নব-সরকারি কর্মচারিদের কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার আহবান শেখ হাসিনার

S M Ashraful Azom
0
নব-সরকারি কর্মচারিদের কর্তব্যনিষ্ঠ হওয়ার আহবান শেখ হাসিনার
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন সরকারি কর্মচারিদের কেবল চাকরির জন্য চাকরি নয়, সেবার মানসিকতায় দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা এবং উদ্ভাবনী চিন্তার প্রসার ঘটিয়ে কর্মক্ষেত্রে আত্মনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাজটাকে কেবল চাকরি হিসেবে নিলে হবে না। দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য দেশপ্রেম এবং কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়ে কাজ করতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমি মিলনায়তনে ১১০, ১১১ ও ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজের ভেতরে ইনোভেটিভ চিন্তা-ভাবনা থাকতে হবে। নিজের ভেতরে একটা আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। কোন কাজ পারবো, কি পারবো না এই দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভূগলে চলবে না। হ্যাঁ, আমি পারবো, সেই বিশ্বাসটা সব সময় নিজের ওপর রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা চাইতেন বাঙালিরা রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছে তাই পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াবে এবং আমরা তা করতে পারবো। এই কথাটা সবসময় মনে রাখতে হবে, এই আত্মবিশ্বাসটা থাকতে হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে সবথেকে বড় কথা আত্মবিশ্বাস। যে কোন একটা কাজ করতে গেলে কিভাবে করবো, কিভাবে হবে, কয় টাকা আসবে, কোথা থেকে টাকা পাব-একদম দুশ্চিন্তা না করে কোন কাজটা করে উন্নতি করা সম্ভব সেটা নিজেকেই খুঁজে বের করতে হবে।’

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এম আশিকুর রহমান, জন প্রশাসন সচিব ফয়েজ আহমেদ অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

প্রতিষ্ঠানের রেক্টর কাজী রওশন আরা আখতার স্বাগত বক্তৃতা করেন।
১১০, ১১১ ও ১১২ তম কোর্সের রেক্টর পদক জয়ী তিন শিক্ষার্থী মাহবুব উল্লাহ মজুমদার, রঞ্জন চন্দ্র দে এবং মাবরুল আহমেদ অনিক অনুষ্ঠানে নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তৃতা করেন।

প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ১১০, ১১১ এবং ১১২ তম আইন ও প্রশাসন কোর্সের শিক্ষার্থীদের মঝে সনদ বিতরণ করেন এবং তাঁদের সঙ্গে পৃথক ফটো সেশনে অংশগ্রহণ করেন। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

শেখ হাসিনা সরকারি কর্মচারিদের জনসেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করে যাবার উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমি এইটুকু অনুরোধ করবো-যে যেখানে যাবে কেবল চাকরির স্বার্থে চাকরি করা নয়, জনসেবা করা, দেশ সেবা করা, দেশকে ভালবাসা, মানুষকে ভালবাসা-এই কথাটা মনে রাখতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই আপনারা পারবেন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই কথাটা আমি বিশ্বাস করি।’

প্রধানমন্ত্রী তাঁর উন্নয়নের সুফল এসময় তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সরকারি কর্মচারিদের নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করে যাবার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিটি গ্রামের মানুষ শহরের সুযোগ-সুবিধা পাবে। এটাই হচ্ছে আমার গ্রাম আমার শহর।’

বাংলাদেশ বর্তমানে উন্নয়নশীল দেশের সে স্বীকৃতি অর্জন করেছে তা ধরে রাখায় তিনি উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে সন্ত্রাস, মাদক এবং জঙ্গিবাদ মুক্ত রাখতে এ সময় সকলের প্রতি আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগের সরকারের ৬১ হাজার কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে এবার আমার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছি এবং ১৯ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের জায়গায় ২ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এই উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি অর্থ জনগণের অর্থ সেটা মনে রাখতে হবে। আজকে আমরা বেতন-ভাতা যা কিছুই পাচ্ছি তা আমাদের দেশের কৃষক-শ্রমিক মেহনতি জনতার ঘামে উপার্জিত অর্থ। কাজেই তাঁদের ভাগ্যের পরিবর্তন করা, তাঁদের উন্নতি করাটাই আমাদের লক্ষ্য।’

কোন কাজই যে ছোট নয়, বা মাঠে কায়িক পরিশমের কাজ সামাজিক মর্যাদায় যে কোন ভাবেই খাটো হতে পারে না তা সকলকে অনুধাবন করার আহবান জানিয়ে সরকারি নবীন কর্মচারিদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন কাজ যে ছোট কাজ নয়, এই কথাটাও মানুষকে বোঝাতে হবে।’।

তিনি বলেন, ‘লেখাপড়া শিখলেই আমি ধান কাটতে পারবো না, এই যে মানসিকতা তা পরিহার করতে হবে। ধান কাটার লোক না পাওয়ার প্রেক্ষিতে তিনি ছাত্রলীগকে নিজ নিজ এলাকায় ধান কাটায় নেমে যাওয়ার হুকুম দেন বলে জানান।

বঙ্গবন্ধু কন্যা সকল শ্রেনী পেশার মানুষকে মর্যাদা দিয়ে চলার আহবান জানিয়ে এসময় ব্যক্তিজীবনে পিতা-মাতার কাছ থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা অনুযায়ী রিক্সা চালককে আপনি সম্বোধন করা, ড্রাইভারকে সাহেব বলে সম্বোধনের পারিবারিক শিক্ষার উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘৪১ সালের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার সময় আজকের প্রজন্মই সে সময়ে অনেক উঁচু আসনে অধিষ্ঠিত হবে। কাজেই এখন থেকেই সে দায়িত্ব পালনের প্রস্তুতি নিতে হবে।’

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ও প্রাচীন এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতৃত্ব দানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর দিনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, মওলানা ভাসানী, শামসুল হকসহ আওয়ামী লীগের সাবেক নেতৃবৃন্দকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

১৭৫৭ সালে ২৩ জুন, পলাশীর আ¤্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সৃষ্টিই হয়েছিল এদেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার মাধ্যমে শোষিত বঞ্চিত মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে। তাই, এই দিনেই পুরান ঢাকার কেএম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে দলটির জন্ম।

তিনি এ সময় ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের ডন পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী সামরিক ও বেসামরিক চাকরিতে পূর্ব বাংলার জনগণের বঞ্চনার চিত্র উল্লেখ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশীদের মাঝে বাঙালি জাতিসত্ত্বার উন্মেষ ঘটানোর ২৩ বছরের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকারের বিগত ১০ বছরের ধারবাহিক শাসনে বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top