নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রতীক্ষার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর, বড়দিনে দেশের মাটিতে পা রাখতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
![]() |
| দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনের অবসান: ২৫ ডিসেম্বর দেশে ফিরছেন তারেক রহমান, ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ফখরুলের কঠোর হুঁশিয়ারি |
দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের ইতি টেনে তিনি ফিরছেন তাঁর জন্মভূমিতে। আজ শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টায় রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক পরপরই তারেক রহমানের দেশে ফেরার এই সংবাদ বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দের বন্যা বয়ে দিয়েছে। তবে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল কেবল এই আনন্দের সংবাদই দেননি, বরং সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন।
আরও পড়ুন:
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী ২৫ ডিসেম্বর ঢাকার মাটিতে এসে পৌঁছাবেন। এটি আমাদের দল এবং দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের জন্য এক অত্যন্ত আবেগের মুহূর্ত। দলের পক্ষ থেকে তাঁকে বীরোচিত স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।”
তারেক রহমান ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে (এক-এগারো) গ্রেপ্তার হন। কারাগারে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর ২০০৮ সালে জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেই থেকে তিনি লন্ডনেই অবস্থান করছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তিত হয়। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক মামলায় তাঁর সাজার রায় বাতিল হয় এবং আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি অব্যাহতি পান। সরকার থেকেও একাধিকবার জানানো হয়েছিল যে, তাঁর দেশে ফিরতে কোনো আইনি বাধা নেই।
তারেক রহমানের ফেরার বিষয়টি আরও ত্বরান্বিত হয়েছে তাঁর মা, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার চরম শারীরিক অবনতির কারণে। বর্তমানে বেগম খালেদা জিয়া এভারকেয়ার হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে লড়াই করছেন। এই কঠিন সময়ে মায়ের পাশে থাকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিলেন তারেক রহমান।
লন্ডন থেকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, “এমন সংকটকালে মায়ের স্নেহ-স্পর্শ পাওয়ার তীব্র আকাঙ্ক্ষা যেকোনো সন্তানের মতো আমারও রয়েছে। কিন্তু অন্য আর সবার মতো এটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমার একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ অবারিত ও একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়।” তিনি আরও উল্লেখ করেছিলেন যে, রাজনৈতিক বাস্তবতা অনুকূল হওয়া মাত্রই তিনি দেশে ফিরবেন। অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ উপস্থিত হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারেক রহমান দেশে ফিরে আসলে গণতন্ত্র উত্তরণের পথে থাকা সকল বাধা দূর হয়ে যাবে। তাঁর উপস্থিতি নেতাকর্মীদের মনোবল দ্বিগুণ করবে এবং একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করবে।” তিনি তারেক রহমানের নিরাপদ ও সুষ্ঠু প্রত্যাবর্তনের জন্য দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কেবল তারেক রহমানের ফেরার খবরই ছিল না, বরং সাম্প্রতিক কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির উদ্বেগের কথাও জানানো হয়। বিশেষ করে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান বিএনপি মহাসচিব।
মির্জা ফখরুল বলেন, “বিএনপি এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, একটি অপশক্তি দেশে নির্বাচন বানচাল করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত। তারা চায় না দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক।”
এছাড়া হাসপাতালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনার বিষয়েও কড়া প্রতিক্রিয়া জানান ফখরুল। তিনি বলেন, “মির্জা আব্বাস ঢাকা-৮ আসনের প্রার্থী এবং একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি মানবিক কারণে সহানুভূতি জানাতে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানে কিছু ষড়যন্ত্রকারী ও উশৃঙ্খল জনতা সমবেত হয়ে উত্তেজনামূলক স্লোগান দেয় এবং ‘মব’ (mob) পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করে।”
বিএনপি মহাসচিব হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “বিএনপি কোনো গোলযোগ বা সন্ত্রাস চায় না। আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। কিন্তু বিএনপির ওপর যদি কোনো আঘাত আসে বা আমাদের নেতাদের অসম্মান করার চেষ্টা করা হয়, তবে বিএনপি বসে থাকবে না। এর জবাব কীভাবে দিতে হয়, তা আমাদের জানা আছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে পরিস্থিতি সুখকর হবে না।”
পরিশেষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সকল মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মব জাস্টিস বা উশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করবেন না। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্যথায় গণতন্ত্রে উত্তরণের এই পথ ব্যাহত হবে।”
শুক্রবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান (ভার্চুয়ালি)। ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের তারিখ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে এক নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হলো। ২৫ ডিসেম্বরকে কেন্দ্র করে বিএনপি এখন ব্যাপক শোডাউন ও অভ্যর্থনার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
সূত্র: /সেবা হট নিউজ: সত্য প্রকাশ্যে আপোষহীন
রাজনীতি- নিয়ে আরও পড়ুন

তারেক রহমানের বার্তা: অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ দলীয় স্বার্থ নয়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা

ঢাকা-১৭ আসনে আন্দালিব রহমান পার্থের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে হিরো আলম

নাহিদ ইসলামের পিআর আন্দোলনকে 'রাজনৈতিক প্রতারণা' মন্তব্যের প্রতিবাদে জামায়াতে ইসলামী

জামালপুরে জামায়াতে ইসলামীর বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও জনগণের অধিকার রক্ষাই মূল লক্ষ্য



খবর/তথ্যের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, সেবা হট নিউজ এর দায়ভার কখনই নেবে না।