
সেবা ডেস্ক: কথায় আছে টাকা হলে বাঘের দাঁতও পাওয়া যায়। তাইতো টাকা হলেই পাওয়া যাচ্ছে যে কোন ঠিকানায় রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ পাসপোর্ট। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের সাথে যোগাযোগ করলেই অসম্ভব সবকিছু সম্ভব হয়ে যায়। এছাড়া যে কোন ঠিকানায় দালালরা করে দেয় পাসপোর্ট। আবেদনকারী দেশের যে কোন স্থানের মানুষ হলেই ভুয়া ঠিকানা ও জাল কাগজপত্র দিয়ে খুব সহজেই পাসপোর্ট বানাতে পারবেন দালালদের মাধ্যমে। কোন ব্যক্তি নতুন পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে পাসপোর্ট অফিসে গেলে ঘটে যত ব্যত্যয়। তাঁদেরকে একাধিক বার ফিরিয়ে দেয়া হয় আবেদন ফরমে বিভিন্ন ভুল হয়েছে বলে।
দালালের আখড়ায় পরিণত হয়েছে জামালপুর আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস। এক দালাল টপকে এক পা বাড়ালেই আরেক দালালের খপ্পরে পড়তে হয়। বহিরাগত দালাল ছাড়াও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আনসার সদস্যরাও দালালের ভুমিকায় অবর্তিন হয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।
সামনের সড়ক থেকে অফিসে ঢুকার গলিসহ অফিসের ভেতরেও ফাঁদ পেতে রেখেছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। এই ফাঁদে আটকে পড়ে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে তিনগুন বেশী টাকা গুনতে হচ্ছে পাসর্পোট করতে আসা লোকজনদের। অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে টাকা ছাড়া সেবা মেলে না।
জামালপুর শহরের পশ্চিম কাচারী পাড়ায় আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস যেন এক বাজপাখিদের অভয়আরন্য। শিকার ধরার জন্য শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারা। পাসপোর্ট করতে আসা লোকজনদের দেখলে ছুঁ মেরে খামছে ধরে। তাদের নিয়ে দালালে দালালে চলে টানাটানি। পাসপোর্ট করতে গিয়ে নানা বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় এমনই অভিযোগ করেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী।
অনুসন্ধানে পাসর্পোট অফিসের গলিতে পা পড়তেই দালালরা ঘিরে ধরে জানতে চায় ভাই পাসর্পোট করবেন? ইর্মাল না ইমারজেন্সি? এসব কথার উত্তর না দিয়ে গলিতে ঢোকতেই ঘিরে ধরে আরেক দালাল চক্র তাদেরও একই প্রশ্ন। অযাচিত এসব প্রশ্নের উত্তর না দিলে কোন কোন দালাল বলে উঠে যেখানেই যান আমাদের ছাড়া কাজ হবে না। আপনি করলে যে কাজ দেরীতে হবে, আমরা করলে সে কাজ দ্রুত হয়ে যাবে। পুলিশ ভেরিফিকেশনেরও দায়িত্ব আমাদের। বিনিময়ে গুনতে হবে অতিরিক্ত টাকা।
জানতে চাই, নরমাল পাসপোর্টের জন্য কত দিতে হবে? দালাল চক্রের সদস্য বাদশা মিয়া বলেন, অফিস খরচাপাতি মিলিয়ে ৫ হাজার দিলেই হবে। সরকার নির্ধারিত নরমাল পাসর্পোটে ৩ হাজার টাকা ৪৫০ টাকার কথা তাকে বলতেই তিনি বলে উঠেন ছোট মিয়া বড় মিয়া সব মিয়ারেই দিতে হবে, এর কমে হবে না। ইমার্জেন্সি পাসর্পোট করতে কত লাগবে জানতে চাইলে বলেন ৯ হাজার টাকা লাগবে। অথচ সরকারী রেট ৬ হাজার ৯’শ টাকা। একটু এগিয়ে গেলেই অফিসের গেইটে পড়তে হয় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আনসার সদস্যদের খপ্পরে।
সেখানেও পাসর্পোট সেবা প্রার্থীদের নিয়ে চলে টানা হেঁচরা। প্রতি পাসর্পোটে আনসার সদস্য ১’শ টাকা, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ২’শ টাকা, বায়োমেট্রিক অপারেটর ২’শ টাকা ও সিল স্বাক্ষরে ৫’শ টাকা অফিস খরচ দিতে হয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশক’জন দালালের সাথে কথা বলে জানা যায়। কদমে কদমে দালালদের ফাঁদে চরম বিড়ম্বনা শিকার হচ্ছেন পাসর্পোট করতে আসা লোকজনরা।
পাসর্পোট অফিস ঘিরে গড়ে উঠেছে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র। এই দালাল চক্রের মুল হোতা মতি মিয়া। অফিসের সামনেই তার দোকান। দোকানটি এখন ছায়া পাসপোর্ট অফিস। মতি মিয়ার দারস্থ হলে পাসর্পোটের আবেদন ফরম থেকে শুরু সকল সেবাই মেলে। মতি মিয়ার নেটওয়ার্কে রয়েছে আব্দুল্লাহ, বাদশা, রানা, রিপন-১, রিপন-২, শফিকুল, শাহাবুদ্দি, সুমন, রুবেল, আল-আমিন আরমানসহ প্রায় অর্ধশত দালাল।
এর আগে মতি মিয়া ঢাকার আগারগাঁওয়ে পাসপোর্ট অফিসের দালাল ছিল। তিনি দালালদের নাটের গুরু সেঁজে বনে গেছেন কোটিপতি। এর আগে র্যাব অভিযান চালিয়ে দালাল মতি মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছিল। জেল থেকে বের হয়ে ফের পুরনো কায়দায় দালাল চক্রের নেটওর্য়াক চালু রেখেছে। চক্রটি স্থানীয় বিধায় পাসর্পোট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও তাদের কাছে অসহায়। নিরাপত্তাহীনতায় উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে কাটে সবসময়।
ইতোপুর্বে দালালদের হামলার শিকার হয়েছিলেন রফিকুল ইসলাম ও বেলাল হোসেন নামে দুই সহকারী পরিচালক। হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে দালাল চক্র। একাধিকবার পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে দালালরা গ্রেপ্তার হলেও আজও দালাল মুক্ত হয়নি জামালপুর আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিস।
জামালপুর আঞ্চলিক পাসর্পোট অফিসের সহকারী পরিচালক নাজমুল আহসান হাবীব বলেন, র্দীঘদিন ধরেই স্থানীয়রা এ কাজে জড়িত। দালাল মুক্ত করতে হলে, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনসহ সকলের একয়োগ কাজ করতে হবে। নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হলে অবস্থার উত্তরণ ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তিনি।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।