স্বামীকে বাঁচাতে না পারা মিন্নির অসহায়ত্ব-প্রভাস আমিন

S M Ashraful Azom
0
স্বামীকে বাঁচাতে না পারা মিন্নির অসহায়ত্ব-প্রভাস আমিন
সাংবাদিক প্রভাস আমিনের কলাম বামে- সাংবাদিক প্রভাস আমিন
সেবা ডেস্ক: স্বামীকে বাঁচাতে না পারা মিন্নির অসহায়ত্ব আমাদের সবাইকে গ্রাস করেছে। রিফাতকে কুপিয়ে হত্যার ভিডিওতে অন্তত ১০ জন উৎসুক দর্শককেও নাকি দেখা গেছে। বিভিন্ন স্টিল ছবিতে সেই দর্শকদের চিহ্নিত করা হয়েছে।

কেউ প্রতিবাদ করেনি, রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেনি, সবাই দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখেছে। আমার খালি প্রশ্ন জাগে, উপস্থিত দর্শকরা কি চেষ্টা করলে রিফাতকে বাঁচাতে পারতো না? ফেসবুকে এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক, যারা ফেসবুকে বিপ্লব করছেন, তারা কি ঘটনাস্থলে থাকলে প্রতিবাদ করতেন নাকি দর্শকের ভূমিকা পালন করতেন। আমি ঠিক জানি না। একা না হলেও সবাই মিলে 'ধর ধর' করে ধাওয়া দিলে হয়তো রিফাতকে বাঁচানো যেতো। ঘটনা যেহেতু বরগুনা কলেজের গেটে, কেউ একজন হাঁক দিলে, কলেজ থেকেও অনেক এগিয়ে আসতে পারতো।

বিশ্বজিতের সময়ও আমি এই প্রশ্নটি তুলেছিলাম, যতজন ফটোগ্রাফার বিশ্বজিতকে কোপানোর ছবি তুলেছে, তারা মিলে চেষ্টা করলেও হয়তো ছেলেটিকে বাঁচানো যেতো। আমি ঠিক জানি না, এভাবেই কী আমরা সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো? আর কতদিন? আর কতদিন? কবে এই নির্বিকারত্বের, প্রতিবাদহীনতার অবসান ঘটবে?

এই প্রশ্নের উত্তর আমি জানি, যতদিন আগের খুনের বিচার না হবে, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হবে, যতদিন বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলবে; ততদিন এই নৃশংসতাও চলবে। বুধবার রিফাত হত্যার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর ফেসবুকে অনেকেই হত্যাকারীদের ক্রসফায়ারের দাবি করেছেন। আমি প্রতিবাদ করেছি, আমি বরাবরই ক্রসফায়ার, গুমসহ সব ধরনের বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের বিপক্ষে। আমি চাই বিচারের মাধ্যমে অপরাধীর সাজা হোক। ক্রসফায়ার হলো প্রচলিত বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থার প্রমাণ। বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদে বলেই, শিক্ষিত মানুষ প্রকাশ্যে ক্রসফায়ারের দাবি তোলেন।

ক্রসফায়ারের বিরুদ্ধে হলেও আমার প্রতিবাদ আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে আসছে। ভেতর থেকে কেউ একজন আমাকে বলছে, তুই যে সুশীলগিরি করিস, ক্রসফায়ারের বিরোধিতা করিস, তুই কি রিফাতের হত্যার বিচার করতে পারবি? তুই কি বিশ্বজিৎ হত্যাকারীদের বিচার করতে পেরেছিস? আমি চমকে উঠি, তাইতো ৭ বছর আগে প্রকাশ্য দিবালোকে, টিভি ক্যামেরার সামনে, অসংখ্য দর্শকের সামনে কুপিয়ে হত্যা করা হলো বিশ্বজিতকে। তার কী বিচার হয়েছে?

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতারা বিশ্বজিতকে কুপিয়ে হত্যা করেছিল। ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইবুনাল বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করে। রায়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২১ জন কর্মীর মধ্যে আটজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়। তবে আসামীদের মধ্যে মাত্র আটজন গ্রেপ্তার ছিলেন, বাকি ১৩ জনই পলাতক। কিন্তু হাইকোর্ট বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ড পাওয়া ৮ জনের মধ্যে ২ জনকে বেকসুর খালাস, ৬ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং ২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন।  হাইকোর্ট। সেই সাথে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে যাবজ্জীবন কারাদন্ড পাওয়া দুই আসামীকেও খালাস দেওয়া হয়। মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা দুইজনের মধ্যে একজন গ্রেপ্তার আছে। আর ৩ জন যাবজ্জীবন কারাদন্ড ভোগ করছে। তার মানে বিশ্বজিৎ হত্যা মামলার ২১ আসামীর মধ্যে মাত্র ৪ জন এখন কারাগারে আছে। বাকি ১৭ জন হয় পলাতক, নয় বেকসুর খালাস। আপিল বিভাগের রিভিউ শেষে যদি রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করেন, তাহলে বিশ্বজিতকে হত্যার দায়ে একজনের ফাঁসি হতে পারে।

তাও কবে কেউ জানে না। এই যদি হয় বিচারের হাল, তাহলে তো দেশে ক্রসফায়ারের সমর্থক বাড়বেই। আমার খালি প্রশ্ন, হাইকোর্টের যে বিচারপতি বিশ্বজিত হত্যা মামলায় আপিলের রায় দিলেন, তিনি কি অন্ধ? বিচার কক্ষে না হোক, তিনি কি বাসায় টিভিতে দেখেননি- কারা, কিভাবে, কয়জন মিলে বিশ্বজিতকে মেরেছে? এই মামলায় এত সাক্ষ্য প্রমাণের কী অাছে? আদালত হত্যার ভিডিওটি প্লে করবে, আসামীদের চেহারার সাথে মেলাবে, ফাঁসি দেবে, কার্যকর করবে; শেষ। যতদিন বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত না হবে, বিচার প্রক্রিয়ার অন্ধত্ব না ঘুচবে; ততদিন ক্রসফায়ারের জনপ্রিয়তা উত্তরোত্তর বাড়বে।

আমি অনেকদিন ধরেই দাবি করে আসছি, হয় ক্রসফায়ার বন্ধ হোক, নইলে প্রচলিত বিচার ব্যবস্থা। এক দেশে দুই রকম বিচার চলতে পারে না। তবে শেষ পর্যন্ত প্রচলিত বিচার ব্যবস্থায় আস্থা রাখতে চাই।

চাই বটে, কিন্তু আমি জানি, বিশ্বজিৎ হত্যার ন্যায়বিচার হয়নি বলেই রিফাত হত্যা ঘটেছে। রিফাত হতারও বিচার হবে না, পরে আরেকজন খুনী উৎসাহিত হবে। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা না হলে, বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরুতে না পারলে; এ ধরনের কোপাকুপি চলবেই। কয়েকদিন আমরা ফেসবুকে বিপ্লব করবো, তারপর আবার ঝাঁকের কই ঝাঁকে মিশে যাবো।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top