নূরুজ্জামান খানা: পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শরণার্থী এখন বাংলাদেশে। যারা মিয়ানমার থেকে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে এ দেশে এসেছে জীবনের নিরাপত্তার জন্য। বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তাদের এ দেশে নিশ্চিন্ত জীবন দিয়েছেন। সব রকম নিরাপত্তা দিয়ে আগলে রেখেছেন। কিন্তু এর শেষ কোথায়? বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠীর নানা চাপে বর্তমান বাংলাদেশ শঙ্কিত, কারণ মিয়ানমারের কাছ থেকে কোনো কার্যকরী উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।
রোহিঙ্গা নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান সব সময়ই ইতিবাচক ছিল। এখনো আছে। মানবিক কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে। তবে দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে বহুমুখী সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। রোহিঙ্গারা সন্ত্রাস, মাদকসহ নানা রকম খারাপ কাজে জড়িয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা এইডসসহ নানা রোগেও আক্রান্ত; যা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। তাদের জন্য স্থানীয় জনগণ সবচেয়ে বেশি সমস্যার মধ্যে রয়েছে। বিশ্বের অনেক দেশ যখন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে ছিল; তখন বাংলাদেশ খাবার চিকিৎসা দিয়ে এসব রোহিঙ্গা নিয়ে মানবতার কাজ করে গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পুরো ঘটনার নিন্দা করলেও কার্যকর পদক্ষেপ বলতে যা বোঝায়, তা এখনো চোখে পড়েনি। অথচ দুই দফায় আমাদের দেশে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। এই লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে কত দিনে মিয়ানমার ফেরত নেবে এবং কত দিনে সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান হবে; তা প্রশ্নেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালালেও তার দৃশ্যমান খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিধর রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হচ্ছে। রোহিঙ্গা সংকট সমাধান না করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রেখে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে বলে মনে বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে বিশ্ব ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনীতি মানবতা ও নৈতিকতার অবস্থান এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। তাই আঞ্চলিক সংকট সমাধানে শক্তিধর রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। যা আগে কখনও দেখা যায়নি।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দাতা সংস্থাগুলো কোটি কোটি ডলার ঘোষণা করেছে। দাতা সংস্থাগুলো সম্মেলন করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে কোন কাজে আসবে না বলে মনে করেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। তবে রোহিঙ্গা মায়ানমারে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থানকালীন সহায়তার এই সম্মেলন হতে পারে। কিন্তু রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে এই সম্মেলন কোন ভূমিকা পালন করবে না। যখন না পর্যন্ত ভারত, চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের পররাষ্ট্র নীতিতে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে জোরালো ভূমিকা পালন না করবে।
এছাড়া রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরে বিষয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে নীতিবাচক প্রচারণা। তা মোকাবিলা করেই রোহিঙ্গাদের ভাষানচরে স্থানান্তরের কাজ শুরু পরামর্শ তাদের। অপরদিকে মায়ানমারের নির্বাচনের পর রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করেছে চীন। এটা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ কিন্তু খুব একটা আশার কথা নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যর্থতার কারণে রোহিঙ্গা সংকট সহসা সমাধান হচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। রোহিঙ্গা সংকটের শুধু বাংলাদেশের একার বিষয় নয়। এটা বিশ্ব রাজনীতি সঙ্গে জড়িত। বিগত এক দশকে বিশ্ব রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখানে মানবতা ও নৈতিকতার অবস্থান এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। আর আমাদের অবস্থার এমন দুইটি আঞ্চলিক শক্তির মাঝে। যারা এ বিষয় নিয়ে কোন ভূমিকা পালন করছে না। কারণ আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় মায়ানমারের প্রতিবেশী ভারত ও চীন দুটি শক্তিধর রাষ্ট্র। তারা এ বিষয়ে কোন দায়িত্ব পালন করছে না। অথচ তাদের এই বিষয়ে সমাধান করা উচিত।
ইউরোপ, জার্মানি ও ফ্রান্সের মাঝে যদি এ রকম কোন ঘটনা ঘটতো তাহলে তারা সবাই মিলে তা সমাধান করে ফেলতো। কিন্তু এই অঞ্চলের রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ব্যর্থতার কারণে সমাধান হচ্ছে না। এখানে বাংলাদেশের কোন ব্যর্থতা নেই। বাংলাদেশ যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেছে এবং করছে। ভূ-রাজনীতি বাংলাদেশ একটি গুরত্বপূর্ণ অবস্থানে আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থান এত বড় নয় যে এই সমস্যা ধারণ করতে পারবে। বিশ্ব ও আঞ্চলিক রাজনীতি বড় ধরনের এই পরিবর্তনের কারণে আঞ্চলিক কোন সংকট সমাধানে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো নির্লিপ্ততা লক্ষ্য করা গেছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ঠিক যে দায়িত্ব পালন করার কথা ছিল, মূলত তা করছে না।
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।