চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে তেলের ড্রামে তরল কোকেন পাচারের ঘটনায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিকের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে বলে দাবি করছে পুলিশ। এ ঘটনার নেপথ্য নায়কদের খুঁজে বের করতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ-সিএমপি। এ বিষয়ে আগামী দুয়েকদিনের মধ্যে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয়া হবে বলে সিএমপির দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সিএমপির একাধিক কর্মকর্তা ইত্তেফাককে জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে তেলের ড্রামে কোকেন আনার পেছনে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক মাদক পাচারকারী চক্র জড়িত থাকতে পারে। প্রথমবারের মত বাংলাদেশকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশে এই কোকেন পাচারের পরিকল্পনা ছিল ওই চক্রের। এ মামলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে বাংলাদেশে কোকেন পাঠানোর ঘটনায় বকুল মিয়া নামে একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। বকুল মিয়া ইংল্যান্ডে অবস্থান করে বাংলাদেশে কোকেন রপ্তানির কলকাঠি নেড়েছেন। তদন্তের স্বার্থে বকুল মিয়াকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এই চক্রে আরো যারা জড়িত রয়েছে, ইন্টারপোলের সহায়তা নিয়ে তাদের সকলকেই পর্যায়ক্রমে ধরা হবে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। এদিকে তেলের ড্রামে কোকেন আমদানির ঘটনায় ঢাকা থেকে গ্রেফতার হওয়া তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম মো. ফরিদ আলম গতকাল বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। এর আগে গত বুধবার রাতে এই তিনজনকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এরা হলেন—আতিকুর রহমান, একে আজাদ ও মোস্তফা কামাল।
চট্টগ্রাম বন্দরে তেলের ড্রামে কোকেন থাকার বিষয়টি নিজস্ব ল্যাবে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে চায় পুলিশও। এজন্য বন্দরের হেফাজতে থাকা ড্রামগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহের জন্য আদালতের কাছে আবেদন করা হবে বলে ইত্তেফাককে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিএমপির এসি (ডিবি) মো. কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে শুল্ক গোয়েন্দাদের পক্ষ থেকে তেলের ড্রামে কোকেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও মামলার প্রয়োজনে পুলিশের নিজস্ব উদ্যোগে আটক তরল পুনরায় পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষার মাধ্যমে কোকেনের পরিমাণ, উত্পাদনকারী দেশ, কোকেনের মূল্যসহ বিভিন্ন তথ্য নিশ্চিত হতে হবে।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের সিসিটি ইয়ার্ডে সূর্যমুখী তেল ঘোষণা দিয়ে আমদানি করা তরলের একটি কন্টেইনার আটক করা হয়। বলিভিয়া থেকে আমদানি করা এই কন্টেইনারটিতে ১০৭টি ড্রাম ছিল; যার প্রতিটির ওজন ১৮৫ কেজি। এসব ড্রামে তরল কোকেন রয়েছে, পুলিশের দেয়া এমন তথ্যের ভিত্তিতে কন্টেইনারটি আটক করে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। আটক কন্টেইনার থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার পর প্রাথমিকভাবে সেখানে কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলেও পরবর্তীতে উন্নত পরীক্ষার পর একটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হন শুল্ক গোয়েন্দারা। এ ঘটনায় ২৮ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানায় এসআই ওসমান গনি বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রাইম হ্যাচারির ম্যানেজার মো. গোলাম মোস্তফা সোহেলসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।