আজ মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর ধানুয়া কামালপুর শত্রুমুক্ত দিবস

Seba Hot News
2
আজ মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর ধানুয়া কামালপুর শত্রুমুক্ত দিবস



নূরুজ্জামান খান: আজ ৪ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর ও হানাদার বাহিনীর শক্তিশালী ঘাঁটি কামালপুর দুর্গের পতন হয়। তাই এই বিশেষ দিনটিকে স্বরণ করে প্রতি বছরই স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা দিবসটি পালন করে আসছে।

তাই কামালপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে এবারও পালন করবে ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা। 

বকশীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সহযোগীতায় ও জামালপুর আঞ্চলিক কমিটির ব্যবস্থাপনায় ধানুয়া কামালপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপি বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন বৃহত্তর ময়মনসিংহ সমন্বয় পরিষদ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরাম। 

ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের বিশেষ দূত ও চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হক এমপি।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান এমপি, পরিকল্পনা বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও  জামালপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপি, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি মির্জা আজম এমপি ও জামালপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. মোজাফ্ফর হোসেন। 

এছাড়াও আজকের এই অনুষ্ঠানে, আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন, বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড এন্ড ইনস্টিটিউট ও আহবায়ক জামালপুর আঞ্চলিক উন্নয়ন কমিটির সি ও সি ই ও ডক্টর মোহাম্মদ জাফর উদ্দিন (সাবেক সিনিয়র সচিব), সাবেক সিনিয়র সচিব ও চেয়ারম্যান এসডিএফ এবং নির্বাহী সভাপতি বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের জনাব মোঃ আব্দুস সামাদ।

স্মৃতিচারণমূলক আলোচক হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কথা সাহিত্যিক হারুন হাবীব।

স্বাগত বক্তব্য রাখবেন অতিরিক্ত সচিব ডক্টর গাজী মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন


যেভাবে ৪ ডিসেম্বর মুক্ত হলো ১১ নম্বর সেক্টর ধানুয়া কামালপুর

ভারতের মেঘালয় রাজ্যের তুরা জেলার মহেন্দ্রগঞ্জ ও জামালপুর জেলার পাহাড় ঘেঁষা বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুরে হানাদার বাহিনী যুদ্ধের শুরু থেকেই শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তুলেছিল। 

উত্তর রণাঙ্গনের ১১ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রধান লক্ষ ছিল যে কোন মূল্যে এই ঘাঁটি দখল করা। 

এই যুদ্ধে কামালপুর রণাঙ্গনে হানাদার বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ৮ দফা সম্মুখ যুদ্ধ হয়। 

৩১ জুলাইয়ের আগে ধানুয়া কামালপুর রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন জেড ফোর্স । 

তৎকালীন ৩১ জুলাই সম্মুখ যুদ্ধে পাক বাহিনীর গুলিতে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীর উত্তম শাহাদাৎ বরণ করেন। 

ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ শহীদ হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধারা সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহেরের (পরে কর্নেল) পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীর ধানুয়া কামালপুর ঘাঁটি অবরোধ করেন। 

অবরোধের প্রথম দিনই কামালপুর মির্ধা পাড়া মোড়ে সম্মুখ যুদ্ধে মর্টার শেলের আঘাতে সেক্টর কমান্ডার মেজর আবু তাহের একটি পা হারান। পরে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব নেন উইং কমান্ডার হামিদুলস্নাহ খান বীরপ্রতীক। 

১০ দিন প্রচন্ড যুদ্ধের পর ৪ ডিসেম্বর সকাল ৮ টায় সেক্টর কমান্ডারের নিদের্শক্রমে বশির আহমেদ (বীরপ্রতীক) নিজের জীবন বাজি রেখে পাক ক্যাম্পে সারেন্ডার পত্র নিয়ে যাওয়ার পর সন্ধ্যা ৭টায় ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের গ্যারিসন কমান্ডার আহসান মালিক সহ ১৬২ জন হানাদার বাহিনীর সদস্য মিত্র বাহিনীর নিকট আত্মসমর্পণ করে। শত্রু মুক্ত হয় ধানুয়া কামালপুর। 

ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ (বীর উত্তম) , মুক্তিযোদ্ধা গাজী আহাদুজ্জামান, তসলিমসহ শহীদ হন ১৯৭ জন মুক্তিযোদ্ধা। 

গুলিবিদ্ধ হয়ে ক্যাপ্টেন হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম (সাবেকমন্ত্রী মেজর হাফিজ) সহ অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেন।

অন্যদিকে একজন ক্যাপ্টেনসহ হানাদার বাহিনীর ২২০ জন সৈন্য মারা যায় এ যুদ্ধে। 

ধানুয়া কামালপুর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ২৯ জনকে তাদের বীরত্বের জন্য বীর বিক্রম, বীরউত্তম ও বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। 

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের স্বরণে তৎকালীন বিডিআরের (বর্তমানে বিজিবি) নিজস্ব অর্থায়নে ধানুয়া কামালপুর স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।


শেয়ার করুন

-সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশে আপোষহীন
ট্যাগস

Post a Comment

2Comments

খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।

  1. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  2. চমৎকার লিখেছিলেন। সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।

    ReplyDelete
Post a Comment

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top