বাংলাদেশকে উঁচুতে ওঠাতে যা যা করার করব :প্রধানমন্ত্রী

S M Ashraful Azom
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হতে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। আগামী তিন বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে। আর এ জন্য যা যা দরকার, তার সবই করবে সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ কখনো নিম্নে থাকতে চায় না। সবসময় উঁচুতে উঠতে চায়। আর এ জন্য যা যা করণীয় আমরা তা করব। তিনি বাংলাদেশকে আরও উচ্চতর অবস্থানে নিতে সবাইকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
 
শেখ হাসিনা বলেন, যে যেখানে আছেন সেখানে প্রত্যেকে তার কর্মস্থলে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করেছেন বলেই ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ বলা হয়েছে।
 
প্রসঙ্গত, বুধবার বিশ্ব ব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মাথাপিছু আয়ের ভিত্তিতে তাদের সূচকে বাংলাদেশ ‘নিম্ন আয়ের দেশ’ থেকে এক ধাপ এগিয়ে ‘নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের’ কাতারে পৌঁছেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করার যে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে, বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে সেই কাতারে পৌঁছে গেছে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দেশকে আরও ওপরে দেখতে চান।
 
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতেই সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কক্সবাজার এলাকায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় সমবেদনা প্রকাশ করেন এবং বর্ষা মৌসুম শেষ হলে ওই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো মেরামতের আশ্বাস দেন।
 
কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, এ এয়ারপোর্টটাকে আমরা আন্তর্জাতিক মানের করতে চাই। কারণ, আমরা বিপুল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। সেই সমুদ্রসীমার নিরাপত্তা বিধানের জন্য প্রয়োজনে এ এয়ারপোর্টটিকে ব্যবহার করা হবে। ৫৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের পর কক্সবাজার বিমানবন্দর হবে দেশের চতুর্থ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এর অংশ হিসাবে বিমানবন্দরের বর্তমান ছয় হাজার ৭৭৫ ফুট রানওয়ে বাড়িয়ে করা হবে নয় হাজার ফুট। এছাড়া রানওয়ের প্রস্থ দেড়শ ফুট থেকে বাড়িয়ে করা হবে দু’শ ফুট। রাতে অবতরণ ও উড্ডয়নের সুবিধার জন্য এয়ারফিল্ড লাইটিং সিস্টেম বসানো হবে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়োজন হলে ভবিষ্যতে আরও সুপরিসর বিমান অবতরণ ও উড্ডয়নের জন্য এই রানওয়ের দৈর্ঘ্য সাড়ে দশ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য কক্সবাজারে  দেশীয় ও বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করা। ওই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, কক্সবাজারকে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে মহেশখালী বিদ্যুত্ প্রকল্প, এলএনজি টার্মিনালসহ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়াল গেজ রেল লাইন স্থাপনের কাজও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি বলেন, কক্সবাজারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ সুবিধা প্রদানে বাকখালি নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন কেন যে হয়নি তা জানি না। এখন সে ব্যবস্থা আমরা করে দেব। কক্সবাজার বিমানবন্দর প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মধ্যে ‘হাব হবে’ এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বিমানবন্দরটি হবে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি কেন্দ্র। কক্সবাজার বিমানবন্দরে রি-ফুয়েলিংয়ের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বিমানগুলো যখন যাতায়াত করবে, তখন শুধু পর্যটন নয়, রি-ফুয়েলের জন্যও বিমান নামতে পারবে। তিনি বলেন, বিবিআইএন (বাংলাদেশ-ভুটান-ভারত-নেপাল) সড়ক কানেকটিভিটি প্রতিষ্ঠার পর ট্রান্স-এশিয়া রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা হবে।
 
কক্সবাজারের প্রতি বিশেষ দুর্বলতার কথা জানিয়ে ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার কথাও স্মরণ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের ভাগ্যটাই এমন, আমাদের বাবা বেশিরভাগ সময় জেলেই থাকতেন। শীতকালে যখনই বাড়িতে থাকতেন, আমাদের কক্সবাজারে নিয়ে যেতেন।
 
ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে গণভবনে উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কক্সবাজার থেকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
 
ভুটানের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পানি বিদ্যুত্ প্রকল্প স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটানের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পানি বিদ্যুত্ প্রকল্প স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি গতকাল গণভবনে ভুটানের সফররত অর্থমন্ত্রী ল্যেনপো ন্যামগে দরজির সঙ্গে বৈঠককালে বলেন, অংশীদারিত্ব বিনিয়োগ কিংবা সরাসরি বিদ্যুত্ কেনার ভিত্তিতে এ ধরনের প্রকল্প নেয়া যায়। প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. আবুল কালাম আজাদ ও অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top