শিক্ষাচিন্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী

S M Ashraful Azom
0
শিক্ষাচিন্তায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী

সেবা ডেস্ক: ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি, বক্তৃতা, কাজ ও নানা সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, শিক্ষাচিন্তায় তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অগ্রগামী। দেশ, সমাজ ও রাষ্ট্র এগিয়ে নিতে তিনি শিক্ষাকেই হাতিয়ার করেছিলেন। তার শিক্ষাভাবনা আজও সমভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও সমকালীন। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর কাজের মিল রয়েছে।

তিনি গতকাল সোমবার বিকেলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত 'হায়ার এডুকেশন ইন বাংলাদেশ :থটস অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এ. কে. আজাদের সভাপতিত্বে এ আলোচনায় মুখ্য আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে 'বঙ্গবন্ধুর উচ্চশিক্ষা ভাবনা' শীর্ষক মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান। অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব রঞ্জন কর্মকারের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে ১০টি দেশে শিক্ষকতা, অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে নিয়োজিত থাকা শিক্ষাবিদরা প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশ নেন। প্যানেলিস্টদের পরিচয় করিয়ে দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভারনারেবল স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবা নাসরীন।

প্যানেলিস্টরা হলেন ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান শেখ কবির হোসেন, ভারতের বর্ধমান কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি জায়েদ ইউনিভার্সিটির সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. হাবিবুল হক খন্দকার, যুক্তরাজ্যের স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্ক অ্যাট অকল্যান্ডের অর্থনীতির অধ্যাপক ড. বিরুপাক্ষ পাল, কানাডার সিমন ফ্রাসার ইউনিভার্সিটির সেক্সুয়ালিটি অ্যান্ড উইমেন স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাবিবা জামান, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাকোয়ার ল স্কুলের সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল ল-এর পরিচালক ও অধ্যাপক ড. শওকত আলম, যুক্তরাষ্ট্রের লিডস ইউনিভার্সিটির লিডস বিজনেস স্কুলের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুশফিক উদ্দিন, অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব সিডনির সিনিয়র প্রভাষক ড. সৈয়দা জাকিয়া হোসেন, নিউজিল্যান্ডের অটোগো ইউনিভার্সিটির সিনিয়র প্রভাষক ড. শ্যামল দাস, এ দেশের অকল্যান্ড ইনস্টিটিউট অব স্টাডিজের সিনিয়র প্রভাষক মোহাম্মদ এরশাদ আলী এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি শাইখ সিরাজ। অনুষ্ঠানটি টানা তিন ঘণ্টা চলে।

উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান অনুষ্ঠানে আরও বলেন, স্বাধীনতার পর দেশের শিক্ষা খাত নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে বেশ কয়েকটি বড় কাজ করতে হয়েছে। শিক্ষার ন্যাশনালাইজেশন, ডেমোক্রেটাইজেশন ও সেক্যুলারাইজেশন করতে হয়েছে তাকে। এ জন্য তিনি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন ও কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। এসব কাজ তার শিক্ষাভাবনা জানার একটি বড় প্যারামিটার। উপাচার্য জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে লন্ডনে ও ঢাকায় বড় ধরনের সমাগত করার পরিকল্পনা তাদের ছিল। তবে করোনা মহামারির কারণে জানুয়ারিতে ভার্চুয়ালি ছয়টি বড় আন্তর্জাতিকমানের সেমিনার করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব সেমিনার উদ্বোধন করবেন বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন।

