মো: শাহ জামাল, জামালপুর সংবাদদাতা: জামালপুরে ঘাস মারা বিষের চাহিদা বাড়ছে। গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে এই বিষের অপব্যবহার। ক্ষেতে-খামারে-পুকুর-বিল-ঝিলে-হাওড়-বাওড়সহ প্রায় সর্বত্রই আগাছানাশকের অপব্যবহার দেখা যায়। ঘাস মারা এই বিষের নাম গøাইফোসেট। যার বাণিজ্যিক নাম রাউন্ডআপ।
![]() |
| ঘাস মারা বিষের ঝুঁকিতে স্বাস্থ্য-প্রকৃতি-পরিবেশ-জলজ প্রাণি-বন্ধু পোকা |
বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি বিভিন্ন নামে প্রায় অর্ধশত ঘাস মারা নামীয় বিষ বাজারজাত করছে।
নিত্যপণ্যের ন্যায় এটি হাট-বাজার ছাড়াও গ্রাম্য দোকানগুলোতেও অবাধে বিক্রি হয়। দ্রæত ক্ষেতের আগাছা বা জলাশয়ের কচুরি পানা কিংবা জলজ আগাছা নির্মূলে কৃষক এই জাতীয় ঘাস মারা বিষ প্রয়োগ করে থাকে। শ্রমিক সংকট এবং শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এই ঘাস মারা বিষ প্রয়োগে কৃষকের আস্থা থাকলেও, এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তারা বেমালুম। খোলা বাজারে কিছু নিষিদ্ধ কীটনাশক এবং ঘাস মারা বিষ বিক্রির ফলে কৃষক আরো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। এ ছাড়া কোন জমিতে কী ধরণের ছত্রাকনাশক বিষ প্রয়োগ করতে হয়, সেটাও কৃষকদের অজানা। ঘাস মারা বিষের অপপ্রয়োগের কুফল গোটা দেশেই দ্রæত ছড়িয়ে পড়েছে।
কৃষক হাবিবুর রহমান জানান-স্বল্প সময় ও কৃষকের অল্প খরচে আগাছা দমনে এই বিষ খুবই কার্যকরি। বিলের মধ্যে দুই বিঘা জমিতে কচুরিপানা বিনাশে ৬ শ’ টাকার বিষ প্রয়োগ করেছি। কামলা খরচ হতো প্রায় ৩ হাজার টাকা। এই বিষ প্রয়োগে মাছ কিংবা জলজ প্রাণির মৃত্যুসহ এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে তিনি অবগত নন।
এমন বহু কৃষকই অল্প খরচের হিসাব থেকেই ঘাস মারা বিষ প্রয়োগ করছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে কৃষকদের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধিকরণ; কৃষি বিভাগের পূর্ণ তদারকিসহ প্রতিকার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠেছে।
মেলান্দহ প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. সুকুমার রায় জানান-স্বল্প খরচ ও অল্প ব্যয়ে আগাছা দমন হলেও, এর বিষক্রিয়া পশু-পাখির জন্য হুমকি স্বরূপ। এই বিষ ক্রিয়া তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা যায় না। গবাদি পশুসহ পাখিকূলের মৃত্যুসহ শ্লো পয়জনিং ঝুঁকিও থাকে। জিহŸায় ঘা, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, বিকলাঙ্গসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। গাভীর দুধ, কিংবা জবাইকৃত পশুর গোস্ত ভক্ষণের ফলে মানুষের মাঝেও এর পাশর্^ প্রতিক্রিয়ায় জটিল রোগাক্রান্ত হতে পারে।
মৎস্য গবেষক আশিকুর রহমান জানান-জলাশয় কিংবা ক্ষেতে ঘাস মারা বিষ বা কীটনাশক প্রয়োগে মাছ, জলজ-কীট, বিশেষ করে মাছের খাদ্য জলজ উদ্ভিদ এমনকি পরিবেশেরও ক্ষতি করে। মাটির উর্বরা শক্তিসহ ভৌত গুণাগুণ নষ্ট করে। নেচারালি ঘাস থেকে খাদ্য ভোজি পাখিরাও খাবার সংকটে পড়ছে।
জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের গবেষণা সেলের পরিচালক, মাৎস্য বিজ্ঞানী ও জাপানের হিরোশিমা ইউনিভার্সিটি থেকে পোস্ট ডক ডিগ্রিধারী ড. মাহমুদুল হাসান জানান-শুধু ঘাস মারা বিষই নয়, পানিতে যেকোন রাসায়নিক দ্রব্যের বিক্রিয়ার ফলে অক্সিজেন দুষিত করে। এতে মাছের জীবন বিপন্ন হয়। প্রকৃতির বন্ধু জলজ উদ্ভিদ-প্রাণি, মাছের ডিম-পোনার ক্ষতি হয়। মাছের প্রজনন ক্ষমতাও হ্রাস পায়।
