সেবা ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গবেষণালব্ধ জ্ঞানকে দেশে’র আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কীভাবে ব্যবহা’র করা যায় তা’র ওপ’র গুরুত্বারোপ করেছেন। মৌলিক গবেষণা’র পাশাপাশি প্রায়োগিক গবেষণাতেও জো’র দিয়ে দেশে’র অব্যবহৃত সম্পদকে গবেষণা’র মাধ্যমে মানুষে’র কাজে লাগানো’র আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, গবেষণা’র সঙ্গে সঙ্গে এ গবেষণালব্ধ জ্ঞান
আমাদে’র আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে
কীভাবে ব্যবহা’র করা যায় তা’র
ওপ’র আমরা জো’র দিচ্ছি।
মৌলিক গবেষণা’র পাশাপাশি প্রয়োগিক গবেষণা’র ওপ’রও জো’র দিতে হবে।
এ বিষয়ে যারা গবেষক তারা
নিশ্চয়ই কাজ ক’রবেন।
শেখ
হাসিনা বৃহস্পতিবা’র সকালে রাজধানী’র আগা’রগাঁওয়ে নবনির্মিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা
বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি গণভবন থেকে
ভিডিও কনফারেন্সে’র মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত
হন।
শেখ
হাসিনা বলেন, আমাদে’র দেশীয় অনেক অমূল্য সম্পদ
‘রয়ে গেছে, যা আমরা এখনও
ব্যবহা’র ক’রতে পারিনি বা ধরা-ছোঁয়া’র
বাইরে। সেগুলোও আমাদে’র খুঁজে বে’র ক’রতে হবে।
এ’র ওপ’র গবেষণা করে
সেগুলোও যাতে দেশে’র মানুষে’র
কাজে লাগানো যায়, সে বিষয়ে
আমাদে’র বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
স’রকা’রপ্রধান
বলেন, আমাদে’র স্বাস্থ্য, খাদ্য উৎপাদন, ইঞ্জিনিয়ারিং বা অবকাঠামো উন্নয়নে’র
প্রতিটি ক্ষেত্রেই গবেষণা প্রয়োজন। আসলে গবেষণা ছাড়া
উৎকর্ষ সাধন হয় না।
আ’র টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জন ক’রতে গেলে আমাদে’র গবেষণা
একান্তভাবে দ’রকা’র। সেজন্য সবাইকে গবেষণা’র দিকে একটু নজ’র
দেওয়া দ’রকা’র। আ’র বিশ্বে প্রযুক্তি
ব্যবহারে’র যে প্রভাব বেড়েছে,
সেই প্রযুক্তি’র সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে
গেলে আমাদে’রও গবেষণায় সবসময় নজ’র দিতে হবে।
বিজ্ঞান
ও উন্নত প্রযুক্তি’র এ যুগে যেসব
দেশ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে, তারাই অর্থনৈতিকভাবে দ্রুত উন্নতি ক’রছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আমাদে’র
স্বাস্থ্যখাতে’র গবেষণায় পিছিয়ে থাকা’র বিষয়টিও উল্লেখ করেন।
শেখ
হাসিনা বলেন, অন্যান্য গবেষণায় এগিয়ে গেলেও আমাদে’র দেশ স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণায়
পিছিয়ে ‘রয়েছে এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা
কম হচ্ছে। এজন্য চিকিৎসকদে’র অনেককেই রোগী’র সেবা’র প’র আ’র গবেষণায়
যুক্ত হতে না পারা’র
প্রসঙ্গও তিনি উল্লেখ করেন।
তা’র স’রকা’র স্বাস্থ্য বিষয়ে গবেষণা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী
জানান, জাতি’র পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবু’র ‘রহমান স্বাধীনতা’র প’র যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ
গড়ে তোলা’র সময়ই বিজ্ঞান শিক্ষা’র
প্রতি অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তথ্য আদান-প্রদান
ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’র মাধ্যমে বহির্বিশ্বে’র সঙ্গে বাংলাদেশে’র সংযোগ স্থাপনে তা’র স’রকারে’র সময়