আলোচনায় ড. আতিউর রহমানের উপস্থাপন করা মূল প্রবন্ধে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের পুরো রাজনৈতিক তৎপরতার মধ্যে সামগ্রিকভাবে শিক্ষাভাবনা সর্বদাই গুরুত্ব পেয়েছে। পরে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়ার পর জনগণের কল্যাণধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য নানামুখী উদ্যোগগুলোর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তথা নানামাত্রিক উচ্চশিক্ষার বিষয়গুলো গুরুত্বসহকারে স্থান পেয়েছে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা এবং মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার মাধ্যমেই তিনি বাঙালির শিক্ষা বঞ্চনার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারেন। তাই ১৯৭০ সালের ২৮ অক্টোবর জাতীয় নির্বাচনের প্রাক্কালে যে ভাষণটি দেন, তাতে বলেন- 'শিক্ষাই শ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ।' শিক্ষা যে অনেকাংশেই উপযুক্ত শিক্ষকের ওপর নির্ভর করে, সে কথাটি তিনি জানতেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি শিক্ষকদের খুবই শ্রদ্ধা করতেন। ১৯৭৪ সালের কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টে সব স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থা চালু, ভবিষ্যৎ কর্মসংশ্নিষ্ট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বৃত্তিমূলক শিক্ষায় আগ্রহ সৃষ্টি করতে এতে 'আয় করতে করতে শিক্ষা নিন' নামে একটি স্কিম চালুর প্রস্তাব করা হয়। উচ্চশিক্ষা যেন জীবনবিমুখ না হয়। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে তিনি শিক্ষকদের বিশেষ মর্যাদা দিয়ে প্রশাসনের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত ভঙ্গুর অর্থনীতির দেশে মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন পরিকল্পনায় তিনি শিক্ষকদের যুক্ত করেছিলেন। পরিকল্পনা কমিশনে ড. নূরুল ইসলাম, অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক আনিসুর রহমান, ড. মোশাররফ হোসেনসহ অসংখ্য শিক্ষক, প্রকৌশলী ও পেশাজীবীর সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। এই দৃষ্টান্ত মুজিব-পরবর্তী বাংলাদেশে আর তেমন দেখা যায়নি। শিক্ষা সচিব পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে। মন্ত্রিসভায় যোগদান করিয়েছিলেন অধ্যাপক মোজাফ্‌ফর আহমদ চৌধুরী ও ড. এ আর মল্লিককে। অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকেও শিক্ষা সচিব করার জন্য তিনি চেষ্টা করেছিলেন। শিক্ষা ও শিক্ষকের প্রতি তার ভালোবাসার কথা বলে শেষ করা মুশকিল।

মুখ্য আলোচক ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, সত্তর সালের নির্বাচনের আগে যে ইশতেহার দিয়েছিলেন জাতির পিতা, তাতেই তিনি শিক্ষায় বিনিয়োগ করার কথা বলেছিলেন। জাতি গঠনে শিক্ষাই হলো বেস্ট ইনভেস্টমেন্ট। নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনি সে সময়ে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় দেখভাল ও উন্নয়নে উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি ২৬ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ ও প্রায় দেড় লাখ শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করেছিলেন। আরও ১০ হাজার নতুন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ও প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক করেছিলেন। কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সর্বস্তরে শিক্ষার মাধ্যম হবে বাংলা। বাংলা একডেমি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন প্রতিষ্ঠা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই পথে চলেছেন। গত ১০ বছরে কোটি কোটি শিক্ষার্থীর মধ্যে কোটি কোটি পাঠ্যবই ছেপে বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে এ. কে. আজাদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে আসার কথা ছিল। সেদিন বঙ্গবন্ধুর উচ্চ শিক্ষাভাবনা তুলে ধরার কথা ছিল। আমরা দুর্ভাগা জাতি, সেদিন তার সে বক্তব্য আমাদের আর শোনা হয়নি। তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষা থাকার পরও দেশে বেকারত্ব বাড়ছে কেন। বাড়ছে কারণ, আমরা গুণগত মানের শিক্ষা দিতে পারছি না। সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষায় বরাদ্দ একেবারে কম নয়। তবুও যথাযথ শিক্ষা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন, প্রাথমিক শিক্ষা মানসম্মত করা না গেলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাও মানসম্মত হবে না। তিনি কারিগরি শিক্ষার ওপরে জোর দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু চাইতেন, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যেন শিক্ষা থেকে ঝরে না যায়। বঙ্গবন্ধুর সে ভাবনা থেকে আমরাও সরে আসিনি। ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন থেকে প্রতিবছর আমরা এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ ছাত্রছাত্রীকে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার বৃত্তি দিয়ে যাচ্ছি।

শেখ কবির হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ে শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। শিক্ষায় বিনিয়োগের আর যে কোনো বিকল্প নেই, তা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন। চারটি পুরোনো ও বড় বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্তশাসন দিয়েছিলেন।

শাইখ সিরাজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর কৃষিভাবনার সঙ্গে শিক্ষাভাবনাও প্রায় কাছাকাছি। তিনি সব সময় বলতেন, কৃষককে শিক্ষিত হতে হবে।

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top