নিয়োগপত্র পেলেও নানা ভূগা‌ন্তি‌তে শিক্ষকবৃন্দ

S M Ashraful Azom
0
নিয়োগপত্র পেলেও নানা ভূগা‌ন্তি‌তে শিক্ষকবৃন্দ
সেবা ডেস্ক: নতুন জনবল ও এমপিও কাঠামো না দেখে আগের নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বরাবর শিক্ষক নিয়োগের চাহিদাপত্র দিয়েছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এনটিআরসিএ ওই চাহিদার ভিত্তিতে নিয়োগও দিয়েছে। তবে নিয়োগপত্র পেলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারছে না কয়েকশ’ শিক্ষক। আর এসব শিক্ষকদের একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে (মাউশি)।

মাউশি কার্যালয়ে কয়েকজন নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেসরকারি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগে নানাভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন শতাধিক চাকরি প্রার্থী।

নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক বলেন, সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়ায় অন্য চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। এখন নিয়োগপত্র নিয়ে স্কুলে গেলে যোগ দিতে দেননি স্কুল কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে যোগদান করে লাভ হবে না, বেতন-বিল হবে না। তবে টাকা দিলে একটা ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এমন বিষয় উল্লেখ্য করে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন তারা।

নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার আসল আসলামপুর আজাহার হাইস্কুলে বাংলা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রাকিব হোসেনকে যোগ দিতে দেয়নি প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি মাউশির মহাপরিচালক বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন তিনি।

রাকিব হোসেন জানান, প্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে চাইলে প্রধান শিক্ষক বলেন- এখানে যোগ দিয়ে লাভ হবে না, বেতন-বিল হবে না।’ তবে অন্য শিক্ষককে দিয়ে ওই প্রধান শিক্ষক চার লাখ টাকা দাবি করেছেন বলে লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন তিনি।

অন্যদিকে নিয়োগ ভুয়া বলে টাকা দাবি করছেন সভাপতি ও স্কুলের প্রধান শিক্ষক।

দিনাজপুর সদরের শংকরপুর এমবিএল উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন কম্পিউটার শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মো. জাহিদুল ইসলাম। যোগদানে ব্যর্থ হয়ে মাউশির মহাপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি।

অভিযোগে জাহিদুল বলেন, আমি যোগদান করার জন্য প্রধান শিক্ষকের কাছে কাগজপত্র দিলে তিনি নেননি। প্রতিষ্ঠান পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির কাছে গেলে তিনি জাহিদুলকে জানিয়েছেন, এসএমএস পাইনি। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে আবার এসএমএস পাঠানো হলে এনটিআরসির নিয়োগ ভুয়া উল্লেখ করেন সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক। তাকে জানিয়ে দেয়া হয়, এনটিআরসিএ টাকা নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে।

জাহিদুল যোগ দেয়ার জন্য কমিটি ও প্রধান শিক্ষককের কাছে অনুরোধ জানালে তার কাছে দেড় লাখ টাকা দাবি করা হয়। লিখিত অভিযোগে জাহিদুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার কাছে প্রধান শিক্ষক ও সভাপতির সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড আছে।

নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া আরেকজনের লিখিত অভিযোগ রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার হুলাশুগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে গার্হস্থ্য শিক্ষা পদে নিয়োগ পাওয়া লুৎফা তাহেরাকে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেয়নি প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. আশমত আলী। তবে তিনি (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক) লুৎফা তাহেরাকে যোগদান করাতে না দেয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন ‘পদটি এখনো তৈরি হয়নি। ভুলক্রমে এ পদে চাহিদা দেয়া হয়েছিল।’

কিশোরগঞ্জ উপজেলার মিঠামাইন উপজেলার হাজি তৈয়ব উদ্দিন হাইস্কুলে যোগ দিতে গেলে ইংরেজি বিষয়ে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক মোহাম্মদ মঞ্জুর রাহীকে যোগ দিতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এস এম আশফাক হুসেন ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেয়া চাহিদা আমরা শিক্ষা অফিসারদের দিয়ে যাচাই করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছি। যাচাই না করে কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে শিক্ষা অফিসাররা করেছেন। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাহিদা দিয়ে নিয়োগ দিচ্ছে না, দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রণালয়কে সুপারিশ করেছি। যদি কোনো শিক্ষক নিয়োগ না পেয়ে থাকেন তাহলে আমার কাছে এলে যোগদান নিশ্চিত করা হবে।

এ বিষয়ে মাউশির সহকারী পরিচালক দূর্গা রানী সিকদার ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, অন্যায় যে করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেউ যদি নিয়োগ না পেয়ে থাকে তাহলে আমাদের কাছে এলে যোগদানের ব্যবস্থা করা হবে।

এদিকে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের যোগদানে বাধা দেয়াসহ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির কারণে দেশের ১৮৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি ও শিক্ষকদের এমপিও বাতিলের সুপারিশ করেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top