
সেবা ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক বলেছেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তুলতে গেলে দেশে উৎপাদন ও সংযোজনে প্রাধান্য দিতে হবে। আগামী বছরের মধ্যে দেশে দেড় কোটি মোবাইল ফোন সংযোজন হলে তাতে এক লাখ কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) তিন দিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন প্রধান হিসেবে উপস্থিত থেকে লেজার শোর মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান এ কে এম রহমত উল্লাহ, আইসিটি বিভাগের সচিব এন এম জিয়াউল আলম, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি শাহীদ উল মুনীর, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবীর প্রমুখ। এছাড়া গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ল্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সার্ভিস অ্যালায়েন্সের (ডব্লিউআইটিএসএ) মহাসচিব ড. জেমস জিম পয়সন্ট।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালের ৬ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় বৈঠকে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানিতে জোর দেওয়া হয়। এরপর তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রপ্তানিমুখী বাণিজ্য শুরু করতে আইসিটি বিভাগ মাঠে নামে।
প্রতিমন্ত্রী পলক আরো বলেন, তরুণ উদ্যোক্তাদের আইডিয়া জানার পাশাপাশি তাদের উদ্ভাবিত পণ্যগুলো আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত করিয়ে দিতে চায় আইসিটি বিভাগ। সে লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে তাদের যোগসূত্র তৈরি করে দেওয়া এবং তাদের মূলধন জোগানোর জন্য এই এক্সপো একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।
‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। ছবি: সংগৃহীত
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ-আর এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তব। তথ্যপ্রযুক্তির ছোয়া আজ দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা মহাকাশ বিশ্বে প্রবেশ করেছি। ক্রমবর্ধমান খাত হিসেবে সরকার সঠিক সময়ে দ্রুততার সঙ্গে আইসিটি খাতকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। আমরা এখন ফাইভ জি, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লক চেইন-এসব নিয়ে কাজ করছি।
দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ বিশ্বের শীর্ষ ২৩তম অর্থনৈতিক দেশ হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফলে বিনিয়োগকারীদের জন্য দারুণ এক বাজার বাংলাদেশ।
প্রসঙ্গত, ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি প্রদর্শনী ‘ডিজিটাল ডিভাইস অ্যান্ড ইনোভেশন এক্সপো-২০১৯’। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ, বাংলাদেশ হাই টেক পার্ক, আইডিয়া প্রজেক্ট, এটুআই, বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) যৌথ উদ্যোগে এই প্রদর্শনী হচ্ছে। দেশীয় প্রযুক্তির সমাহার দিয়ে সাজানো হয়েছে এবারের প্রদর্শনী, রাখা হয়েছে আটটি জোন। আছে ইনোভেশন জোন। আইডিয়া প্রকল্পের ৩০টি প্রজেক্ট, এটুআইয়ের ৩০টি প্রজেক্ট এবং ২১টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো হয়েছে এই জোন। এখান থেকে জানা যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে।
অ্যাক্টিভেশন প্রোগ্রামগুলো থেকে নির্বাচিত সেরা ৩০টি উদ্ভাবন এক্সপোতে প্রদর্শিত হবে। প্রদর্শনীর শেষ দিন বুধবার শীর্ষ ১০ তরুণ উদ্ভাবককে বঙ্গবন্ধু উদ্ভাবনী অনুদান (বিআইজি) দেওয়া হবে। এক্সপোতে থাকবে স্টার্ট আপ জোন। এ জোনে নতুন উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার প্রজেক্ট সম্পর্কে ধারণা পাবেন দর্শনার্থীরা।
মেলার অন্যতম আকর্ষণ রোবোটিক জোন। এবার এক্সপোর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি রোবট ‘লি’। রোবোটিক জোনে এলে জানা যাবে মঙ্গলগ্রহে যাত্রার নানা দিক নিয়ে। বিসিএস এক্সপো জোনে পাওয়া যাচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির হালনাগাদ সব পণ্য। প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সর্বশেষ প্রযুক্তি প্রদর্শন করবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। প্রযুক্তি পণ্য কেনার সুযোগও আছে এই জোনে।
এক্সপো জোনে আছে ১১০টি প্যাভিলিয়ন ও স্টল। আসুস, এইচপি, ডেল, ইন্টেল, স্যামসাংসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি পণ্যগুলো প্রদর্শিত হবে এই জোনে। গেমারদের জন্য আছে গেম জোন। দেশের তৈরি বিখ্যাত ল্যাম্বারগিনি গাড়ির আদলে তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ির দেখা যাচ্ছে এক্সপোতে। তথ্যপ্রযুক্তিতে অবদান রাখার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে অবদান রাখা ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করা হবে।
আয়োজকরা বলছেন, হার্ডওয়্যার পণ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিতি করে তোলাই এবারের প্রদর্শনীর মূল লক্ষ্য। নতুন উদ্যোক্তাদের বাণিজ্যিকভাবে তাদের পণ্য বাজারজাত করতে ইন্ডাস্ট্রি ও উদ্যোক্তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন করে দেবে এই এক্সপো।
জানা গেছে, আইসিটি শিল্প সম্পর্কিত বিভিন্ন পণ্য এবং আইসিটি পরিষেবা তিন দিনব্যাপী এই এক্সপোতে একত্রে প্রদর্শন করে দেশের সাফল্যেও কথা তুলে ধরছেন আইসিটি ইন্ডাস্ট্রির সব ব্যবসায়ী। এছাড়াও স্থানীয় এবং বিদেশিদের মধ্যে বিপুলসংখ্যক বিনিয়োগকারী এক্সপোতে অংশ নেন। যেখানে তারা স্থানীয় উদ্ভাবনগুলো দেখান এবং সেটি থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। ইভেন্টের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের দশ বছরের সাফল্যগুলো বিভিন্ন সেমিনার এবং ব্রেকআউট সেশনের মাধ্যমে তুলে ধরা হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাইভ হচ্ছে এই এক্সপো। আর প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এই প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে উৎসবে আসতে গেলে https://ddiexpo.com/registration সাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।