
রফিকুল আলম, ধুনট প্রতিনিধি: একাধিক মেয়ের সাথে সখ্যতা, বিয়ে, প্রতারনা ও মারপিটের অভিযোগে বগুড়ার ধুনট থানা থেকে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শাহানুর রহমান প্রত্যাহার হয়েছে। শুক্রবার রাতে পুলিশ সুপারের নির্দেশে তাকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে বগুড়া পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাহানুর রহমান সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া গ্রামের হবিবর রহমানের ছেলে। তার স্ত্রী ও ২ সন্তান রয়েছে। ২০১০ সালে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকুরির সুবাদে শাহানুর রহমান স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বগুড়া শহরের চকলোকমান এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন।
সেখানে চাকুরীকালে বগুড়া জজ কোর্ট এলাকার খাবারের দোকানের মালিক ২সন্তানের জননী কহিনুর খাতুনের (৪৫) সাথে তার গভীর সখ্যতা গড়ে ওঠে। কহিনুর বগুড়া শহরের নাটাইপাড়া বৌ-বাজার এলাকার জায়েদ আলীর মেয়ে। গত ২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে শাহানুর রহমান বগুড়া থেকে বদলি হয়ে ধুনট থানায় যোগদান করলে তাদের সম্পর্কের অবণতি ঘটে। কহিনুরের সাথে তার অর্থনৈতিক লেনদেন ছিল।
এদিকে স্ত্রী ও সন্তানদের বগুড়া বাসায় রেখে শাহানুর ধুনট হাসপাতাল এলাকায় বাসা ভাড়া নেন। শুক্রবার সকালে কহিনুরকে কৌশলে থানায় ডেকে এনে মারপিটে আহত করে শাহানুর। এসময় স্থানীয় লোকজন কহিনুরকে উদ্ধার করে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখান থেকে বিকেলের দিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সংবাদ পেয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোকবুল হোসেন ও গাজিউর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনাটি প্রাথমিক তদন্তে প্রমানিত হওয়ায় শাহানুর রহমানকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে শাহানুরের বিরুদ্ধে একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের তথ্য উঠে আসে। ধুনট পৌর যুবদলের সভাপতি মশিউর রহমান পলাশ ২০১৬ সালের ২৩ জুন মৃত্যুবরণ করেন। রাজনৈতিক কারনে পলাশের বিরুদ্ধে নাশকতা ও বিস্ফোরক আইনে ৬টি মামলা আদালতে বিচারাধীন থাকায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়। থানা থেকে শাহানুরকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এ সুযোগে পলাশের স্ত্রী এক সন্তানের জননী শাপলা খাতুনের সাথে শাহানুর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। স্ত্রী ও সন্তানের কথা গোপন রেখে শাহানুর ৫ জানুয়ারী শাপলাকে বিয়ে করে। গোপনে শাপলার বাড়িতে যাতায়াতের একপর্যায়ে ৭ জুলাই বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে।
এ বিষয়ে শাপলা খাতুন বলেন, মৃত স্বামীর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ঝামেলা মেটাতে শাহানুরের সাথে পরিচয় হয়। তিনি ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। তার স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও এ তথ্য গোপন রেখে ২ লাখ টাকার মহরানায় আমাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তার স্ত্রী মোবাইল ফোনে সবকিছু খুলে বলেন। শাহানুরের প্রতারনা বুঝতে পেরে ৭ জুলাই তার সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটায়। বিয়ে বিচ্ছেদকালে ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলে আমাকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা দিয়েছে। প্রতারক শাহানুরের শাস্তি চাই।
স্থানীয় বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ধুনট শহরে শাহানুরের ভাড়া বাসায় অজ্ঞাত নারীদের যাতায়াত ছিল। তার বাসায় স্ত্রী ও সন্তানরা না থাকায় সুযোগে তিনি অনৈতিক কর্মকান্ড করেছে। এ সব বিষয়ে এলাকায় গুনজন থাকলেও পুলিশ কর্মকর্তা বলে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি।
এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শাহানুর রহমান বলেন, ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে শাপলাকে বিয়ে করেছিলাম। পরে তার সাথে সমঝোতার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছে। এছাড়া কহিনুরের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের বিষয় নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। তবে তার সাথে আমার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল না।
ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, শাহানুরকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার নির্যাতনের শিকার ওই নারী থানায় কোন অভিযোগ করেনি। তারপরও বিভাগীয় তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।