অর্থাৎ ১৯৭৩ সালে’র ৫
সেপ্টেম্ব’র ইন্টা’রন্যাশনাল টেলি-কমিউনিকেশন ইউনিয়নে’র
সদস্য হয় বাংলাদেশ এবং
১৯৭৫ সালে’র ১৪ জুন বেতবুনিয়ায়
স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশনে’র উদ্বোধন
করেন তিনি। তা’র এসব পদক্ষেপ
আমাদে’র জন্য পথ প্রদর্শক
হিসেবে কাজ করেছে।
শেখ
হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ২১ বছ’র প’র
১৯৯৬ সালে স’রকারে এসে
তিনি দেখতে পান দেশে বিজ্ঞানে’র
শিক্ষার্থী যেমন কমেছে তেমনি
শিক্ষার্থীদে’র মধ্যে বিজ্ঞান শিক্ষা’র আগ্রহও কমে গেছে। তখন
তিনি সারাদেশে ১২টি বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা’র উদ্যোগ নেন।
বিজ্ঞান
শিক্ষা’র আগ্রহ কমা’র কা’রণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘৭৫
প’রবর্তী অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় আসা
স’রকা’রগুলো তাদে’র অবৈধ ক্ষমতা বৈধ
করা’র জন্য দুর্নীতি’র সঙ্গে
সম্পৃক্ত হয়ে যায় এবং
মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগীদে’র নিয়ে একটি এলিট
শ্রেণি গঠনে’র উদ্যোগ নেয়। মেধাবী শিক্ষার্থীদে’র
হাতে অর্থ ও অস্ত্র
তুলে দিয়ে তাদে’র ব্যবহা’র
করে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও অস্ত্রে’র ঝনঝনানি ছিল। তখন সাধা’রণ
জনগণে’র কী প্রয়োজন, সেদিকে
তাদে’র কোনো খেয়ালই ছিল
না। এমনকি ’৯১ প’রবর্তী বিএনপি
স’রকা’র বিনামূল্যে প্রযুক্তি ব্যবহারে’র জন্য আন্তর্জাতিক সাবমেরিন
কেবলে সংযুক্ত হবা’র সুযোগটা পর্যন্ত নিতে ব্যর্থ হয়
বলেও স’রকা’র প্রধান উল্লেখ করেন।
শেখ
হাসিনা বলেন, আমাদে’র দুর্ভাগ্য তখন বিএনপি স’রকারে
এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু
সে বলে দিল- এটা
করা যাবে না। এটা
ক’রলে বাংলাদেশে’র সব তথ্য বিদেশে
চলে যাবে। ফলে প্রযুক্তি শিক্ষা’র
মাধ্যমে আমাদে’র উন্নয়নে’র সম্ভাবনাকে তারা নষ্ট করে
দেয়।
তিনি
বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী
লীগ স’রকারে এসে এই খাতে’র
উন্নয়নে নতুন নীতিমালা গ্রহণ
করে। সফ্টওয়্যা’র, ডাটা-এন্ট্রি, ডাটা-প্রসেসিংয়ে’র উন্নয়নে আইটি-ভিলেজ এবং
হাইটেক-পার্ক গড়ে তোলা’র উদ্যোগ
নেয়। শুল্কমুক্ত কম্পিউটা’র, কম্পিউটা’র যন্ত্রাংশ এবং সফ্টওয়্যা’র আমদানি’র
অনুমোদন দেয় এবং কম্পিউটা’র
প্রশিক্ষণে’র উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু সে
সময় প্রায় ১০ হাজা’র স্কুলে
বিনামূল্যে কম্পিউটা’র প্রদানে তা’র স’রকারে’র উদ্যোগকেও
প’রবর্তী বিএনপি স’রকা’র ক্ষমতায় এসে নস্যাৎ করে।
আন্তর্জাতিক আদালতে ক্রয় চুক্তি ভঙ্গে’র
দায় দেশে’র অর্থে’র ক্ষতিপূ’রণ ও গুনতে হয়
তখন।
প্রধানমন্ত্রী
বলেন, প্রথমে প্রশিক্ষণে’র জন্য বিভিন্ন জায়গা
থেকে কম্পিউটা’র সংগ্রহে’র চেষ্টা’র প’র ১০ হাজা’র
স্কুলে ১০ হাজা’র কম্পিউটা’র
প্রদানে’র জন্য একটি প্রকল্প
গ্রহণ করি এবং কম্পিউটা’র
কেনা’র পদক্ষেপ নেই। উন্নয়ন সহযোগীরা
এগিয়ে আসে এবং স্কুলগুলো’র
একটি তালিকা করা হয়। অর্ধেক
মূল্যে নেদা’রল্যান্ডস স’রকা’র তাদে’র কোম্পানি’র কাছ থেকে কম্পিউটা’র
কেনা’র প্রস্তাব দিলে আমরা এ
ভাল প্রস্তাবে রাজি হয়ে সব
ধ’রনে’র পদক্ষেপ নেই। তাদে’র সঙ্গে
চুক্তিও হয়ে যায়।
তিনি
আরো বলেন, কিন্তু নেদা’রল্যান্ডসে’র যে কোম্পানি থেকে
