ধুনটে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা

S M Ashraful Azom
0
ধুনটে কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেন স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা
রফিকুল আলম, ধুনট (বগুড়া): বগুড়ার ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে ভ‚য়া প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ উত্তোলন ও চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রতারণার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। 

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সুলতান মাহমুদ ধুনট উপজেলার সদরপাড়া গ্রামের আজিজার রহমানের ছেলে। তিনি ২০১৭ সালে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মনোনিত হন। রাজনৈতিক পদ পাওয়ার পর তিনি দখলবাজি, চাঁদাবাজি, তদবির, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

সুলতান মাহমুদ ২০১৬ সালে রূপালী ব্যাংক লিমিডেট ধুনট শাখা থেকে জয় টেইলার্স ও জয় বস্ত্র বিতানের নামে ৫ লাখ টাকা এবং তার ভাই মোতালেব হোসেনের নামে ২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। কিন্ত সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি। অস্তিত্বহীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে তিনি লাপাত্তা হয়েছেন। 

সুলতান মাহমুদ সাবেক মন্ত্রী, এমপি, প্রশাসনিক ও বিভিন্ন অধিদফতরের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে পুলিশ কনস্টেবল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, স্বাস্থ্য বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার নামে অর্ধশত বেকার যুবকের সাথে প্রতারণা করেছেন। টাকা হাতিয়ে নেয়ার সময় সুলতান মাহমুদ রূপালী ব্যাংক লিমিটেড ধুনট শাখায় তার সঞ্চয়ী হিসাবের (নং-১৩৬) চেক দিয়েছেন। চাকরি দিতে না পারলে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু তার ওই ব্যাংক হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় হতাশ হয়ে পড়েন চাকরি প্রার্থীরা।

উপজেলার পারনাটাবাড়ি গ্রামের নাসিম উদ্দিনকে রূপালী ব্যাংকে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ও ২০১৯ সালের ২৫ মে দুই দফায় ৭ লাখ ৯০ হাজার টাকা নেন। তাকে রূপালী ব্যাংকের চেক দেয়া হয়েছিল। চাকরি ও টাকা না পেয়ে নাসিম উদ্দিন বাদী হয়ে সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।

বগুড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি কোয়েল ইসলামের মেয়ে জামাইকে এাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে চাকরি দেয়ার নামে ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা নেন। তাকে রূপালী ব্যাংকের চেক দিয়েছিলেন। চাকরি দিতে না পারলেও টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করেছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালতের বিচারক মামলা গুলো তদন্ত করতে ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন।

সুলতান মাহমুদ বগুড়ার অ্যাডভোকেট জাবেদ কাউসারের কাছে একই কায়দায় ছয় লাখ, মোস্তাফিজার রহমানের কাছে ১০ লাখ, আবদুস সাত্তারের কাছে ৩ লাখসহ অর্ধশত মানুষের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

এ বিষয়ে ধুনট উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সুলতান মাহমুদ বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে কারো কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়নি। তবে কিছু লোকের সাথে আমার ব্যবসায়ীক লেনদেন আছে। সেই টাকা আমি ধীরে ধীরে পরিশোধ করছি। তারপরও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। মুলত আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি।

রূপালী ব্যাংক ধুনট শাখা ব্যবস্থাপক শাহানুল হাসান বলেন, সুলতান মাহমুদ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সেই টাকা পরিশোধ করছে না। এছাড়া তার স্বাক্ষরিত প্রায় ৭০ লাখ টাকার প্রায় ১০টি চেক ডিজঅনার হয়েছে। আরও অনেক ব্যক্তি চেক নিয়ে ব্যাংকে এসেছিলেন। কিন্তু তার হিসাবে কোনো টাকা না থাকায় কেউ টাকা তুলতে পারেননি। ঋণের টাকা আদায় ও চেক জালিয়াতির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইসমাইল হোসেন বলেন, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সুলতান মাহমুদের বিরুদ্ধে ৩টি মামলা দায়ের হয়েছে। তার নামে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

 -সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top