
গাইবান্ধা জেলা প্রতিনিধি: গাইবান্ধা জেলার মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকল জোনে অবৈধভাবে আখ মাড়াই করে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক হাইড্রোজ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। এভাবে গুড় উৎপাদন করায় মিল কর্তৃপক্ষ যেমন আখের ঘাটতির আশংকায় যেমন উদ্বিগ্ন, তেমনি ওই গুড় মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক বলে জানা গেছে।
রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ সুত্রে জানা গেছে, মিলজোন এলাকায় যন্ত্রচালিত মাড়াই কল দিয়ে আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন নিষিদ্ধ করেছেন সরকার। এ লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রচার করে আসছেন নিয়মিত। কিন্তুপ্রতি বছরই চিনিকলে সরবরাহের জন্য উৎপাদিত আখের একটি বড় অংশ অবৈধ পন্থায় গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যে কৃষকরা আগাম বেচে দেয়। এ কারণে চিনিকলের মাধ্যমে আখ চাষের জন্য সরকারের দেয়া ঋণ যেমন শোধ হয় না, তেমনি প্রচুর জনবল খাটিয়ে, দফায়-দফায় প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ঋণ সহায়তা দিয়ে উৎপাদিত আখ চিনিকলে সরবরাহ না পেয়ে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয় না। চলতি বছর আখ উৎপাদন মৌসুমে রংপুর চিনিকলের আটটি সাব-জোনের মধ্যে পাঁচটি সাব-জোনেই প্রায় অর্ধশত যন্ত্রচালিত আখমাড়াই কল চলছে বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এসব কলে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ’ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হচ্ছে। গত এক মাস ধরে এভাবে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন আখ মাড়াই করা হয়েছে। চলতি বছর চিনিকল কর্তৃপক্ষের দেয়া বীজ, সার, কীটনাশক, শ্রমিকের মজুরী ও সেচ বাবদ নগদ অর্থ ঋণ এবং পরামর্শসহায়তা দিয়ে মিল জোন এলাকায় উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আখ। সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক এ আখের সবটুকুই রংপুর চিনিকলে সরবরাহের কথা থাকলেও চলতি মৌসুমে পাঁচটি সাবজোনের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ৫৮টি যন্ত্রচালিত মাড়াই কল চালু করে গুড় তৈরি করা হচ্ছে।
সম্প্রতি এসব মাড়াইকল বন্ধে প্রশাসনের উদ্যোগের ফলে কিছু কল বন্ধ হলেও এখনও চলছে ৪৪টি আখ মাড়াই কল। গত প্রায় একমাস ধরে নলডাঙ্গা সাব- জোনে ১২টি, পীরগঞ্জ সাব-জোনে ২০টি, গোবিন্দগঞ্জ সাব-জোনে ৫টি, সাহেবগঞ্জ সাব-জোনে ৫টি ও মোকামতলা সাব-জোনে ২টিসহ মোট ৪৪টি আখ মাড়াইকলে প্রতিদিন প্রায় একশ’ ৩২ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে গুড় উৎপাদন করা হচ্ছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রতিটি মাড়াইকলে আখের রসের গুড় সাদা করার জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক ‘হাইড্রোজ’।
গাইবান্ধার সিভিল সার্জন এবিএম আবু হানিফ এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, মাত্রাতিরিক্ত হাইড্রোজ মানবদেহে ক্যান্সারসহ নানা প্রকার জীবনঘাতি রোগের সৃষ্টি করতে পারে। শিশুদের জন্য এ উপাদানটি একেবারেই বিষ হিসেবে বিবেচনা করে তা পরিহার করা উচিৎ।
রংপুর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, গত এক মাসে অবৈধ পাওয়ার ক্রাশার ব্যবহার করে এ চিনিকলের ব্যবস্থাপনায় উৎপাদিত আখের একটি বড় অংশ মাড়াই করে অস্বাস্থ্যকরভাবে গুড় তৈরি করা হয়েছে। এতে জাতীয় ক্ষতির পাশাপাশি মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হাইড্রোজ ব্যবহার করে তৈরি গুড় বাজারজাত করা হয়েছে। এরফলে চিনিকলে আখ না পেয়ে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়তো সম্ভব হবে না।
-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।