ফেলানী হত্যার ১০ বছর

S M Ashraful Azom
0
ফেলানী হত্যার ১০ বছর


ডা: জি এম ক্যাপ্টেন, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার দশ বছর। ২০১১ সালের এই দিনে ভারতীয় রক্ষী বাহিনী বিএসএফ-র গুলিতে নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হয় কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর রামখানা অনন্তপুর সীমান্তে ফেলানী। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘন্টা কাটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মৃত দেহ। গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত। পরে বিএসএফ এর বিশেষ কোর্টে দুই দফায় বিচারীক রায়ে খালাস দেয়া হয় অভিযুক্ত বি এস এফ সদস্য অমিয় ঘোষকে। এ রায় প্রত্যাক্ষান করে ভারতীয় মানবাধীকার সংগঠন মাসুম এর সহযোগিতায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্টে রীট আবেদন করে ফেলানীর পরিবার।

ঘটনার দিনটি ছিলো শুক্রবার। ভোর ৬টা ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত টপকে নিজ বাড়িতে ফেরার পথে  ভারতীয় বিএসএফ’র গুলিতে বিদ্ধ হয়ে আধাঘন্টা ধরে ছটফট করে নির্মমভাবে মৃত্যু হয় কিশোরী ফেলানীর। এর পর সকাল পৌনে ৭টার থেকে নিথর দেহ কাঁটাতাঁরের উপর ঝুলে থাকে দীর্ঘ সাড়ে ৪ ঘন্টা। এঘটনায় বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হলে ২০১৩ সালের ১৩ আগষ্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফ এর এ কোর্টে স্বাক্ষীদেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফ এর বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাক্ষান করে পুন:বিচারের দাবী জানায় ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পূর্ন:বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে স্বাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ০২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস¦ীকৃত আসামী অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রীম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানী শুরু হয়। ২০১৬ এবং ১৭ সালে কয়েক দফা শুনানী পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারী শুনানী দিন ধার্য হলেও শুনানী হয়নি । এরপর ২০১৯ এবং ২০২০ সালে কয়েকবার শুনানীর তারিখ ধার্য্য হলেও শেষ পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি আজও। 
এদিকে  মেয়ের হত্যাকারীর বিচার না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা-মা। ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম জানান, ফেলানী হত্যার বিচার চেয়ে অনেক ঘুরেছি, মানবাধীকার সংস্থাসহ বহু জনের কাছে গেছি, বিচার পেলাম না। ২০২০ সালের ১৮ মার্চ  করোনার পূর্বে শুনানীর তারিখ থাকলে তা হয়নি। ফেলানীর মা জাহানারা বেগম জানান, ফেলানী হত্যার দশ বছর হয়ে গেছে আজও  বিচার পাইনি। আমি দুই দেশের সরকারের কাছে সঠিক বিচার দাবী করছি।সীমান্তের অধিবাসীরা জানান, ফেলানী হত্যার বিচার হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হলে সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়ে যেত।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিটর এস এম আব্রাহাম লিংকন জানান, ভারতের সুপ্রিমকোর্টে ফেলানী হত্যার রীটটি কার্যতালিকার তিন নম্বরে ছিলো। কয়েকদফা শুনানীর তারিখ পিছিয়ে গেছে। বর্তমান কোভিট -১৯ এর জন্য ভার্চুয়াল কোর্ট চলছে। পরিস্থিতি ভালো হলে রীটটি শুনানী হবে। আশা করছি ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পাবে ।  

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম নুরু পরিবার নিয়ে থাকতেন ভারতে বঙ্গাইগাঁও গ্রামে। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হয় দেশের উদ্দেশ্যে। ৭জানুয়ারী ভোরে ফুলবাড়ির অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে কাঁটাতারের উপর মই বেয়ে আসার সময় বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের গুলিতে মর্মান্তিক মৃত্যু হয় ফেলানীর।


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top