সরকারকে জালেম, অত্যাচারী ও দুর্নীতিবাজ আখ্যা দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের বিদায় করতে সবার দোয়া চেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রাজধানীতে এক ইফতারে অংশ নিয়ে তিনি উপস্থিত বিএনপিপন্থি পেশাজীবী নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “রমজানে সবাই দোয়া করবেন যাতে জালেমদের দ্রুত বিদায় হয়। জনগণের গণঅভ্যুত্থানে সরকারের বিদায় হয়।”
আজ রবিবার ইস্কাটনের লেডিস ক্লাবে বিএনপিপন্থি পেশাজীবী সংগঠন ডক্টর’স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত ইফতারে অংশ নিয়ে খালেদা এই দোয়া চান।
সাধারণত ইফতারের আগে খালেদা জিয়া বক্তব্য দেন। তবে ড্যাবের ইফতারে আসতে বিলম্ব হওয়ায় ইফতারের পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
এতে তিনি সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডেরও কড়া সমালোচনা করেন। কথা বলেন বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়েও।
খালেদা জিয়া বলেন, “দেশে গণতন্ত্র আজ নির্বাসিত। পদে পদে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নেই। প্রতিনিয়ত গুম, খুন ও নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আর এজন্য দায়ী জবর দখলকারী সরকার। তারা কোনো কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। এসব কাজে জড়িত সরকারের এমপি, তাদের পরিবারের সদস্যরা। এমনকি ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা জড়িত।”
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে এমন দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, “জিনিসপত্রের দাম অনেক। সাধারণ মানুষকে অনেক কষ্টে রোজা রাখতে হচ্ছে। সরকার বড় বড় বুলি আওড়ায় কিন্তু এদিকে তাদের কোনো নজর নেই। অথচ তারা বড় বড় প্রকল্পের নামে লুটপাট করছে।”
পুলিশের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “পুলিশ হলো জনগণের সেবক। কিছু পুলিশ চরম অত্যাচার, দুর্নীতির সঙ্গে লিপ্ত। তারা মানুষকে আটক করে টাকা চায়। না হলে ক্রসফায়ার দেয়ার হুমকি দেয়। পুলিশ এখন সরকারেরও উপরে। এদের হাত অনেক লম্বা হয়ে গেছে। তারা বলছে সরকারকে টিকিয়ে রেখেছি আমরা।”
খালেদা জিয়া বলেন, “আগে জানতাম আইনের হাত অনেক লম্বা। কিন্তু তার চেয়েও পুলিশের হাত লম্বা। এদের ওপর কারো নিয়ন্ত্রন নেই।”
সব প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ করা হয়েছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, “এখন চাকরির মাপকাঠি হলো দলীয় পরিচয়। অনেক দক্ষ চিকিৎসক আছেন যারা বিএনপি সমর্থন করায় তাদের চাকুরি থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বিচার বিভাগে দলীয়করণের কারণে বিরোধী দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার পায় না। দলীয় লোকদের বিচারক পদে বসানো হচ্ছে অথচ আওয়ামী লীগের লোকেরা খুন, লুটপাট করলেও তাদের ধরা হয় না, শাস্তি দেয়া হয় না।”
দেশে গণতন্ত্র, আইনের শাসন, সুশাসন নেই এমন দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, “বিএনপি দেশে সুশাসন, আইনের শাসন, মানবাধিকার ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আমরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবো।”
সংগঠনের সভাপতি ডা. একেএম আজিজুল হকের সভাপতিত্বে এতে আরো উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. আবদুল মাজেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের সাবেক আহ্বান রুহুল আমিন গাজী, বিএফইউজের সভাপতি শওকত মাহমুদ প্রমুখ।
এছাড়াও বিএনপি ও ২০ দলের শীর্ষ নেতারা এবং দেশবরেণ্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আসন সংকটের কারণে ড্যাবের ইফতারে চরম বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। মূলত চিকিৎসকদের ইফতার হলেও এতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী আসায় অনেক চিকিৎসক বসতে পারেননি। অনেকে রাগ করে ইফতার না করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেছেন।
হল রুমে প্রবেশ পথে কয়েকদফা হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। পুরো সময়জুড়ে মঞ্চ থেকে বারবার আয়োজনে ত্রুটির জন্য সবার কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়।