জাপার দুই পক্ষ মিলে গেল, আলাল-লেহাজ মুখোমুখি
🕧Published on:
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ১৫ মাস মতবিরোধ ও গ্রুপিংয়ের পর মুখোমুখি হয়েছেন জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের তুরাগ থানার দুই নেতা।
গত ৪ মার্চ ওই থানার সম্মেলনে দু'পক্ষের মধ্যে সমন্বয় করে নতুন কমিটি ঘোষণার পর গত রোববার (৬ মার্চ) রাতে প্রতিপক্ষ তুরাগ থানা শাখার নবনির্বাচিত সভাপতি আলাউদ্দিন আলালের বাসায় ফুলের মালা নিয়ে হাজির হন নবনির্বাচিত সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেহাজ উদ্দিন সরকার।
দুজনই মুখোমুখি হয়ে দুজনের গলায় মালা দেন।
এসময় দু'পক্ষের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কামারপাড়ার প্রভাবশালী নেতা লেহাজ উদ্দিনের আসার খবর জেনে শঙ্কায় ছিলেন অপরপক্ষ।
জানা গেছে, ২০১৮ সালে তুরাগ থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলনে পার্টির তৎকালিন মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের উপস্থিতিতে কমিটি করা হয়েছিল।
আলাউদ্দিন আলালকে সভাপতি, আক্কাস আলী মেম্বারকে সাধারণ সম্পাদক ও লেহাজ উদ্দিন সরকারকে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছিল।
তারা একসঙ্গে সাংগঠনিক কার্যক্রম ও দলীয় কর্মসূচি পালন করছিলেন। একপর্যায়ে হঠাৎই পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বনে যান আলাল।
ত্যাগী নেতাদের পদ মূল্যায়ন না করে আলালকে কেন্দ্রীয় সদস্য করায় ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তবুও অভিমানী কয়েকজন নেতাকে নিয়ে ২০২১ সালের শুরুতে আলালকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর প্রস্তুতি নেন উত্তরা কামারপাড়ার প্রভাবশালী নেতা লেহাজ উদ্দিন।
কেন্দ্রীয় পদ পাওয়া আলাউদ্দিন আলাল ক্ষোভের বিষয়টি জানতে পেরে ফুলেল শুভেচ্ছা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালে তুরাগ থানায় পার্টি দুইভাগে বিভক্ত হয়।
তুরাগ জাপার একটি দলীয় অফিস কামারপাড়া নতুন বাজারে। সেটি লেহাজ উদ্দিনের নিয়ন্ত্রণে। ভাড়াও তিনি দেন।
এরপর প্রায় ১৫ মাস ধরে আলাল ও লেহাজের দু'পক্ষই পৃথকভাবে দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচি পালন করছিলেন। চরম দ্বন্দ্বে কেউ কারো মুখোমুখি হননি। দু'জনই তুরাগ থানার প্রভাবশালী নেতা।
সবশেষ চলতি ২০২২ সালে মহানগরের নেতার কাছে তুরাগ থানার একটি আহবায়ক কমিটি প্রস্তাব করেন আলাল।
পৃথকভাবে আরেকটি আহবায়ক কমিটি জমা দেন লেহাজ। আলালের প্রস্তাবিত কমিটিতে লেহাজের পদ উল্লেখ ছিলনা।
তবে লেহাজের প্রস্তাবিত কমিটিতে আলালকে আহবায়ক ও লেহাজকে সদস্য সচিব উল্লেখ করে। তবে লেহাজের কমিটি অনুমোদন না হয়ে আলালের প্রস্তাবিত কমিটি অনুমোদন করা হয়।
আলাল আহবায়ক এবং আক্কাস আলীকে সদস্য সচিব করে।
এ কমিটির বিষয়ে লেহাজ উদ্দিনের ক্ষোভ এবং মৌখিক অভিযোগ থাকলেও তিনি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের সরব প্রচারণায় আসেন।
লেহাজ উদ্দিনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থিতা জানান দিয়ে উত্তরার প্রায় সবগুলো সড়কে ফেস্টুন সাঁটানো হয়।
৪ মার্চ উত্তরার ধউর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তুরাগ থানা জাতীয় পার্টির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
নেতাদের উপস্থিতিতে লেহাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী স্লোগান নিয়ে বিশাল একটি মিছিল সম্মেলনে যোগ দেয়।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদের এমপি, ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার আহবায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু, সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম আহবায়ক কাজী আবুল খায়ের, যুব সংহতির কেন্দ্রীয় আহবায়ক আসিফ শাহরিয়ার, জাপার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন সহ নেতারা।
সম্মেলনে আলাউদ্দিন আলালকে সভাপতি, ইব্রাহীম হোসাইনকে সাধারণ সম্পাদক ও লেহাজ উদ্দিন সরকারকে সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব জাহাঙ্গীর আলম পাঠান।
এ ঘোষণায় উপস্থিত লেহাজের কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। লেহাজ তাৎক্ষণিক সম্মেলনস্থল ত্যাগ করে তার অফিসে চলে যান। তাকে ফুল দিতে শতশত নেতাকর্মী তার অফিসে ফুল নিয়ে ছুটে আসেন।
তুরাগ থানা জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেহাজ উদ্দিন সরকার বলেন, ভাড়াটে লোক নিয়ে রাজনীতি করি না। আমি উত্তরা কামারপাড়ার স্থায়ী বাসিন্দা, স্থানীয়দের নিয়েই মাঠে আছি।
নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা হয়তোবা বাস্তবায়ন হয়নি। সিনিয়র নেতাদের নির্দেশনা মেনেছি, আমি সন্তুষ্ট। সংগঠনে গ্রুপিং করতে চাইনা। এজন্য নবনির্বাচিত সভাপতিকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছি।
এদিকে তুরাগ থানা জাতীয় পার্টির নবনির্বাচিত সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সদস্য আলাউদ্দিন আলাল বলেন, এই শুভেচ্ছার ছবি প্রকাশ করবেন না। পরিচিতি সভা করে সবাই একসঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করব।
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, আলাল এবং লেহাজ দু'জন একত্রিত হয়ে তুরাগ থানায় সংগঠনকে শক্তিশালী করবে প্রত্যাশা করি।
0comments
মন্তব্য করুন
খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।