মৃত ব্যক্তিকে বাড়িতে রাখাই যাদের রীতি!

S M Ashraful Azom
0
Keeping dead people in the house whose custom!
সেবা ডেস্ক: টোরাজা সম্প্রদায়।  ইন্দোনেশিয়ার বালি থেকে ১৮০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে ইন্দোনেশিয়ার দক্ষিণ সুলায়েসির পাঙ্গালায় যাদের বসবাস। টোরাজারা মূলত খ্রিস্টান। কিন্তু ছোট থেকেই তারা এই বিশ্বাস নিয়েই বড় হয়েছেন যে, মৃত্যু মানে জীবনের শেষ নয় বরং জীবনের যাত্রার একটা অংশ হল মৃত্যু।

তাদের বিশ্বাস, মৃত্যু মানেই আত্মার দেহ ত্যাগ করা নয়। কারো মৃত্যু হওয়া মানে তিনি জীবিত কিন্তু ভীষণ অসুস্থ। তাই হাঁটচলা, খাওয়া এমনকি কথা বলতে পারেন না।

টোরাজা সম্প্রদায়ের কোনো আত্মীয়-স্বজনের মৃত্যু হলে তাই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বদলে তার বিশেষ যত্ন নিতে শুরু করেন তারা। কফিনের মধ্যে প্রিয়জনদের দেহ রেখে দেয়া হয়। প্রতিদিন সময় করে পানি, খাবার এমনকি সিগারেটও রোজ দেয়া হয়।

প্রতিদিন সময় করে পুরো দেহ পরিষ্কার করে, নতুন পোশাক বদলানো হয়। প্রিয়জনদের যাতে কখনও মনে না হয় যে, তাদের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন না পরিবারের বাকি সদস্যেরা। খুব খেয়াল রাখা হয় এই বিষয়টাতে। প্রত্যেকেই তার সময়মতো কফিনের ঢাকনা খুলে প্রিয়জনের সঙ্গে গল্পও করেন। কফিনে শুয়ে থাকা প্রিয়জনের কাছ থেকে অবশ্য কোনো উত্তর মেলে না।

এই ভাবে কোনো পরিবার এক সপ্তাহ, কোনো পরিবার একমাস আবার কেউ কেউ এক বছরও প্রিয়জনকে এ ভাবে নিজের কাছে রেখে দেন। যার সামর্থ্য যত বেশি, তিনি তত বেশি দিন নিজের কাছে ওই মৃতদেহ রেখে দেন। কারণ মৃতদেহ ভাল করে সংরক্ষণ করাটা জরুরি তা না হলে পচে-গলে যাবে। আর সেটা যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। তার জন্য বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়।

এর পর আসে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর্ব। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বৈশিষ্ট্য হল, মহিষ বলি। টোরাজাদের বিশ্বাস, মৃত্যুর পর মহিষই তাদের স্বর্গের রাস্তা দেখিয়ে দেয়। মহিষের পিঠে চেপেই তারা স্বর্গলোকে যান। একজন মৃত ব্যক্তির জন্য অন্তত একটা মহিষ বলি দেয়াটা বাধ্যতামূলক। একটা মধ্যবিত্ত পরিবার একজনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য ২৪টা মহিষ বলি দেয়। সামর্থ্য থাকলে বলির সংখ্যা আরো বাড়ে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এই প্রক্রিয়াকে টোরাজারা বলেন রাম্বু সোলো। তাদের কাছে প্রথম বলি দেয়া মহিষ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার অর্থ হল, প্রিয়জনেরও মৃত্যু। আর তারপর যত বেশি সংখ্যক মহিষের বলি দেয়া হবে, তত তাড়াতাড়ি আত্মা স্বর্গে পৌঁছতে পারবে। গরীব পরিবার, যাদের অনেক মহিষ কেনার সামর্থ্য নেই, তারা একটি মহিষই বলি দেয়। টোরাজাদের বিশ্বাস অনুসারে এর অর্থ, সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত করল ওই একটি মহিষের বলি কিন্তু তার আত্মা স্বর্গে না পৌঁছতেও পারে।

টোরাজারা যে দীর্ঘ সময় মৃতদেহ বাড়িতে রেখে দেন। অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে তার পেছনে অন্য একটি কারণও রয়েছে।

তাদের মতে, টোরাজারা অন্ত্যোষ্টিক্রিয়া খুব ঘটা করে পালন করেন। তা নাহলে আত্মার স্বর্গযাত্রা হবে না, বিশ্বাস তাদের। আর এর জন্য মহিষ প্রয়োজন। মহিষ কেনার টাকা এবং অন্ত্যেষ্টিরীতির আনুষাঙ্গিক খরচ জমানোর জন্যই তারা এতদিন মৃতদেহ বাড়িতে রাখেন। বলি দেয়ার পর মহিষেল মাংস উপস্থিত আত্মীয় পরিজনদের খাওয়ানো হয়।

মৃতদেহ কবর দেয় না টোরাজারা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পর মৃতদেহ সব কফিন নির্দিষ্ট কোনো গুহায় রেখে দেয়া হয়। পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এমন গুহা প্রচুর রয়েছে পাঙ্গালায়।

কিন্তু তার পরও প্রিয়জনকে ‘ভুলে’ যান না তারা। বছরে একবার সমস্ত আত্মীয়-পরিজন সেই গুহার কাছে জড়ো হন, কফিন থেকে মৃতদেহ তুলে পরিষ্কার করে নতুন পোশাক পরানো হয়, খাওয়ানো হয়। এভাবেই তাদের সম্মান জানানোর রীতি চলতে থাকে।

টোরাজাদের বিশ্বাস, মৃতদের প্রতি সম্মান জানালে তাদের আয়ু বাড়বে এবং সৌভাগ্য বজায় থাকবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top