নিজেদের সুবিধামতো আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে চীন

S M Ashraful Azom
0
নিজেদের সুবিধামতো আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে চীন


সেবা ডেস্ক: কৃত্রিমভাবে প্রকৃতির আবহাওয়া বদলে ফেলার কর্মকাণ্ড আগেই শুরু করেছে চীন। এবার সেই কর্মযজ্ঞের আরো বিস্তার ঘটাতে যাচ্ছে এশিয়ার প্রভাবশালী দেশটি। আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে জলবায়ু ও আবহাওয়া নিজেদের সুবিধামতো পরিবর্তনের সক্ষমতা অর্জন করতে এরইমধ্যে একটি পরিকল্পনাও হাতে নিয়েছে তারা।
সম্প্রতি চীনের মন্ত্রিসভার বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৫ লাখ বর্গ কিলোমিটার বা ২১ লাখ বর্গমাইল এলাকার আবহাওয়া বদলে দেবে চীন। ভূখণ্ড হিসেবে এ এলাকা ভারতের চেয়ে দেড় গুণ আর বাংলাদেশের প্রায় ৩৮ গুণ বড়।

চীনের স্টেট কাউন্সিলের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মধ্যে একটি উন্নত ওয়েদার মডিফিকেশন সিস্টেম গড়ে তুলতে চায় চীন। এর জন্য তাদের হাতে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি প্রস্তুত আছে বলেও জানিয়েছে স্টেট কাউন্সিল। বিশাল এ এলাকায় ইচ্ছেমতো বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটাতে পারবে চীন। ফলে কমে আসবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বাড়বে কৃষি উৎপাদন, সহজেই কমানো যাবে দাবানল, নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে উচ্চ তাপমাত্রা ও খরা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তনের পথে হাঁটছে চীন। ওয়েদার মডিফিকেশন সিস্টেমের এই কাজ বেশ কয়েক বছর ধরেই বেইজিং এগিয়ে নিচ্ছে। এর আগে ২০০৮ সালে চীন যে অলিম্পিকের আয়োজন করেছিল, তখনো তারা ‘ক্লাউড সিডিং’ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শহরের আকাশ পরিষ্কার করে। মেঘের মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে সিলভার আয়োডাইড মিশিয়ে প্রচুর বাষ্প তৈরি করে দ্রুত বৃষ্টি নামিয়ে আবহাওয়া পরিষ্কার রাখার পরীক্ষায় সফল হয় তারা।

মার্কিন একটি গবেষণায়ও দেখা গেছে যে, ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট এলাকার উষ্ণায়নও কমানো সম্ভব।

কিন্তু এর আগে কেউ চীনের মতো এত ব্যাপক পরিসরে ক্লাউড সিডিং করার কথা ভাবেওনি। চীন বলছে, পুরনো হাস্যকর পদ্ধতি তারা ব্যবহার করবে না। তাদের হাতে আছে স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তি।

বৃষ্টি সব সময়েই প্রকৃতির এক দান হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ মনুষ্যকূলের বৃষ্টির ওপরে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে এ বৃষ্টি এক সময় মানুষ নিয়ন্ত্রণ করবে। যখন চাইবে বৃষ্টি পাওয়া যাবে, আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে বিরক্ত? চাইলে সেটাও রোধ করা যাবে। আর সেটাই হল ক্লাউড সিডিং।

আকাশে ভেসে থাকা বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলোকে জোরপূর্বক মাটিতে নামিয়ে আনাই হল মূলত কৃত্রিম বৃষ্টিপাত। ১৯৪৬ সালে ভিনসেন্ট সেইফার সর্বপ্রথম কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের মূলনীতি আবিষ্কার করেন। এবং ওই বছরের ১৩ নভেম্বর আরেক নোবেলবিজয়ী বিজ্ঞানী ল্যাংমুরকে সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সফল হন।

মূলত রেফ্রিজারেটরের মূলনীতি ব্যবহার করেই কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানো হয়। বৃষ্টির অনুপযোগী মেঘগুলো বৃষ্টি হয়ে মাটিতে ঝরে পড়ার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত ঘনীভবন। আর এ ঘনীভবনে ব্যবহার করা ড্রাই আইস অথবা সিলভার আয়োডাইড। ড্রাই আইসের তাপমাত্রা মাইনাস-৭৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়ে থাকে।

ট্রপোস্ফিয়ার স্তরে ভেসে থাকা মেঘের উপর এ ড্রাই আইসের গুঁড়া ছড়িয়ে দিলেই সেটা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টি হয়ে মাটিতে পড়ে। ড্রাই আইস বিমানে বা রকেটে করে মেঘের উপর ছেড়ে দেয়া হয়। তবে বর্তমানে মিসাইল পদ্ধতি অধিক জনপ্রিয়।

বিশ্বের সব দেশ মিলিয়ে যতবার কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটিয়েছে, চীন একাই তার চেয়ে বেশি ঘটিয়েছে।

শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top