রফিকুল আলম,ধুনট (বগুড়া): কী শোভা, কি ছায়া গো, কি স্নেহ, কি মায়া গো, কি আঁচল বিছায়েছ বটের ম‚লে, নদীর ক‚লে ক‚লে। বিশ্বকবি রবিঠাকুর রচিত জাতীয় সঙ্গীতের এ চরণে গ্রাম বাংলার অপরূপ শোভা, ছায়া-মায়া ও স্নেহের আঁচল বিছানো স্থান যেন বটবৃক্ষের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তেমনি বগুড়ার ধুনট উপজেলার মথুরাপুর গ্রামে বারইবাড়ি দহের তীরে কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে একটি বট গাছ।
শতবর্ষী এই বটমূলে স্থানীয়দের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে নামাজখান। যেখানে পথচারী ও মাঠের কৃষকেরা নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নামাজখানা ও গাছটি আর কতদিন টিকে থাকবে তা নিয়েও সংশয় অনেকের। এলাকাবাসীর দাবী কালের স্বাক্ষী বহন করা পুরানো এই বট গাছটিকে বাঁচিয়ে নামাজখানা রক্ষার জন্য প্রশাসন দ্রæত পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মথুরাপুর বাজার থেকে প্রায় ৫০০মিটার পূর্বদিকে মথুরাপুর গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে দাড়িয়ে আছে বটগাছটি। গাছের ছায়াতলে পশ্চিম পাশ দিয়ে বহমান বারইবাড়ি দহ। বট গাছটির জন্ম কত সালে তার কোন সঠিক ইতিহাস কারো জানা নেই। তবে বয়ঃবৃদ্ধদের মুখে শোনা যায় বট গাছটির বয়স শত বছরের বেশী হবে।
স্থানীয় কৃষাণ-কৃষাণীরা রোদ বৃষ্টির মাঝে মাঠে তাদের কষ্টের ফসল ফলাতো। রাখালেরা দিগন্তজুড়া মাঠে ঘাস খাওয়ানোর জন্য গরু-ছাগল ছেড়ে দিয়ে ক্লান্ত শরীরে শীতল ছায়ার প্রতিক্ষায় থাকতো। সে কারণেই এই বটবৃক্ষ রোপন করা হয়। গ্রীষ্মের দাবদাহে কৃষক যখন অতিষ্ট ঠিক তখনই একটু শীতল ছায়ার আশায় এ বট বৃক্ষের নীচে জমা হতো। এখানে বিশ্রমা নেওয়া মানুষ গুলো বটমূলে নামাজ আদায় করতো। প্রয়োজনের তাগিদে নামাজখানার জন্য বটমুলের স্থান পাকা করা হয়। কিন্ত কালের আবর্তে বটমুলে বিশ্রাম বা বসার জায়গাটুকুও নেই।
মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের অবসরপ্রাপ্ত সচিব আব্দুল কুদ্দুস জানান, জন্মের পর থেকেই এ বটগাছটি দেখে আসছি। এই বটগাছের কত বয়স হবে তা সঠিক ভাবে বলতে পারবো না। তবে এ বটগাছটি যেন সেই আদিম সনাতন সভ্যতার ইতিহাস ও ঐতিহ্যর সারকথা আজও সবার সামনে তুলে ধরে আছে। কিন্ত অযতœ-অবহেলা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ও নানামুখী অত্যাচারের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী বটগাছ ও নামাজখানার অস্তিত্ব আজ নষ্ট হতে চলেছে।
মথুরাপুর গ্রামের শিক্ষক কামরুজ্জামান আখের আবেগাপ্লুত হয়ে জানান, এই বট গাছটি আমাদের জীবন ও সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আমাদের বাবা-দাদারাও এ গাছের নিচে বসে আড্ডা দিত। আমরাও শৈশবে এখানে আড্ডা দিয়েছি। পরের প্রজন্মের কাছে এ গাছটি রূপকথার গল্পের মতোই থাকবে। কিন্ত গাছটি রক্ষা না করলে তারা আর পাবে না এ গাছে শান্তির পরশ।
উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ সেলিম বলেন, শতাব্দী প্রচীন বট গাছসহ নামাজখানাটি রক্ষার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসেনর সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।