষ বাড়িতে থাকতে পারছে না। প্রতিরাতেই পুলিশ আসামি ধরার নামে নিরীহ মানুষের বাড়িতেও অভিযান চালাচ্ছে। এটা কেন হবে। রাজীবপুর উপজেলা বিসিআইসি সার ঢিলার সমিতির সাধারন সমপাদক সিরাজ-উদ্দৌলা জানান, নয়াচর বাজারের সার ঢিলার নুরুন্নবী মিয়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। অথচ উপজেলা নির্বাচনের জের ধরে একটি মহল চক্রান্ত করে তার নাম মামলায় জড়িতে দিছে। এ নিয়ে জনমেন নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
নিরীহ মানুষকে হয়রানি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজীবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, না কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হয়নি। মামলায় যারা অভিযুক্ত এবং যারা ঘটনার সাথে জড়িত মূলত তাদেরকেই গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশ তৎপরতা চালাচ্ছে। এখন যারা জড়িত নয় তারা যদি পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়ে তাহলে আমরা কী করব। নয়াচরের সার ব্যবসায়িকে আসামি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্তে যদি তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না যায় তখন তার নাম বাদ দেয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, গত বৃহষ্পতিবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে রাজীবপুর থানা মোড় চত্ত্বরে মটরসাইকেল মেকার হযরত আলীর দোকানে হামলা চালায় করাতিপাড়া গ্রামের মানুষ। এ সময় মেকার হযরত আলীকে দোকান থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই সময়ে সাদা পোশাকে উপস্থিত থাকা শফিক আহমেদ নামের এক পুলিশ সদস্য বাধা দিলে তাকে বেধরক পেটানো হয়। পরে থানা থেকে আরো পুলিশ উপস্থিত হলে সংঘর্ষ বাধে। এ ঘটনায় মটরসাইকেল মেকার হযরত আলী ও পুলিশ বাদি হয়ে দু’টি মামলা দায়ের করে ৫০ জনের মতো আসামি করা হয়। মামলায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
⇘সংবাদদাতা: সেবা ডেস্ক

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।