মৃত্তিকা বিজ্ঞানী কৃষিবিদ আবুল বাশার জানান-ফসলি জমি পরিস্কার রাখতে আগাছানাশক হারবিসাইড জাতীয় ঘাস মারা বিষ ব্যবহার করা হয়। এটা মাত্রাতিরিক্ত অপপ্রয়োগে মাটির নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারি ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। মাটির গঠন দুর্বল-শক্ত-অনুর্বর হয়। মাটিতে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশের ঘাটতি দেখা দেয়। এই বিষের উপাদান মাটি-পানি-বাতাসে মিশে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়। এর রাসায়নিক উপাদান পানির সাথে মিশে খাল-বিল-নদী এমনকি ভূগর্ভস্থ পানির সাথেও মিশে যায়। মাটির স্বাস্থ্য এবং অনুজীব ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি ও পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে। ফসলের বালাইনাশক বন্ধু কীটপতঙ্গ, প্রকৃতির লাঙ্গল কেঁচো, শামুক, ব্যাঙ জাতীয় প্রাণি বিলুপ্তি ঘটে। এতেই শেষনয়, এর প্রভাবে মানব দেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি, ত্বক, চর্ম, শ^াসকষ্ট, চোখের জ¦ালাপোড়া, ক্যান্সারসহ জটিল রোগাক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
মেলান্দহ কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান-ঘাস মারা বিষ প্রয়োগ আইনগতভাবে নিষিদ্ধ নয়। তবে প্রকৃতি-পরিবেশ, ফসল, মাটির ক্ষতিসহ বন্ধু পোকা নির্মূল হয়। এ জন্য কৃষকদের এই বিষ প্রয়োগে নিরুৎসাহিত করি।
মৎস্য আইন ও মৎস্য সম্পদ রক্ষা আইনে এর প্রতিকার কিংবা করণীয় বিষয়ে জামালপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আ.ন.ম. আশরাফুল কবীরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি জানান-আগাছা দমনে সরকারি ফার্মেও ঘাস মারা হার্বিসাইটড জাতীয় বিষ বা কীটনাশক ব্যবহারে এলার্ট জারি করা আছে। তিনি বেসরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাভূক্ত বিশেষ করে কৃষকদের এ বিষয়ে সচেতনতার উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
কৃষিবিদ ড. আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল জানিয়েছেন, ক্ষতিকারক কিছু কীটনাশক, ছত্রাকনাশক বা ঘাস মারা বিষের উপর নিষেধাজ্ঞা আছে। এখনো এই ধরণের বিষ বাজারজাত করা হচ্ছে। এগুলো দ্রæত বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। পাশাপাশি রাসায়নিকের উপর নির্ভরশীল না হয়ে; যান্ত্রিক উপকরণ ব্যবহার, বিষের ক্ষতিকারক দিক কৃষকের মাঝে তুলে ধরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কৃষি বিভাগের মনিটরিং-এর উপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
কৃষি- নিয়ে আরও পড়ুন

ইসলামপুরে ব্রহ্মপুত্র চরাঞ্চলে ক্রমেই বেড়ে উঠছে কৃষকের টাকার গাছ

বকশীগঞ্জে সবজির দাম আকাশচুম্বী, আগাম চাষে ঝুঁকছেন কৃষক

সীমান্তবর্তী এলাকায় পাহাড়ি শিমুল আলু চাষে কৃষকের সাফল্য

রৌমারীতে সার সংকটে বিপাকে কৃষকরা

গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ চাষে উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত


খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।