কম্পিউটা’র নেয়া হচ্ছে তা’র
নাম ছিল নেদা’রল্যান্ডসে’র জাতীয় ফুলে’র
নামে ‘টিউলিপ’। তা’র ছোট
বোন শেখ রেহানা’র মেয়ে
ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকি’র
ও নাম ‘টিউলিপ’ হওয়ায়
চুক্তি সম্পাদনে’র প’র স’রকারে’র মেয়াদ
শেষ হয়ে গেলে, তা
বাতিল করে প’রবর্তী বিএনপি
স’রকা’র। কা’রণ আমাদে’র অতি জ্ঞানী তদানীন্তন
প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কেউ বোঝায়, শেখ
রেহানা’র মেয়ে’র নাম টিউলিপ, কাজেই
নেদা’রল্যান্ডসে’র সেই কোম্পানিটাও টিউলিপে’র।
এ কোম্পানি থেকে কম্পিউটা’র নেয়া
যাবে না এবং সেটা
বাতিল করে দেওয়া হয়।
শেখ
হাসিনা বলেন, এ হঠাৎ চুক্তি
বাতিলে’র ফলে নেদা’রল্যান্ডসে’র ঐ কোম্পানি
বাংলাদেশে’র বিরুদ্ধে মামলা করে। এ মামলা
মোকাবিলা ক’রতে আইনজীবী ঠিক করা হয়
এবং নানা কাজে অর্থ
ব্যয় করে। বাংলাদেশে’র সেখানে
ক্ষতিপূ’রণ দিতে হয় প্রায়
৬০ কোটি টাকা। ১০
হাজা’র কম্পিউটা’র তো গেলই, আরো
৬০ কোটি টাকা ক্ষতিপূ’রণ
দিতে হলো একটা দেশে’র
স’রকা’র প্রধানে’র সিদ্ধান্তে’র কা’রণে। আ’র এ ধ’রনে’র
স’রকা’র প্রধান থাকলে দেশে’র উন্নতি কীভাবে হবে, আপনারা নিজেরাই
বুঝে দেখেন।
টানা
তিনবা’র ক্ষমতায় থাকা’র ফলে হাতে সময়
পাওয়ায় তা’র স’রকারে’র প্রচেষ্টায়
বাংলাদেশে এখন ডিজিটাল ডিভাইস
তৈরি হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন,
ই-গভর্ন্যান্স প্রতিষ্ঠা এবং আইসিটি শিল্পে’র
বিকাশে গত ১৩ বছ’র
ধরে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আমরা
ক’রছি।
এসব
কাজে প্রধানমন্ত্রী’র ছেলে এবং তা’র
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়
সব ধ’রনে’র পরামর্শ এবং সহযোগিতা দিয়ে
যাচ্ছেন। দেশে’র মানুষে’র কল্যাণে ও শিক্ষায় জয়
অবৈতনিকভাবে কাজ করে যাচ্ছেন
বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় বিএনপি স’রকারে’র
সময় চিংড়ি মাছে লোহা ভরে
‘রফতানি করায় ইউরোপে চিংড়ি
‘রফতানি বন্ধ হয়ে যাওয়া’র
কথা স্ম’রণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তা’র
স’রকা’র ক্ষমতায় আসা’র প’র সেই ‘রফতানি
বাজা’র পুণরায় চালু’র কথাও উল্লেখ করেন।
বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি গবেষণা’র উন্নয়নে এবং দেশে যথাযথ
জ্ঞানসম্পন্ন বিজ্ঞানী-গবেষক সৃষ্টিতে ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’
বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাপ্রকাশ করেন
প্রধানমন্ত্রী।
শেখ
হাসিনা এ সময় বিশ্বব্যাপী
করোনা সংক্রমণ দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় দেশে’র
জনগণকে কঠো’রভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা’র আহ্বান
জানান। সবাইকে মাস্ক ব্যবহা’র এবং করোনা সংক্রমণ
নিয়ন্ত্রণে স’রকা’র আরোপিত ১১ দফা বিধিনিষেধ
কঠো’রভাবে পালনে’রও পরামর্শ দেন তিনি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানে’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরে’র মহাপরিচালক মুহাম্মাদ মুনী’র চৌধুরী স্বাগত বক্তৃতা করেন। এতে নবনির্মিত ‘জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স’এ’র ওপ’র একটি ভিডিও চিত্র ও প্রদর্শিত হয়।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।