বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে জানতে তাকে নিয়ে পড়তে হবে: শেখ হাসিনা

S M Ashraful Azom
0
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সম্পর্কে জানতে তাকে নিয়ে পড়তে হবে শেখ হাসিনা
সেবা ডেস্ক: বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তাকে নিয়ে লেখাপড়া করার তাগিদ দিয়েছেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লেখা বই কারাগারের রোজনামচা বের করা হয়েছে। তার আদর্শ সম্পর্কে জানতে হলে তার লেখা বইগুলো পড়তে হবে।

গণভবনে শনিবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। আলোচনা সভায় ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, নীতি-আদর্শ না থাকলে নেতা হওয়া যায় না। হওয়া গেলেও তা সাময়িক। সেই নেতৃত্ব দেশকে কিছু দিতে পারে না। মানুষের ভালবাসা-আস্থা অর্জন করতে হবে। এটিই রাজনীতিকের জীবনের একমাত্র সম্পদ।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শোককে বুকে নিয়ে, ব্যথা-বেদনা বুকে চেপে রেখে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছি আমরা। ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়া রাখিনি। যে জাতির জন্য বাবা জীবন দিয়ে গেছেন, তাদের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি, সেই বিবেচনা করেছি। যদি নিজেকে বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে গড়ে তুলতে হয় তাহলে তার মতো ত্যাগী কর্মী হিসেবে দেশের জন্য, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যাদের ভালবাসতেন তাদের কল্যাণ করা সন্তান হিসেবে আমাদের দায়িত্ব। ৩২ নম্বরে যখন বাবাকে হত্যা করা হয়, খুনিরা মাকে বলেছিল, চলেন। তিনি একপাও নড়তে রাজি হননি, জীবন ভিক্ষা চাননি। বীরের মতো বুক পেতে দিয়েছিলেন বুলেটের সামনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড় সন্তান হিসেবে বাবার স্বপ্ন, লক্ষ্য আমি জানতাম। সেগুলো সামনে নিয়েই আমার পথচলার শুরু। স্বাধীনতার পর অনেকেই বলেছিল, এদেশের কোনো ভবিষ্যৎ নেই, এটা ব্যর্থ রাষ্ট্র হবে। আমার জেদ ছিল বাংলাদেশকে এমনভাবে গড়ে তুলবো যাতে বিশ্ববাসী বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে দেখে!

বঙ্গবন্ধুর লেখা ও বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকাশিত নথিপত্র ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের পড়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো একটি বইয়ের কাজ চলছে। ১৯৫২ সালে শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু চীনে গিয়েছিলেন। পুরো পাকিস্তান থেকে যাওয়া প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গিয়েছিলেন তিনি। সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশ কীভাবে সেখানে বিপ্লব করেছে, সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা তিনি দেখেছেন, অনুভব করেছেন এবং লিখেছেন।

দীর্ঘ সংগ্রামের পথে অনেক দালাল ছিল, যারা পাকিস্তানপ্রেমী ছিল, তারা বাংলার মানুষের ভালো চায়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের একাত্তরের ভূমিকা সবার জানা। তাদের বিচার জাতির পিতা শুরু করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে দেশ ১০ বছরের মধ্যে উন্নত ক্ষুধামুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে উঠতো।

বাকশালের কর্মকাণ্ড কেন জরুরি ছিল তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকে ‘বাকশাল’, ‘বাকশাল’ বলে গালি দেয়। এটি কী ছিল? বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিপ্রধান। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে এবং শ্রমিকরা হাত দিয়ে অর্থনীতি গড়ে তোলে। সমগ্র বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করে অর্থনৈতিক মুক্তির ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯ জেলাকে ৬০ জেলায় রূপান্তর করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলে তৃণমূলের কাছে উন্নয়নের সুফল পৌঁছানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

’৭৫-এর স্মরণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন তারা ছোট্ট রাসেলকেও ছাড়েনি, যাতে রক্তের উত্তরাধিকারী একজনও জীবিত না থাকে। আমার ভাড়াবাসাতেও আক্রমণ চালিয়েছিল তারা। আমরা অল্প সময়ের জন্য দেশের বাইরে গিয়েছিলাম। আমাদের জন্য দুর্ভাগ্য একই দিনে আমরা পরিবারের সবাইকে হারিয়েছি।

বাঙালি জাতি ছিল চিরদিন শোষিত-বঞ্চিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে বাংলাদেশ সবসময় অবহেলিত ছিল, ক্ষুধায় অন্ন পেতো না, শিক্ষা-চিকিৎসা পেতো না, থাকার ঘরবাড়ি ছিল না, সেই মানুষগুলোর জীবন বদলে দিতে চেয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ছাত্রাবস্থায় গরীব ছাত্রদের সহায়তা করতেন। সবসময় দেশকে স্বাধীন করে মানুষের উন্নয়নের চিন্তা করতেন।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের অবদান বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার (বঙ্গবন্ধু) পাশে আমার মা সবসময় ছিলেন। প্রকাশ্যে রাজনীতিতে আসেননি, ছবি তোলেনি, নাম ছাপেননি। বাবার সঙ্গে থেকে প্রতিটা কাজে সহায়তা করেছেন। সাধ-আহ্লাদ বিসর্জন দিয়েছেন। বছরের পর বছর বাবা যখন কারাগারে, মা অপেক্ষা করেছেন। পাশে থেকে সহযোগিতাও করেছেন। এমনকী ছদ্মবেশে ছাত্রনেতাদের কাছে নির্দেশ পৌঁছে দিতেন, নির্দেশনাও দিতেন। তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা গোয়েন্দা সংস্থার লোক থাকতো। তারা কোনোদিন ধরতে পারেনি আমার মা কোথায় কীভাবে যাচ্ছেন। প্রত্যেক আন্দোলন কীভাবে সফল করতে হয়, তা মায়ের কাছ থেকে শিখেছেন বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার সকাল থেকেই উৎসাহী নেতাকর্মীরা গণভবনের সামনে হাজির হতে থাকেন। বিকেলে আলোচনার সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে ছাত্রলীগের নানা কর্মকাণ্ড তুলে ধরা হয়। দেখানো হয় ছাত্রলীগ কর্মীদের বানানো মোবাইল গেমের প্রোমো। এসময় সঞ্চালক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ছাত্রলীগের নিউজ পোর্টাল বিএসএলনিউজের বিষয়ে অবহিত করেন। তিনি বলেন, আগামীতে সারাদেশে ১১০টি সাংগঠনিক ইউনিটের সামাজিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বিবেচনা করে ‘বেস্ট ইউনিট অব দ্য মান্থ’ ও ‘বেস্ট অ্যাক্টিভিস্ট অব দ্য মান্থ’ ‍পুরস্কার ঘোষণা দেয়া হবে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

Post a Comment

0Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

Post a Comment (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top