বৃষ্টিতে
ড্র হওয়া চট্টগ্রাম টেস্টে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল না পেলেও নিজেদের সামর্থ্যের
প্রমাণ দিতে পেরেছে বাংলাদেশ দল। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে দারুণ
পারফরম্যান্সের সুবাদে পাওয়া এই আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগাতে পারলে ঢাকা
টেস্টেও সম্ভব দারুণ কিছু করার। সোমবার মিরপুরে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের
প্রথম অনুশীলন সেশন শেষে দলের পক্ষে এমনটাই জানালেন ইমরুল কায়েস।
র্যাঙ্কিং,
শক্তিমত্তা কিংবা অভিজ্ঞতায় দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে অনেকটাই পেছনে বাংলাদেশ।
বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে এখনো নিজেদের সেরা অবস্থায় পৌঁছাতে পারেনি বাংলাদেশ
দল। নেতিবাচক এসব তথ্যের বিপরীতে বাংলাদেশ লড়তে পারে কেবল একটি হাতিয়ার
দিয়ে, আত্মবিশ্বাস। নিজেদের সামর্থ্যে পরিপূর্ণ আস্থাভাজন হলে যে কোন
প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলেই মনে করছেন
ইমরুল।
জাতীয়
দলের এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সোমবার সংবাদ সম্মেলনে বার বার বললেন সে
কথাই, ‘আমি আগেও বলেছি আমরা যদি ড্র করতে পারি সেটা বড় একটা অর্জন হবে
আমাদের। চট্টগ্রাম টেস্টে ব্যাটিং-বোলিং এবং ফিল্ডিংয়ে আমরা ইতিবাচক
ক্রিকেট খেলেছি। ভাগ্য কিছুটা বিরূপ ছিল, বৃষ্টি হয়েছিল। তারপরও আমরাই
ইতিবাচক খেলেছি। আমরা যদি ওই আত্মবিশ্বাস রাখি এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে
পারি ধরে তাহলে ঢাকা টেস্টে আগের মতোই এগুতে পারবো।’
চট্টগ্রামে
প্রথম টেস্টে উইকেট বাংলাদেশের পক্ষেই আচরণ করেছিল। মুস্তাফিজুর
রহমান-জুবায়ের হোসেনদের দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি প্রোটিয়াদের প্রথম ইনিংসে
আড়াইশোর মধ্যে বেঁধে ফেলতে সহায়তা করেছে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের
মন্থরগতির উইকেট।
মিরপুরের
উইকেটও বাংলাদেশের বোলারদের সহায়তা করবে বলেই বিশ্বাস ইমরুলের। তাছাড়া
উইকেট দেখেই চূড়ান্ত একাদশ নির্বাচন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে
বলা কঠিন আমরা এভাবে খেলবো, ওভাবে খেলবো। উইকেট দেখে পরিকল্পনা করতে হয়।
চট্টগ্রামের উইকেট এক রকম ঢাকার উইকেট এক রকম। সবকিছু করছে উইকেটের
কন্ডিশনের উপর।’
তবে
সফরকারিরাও যে নিজেদের সেরা ফর্মে ফিরতে মুখিয়ে আছে, ইমরুল মনে করিয়ে
দিলেন সেটাও। তাদের কাছ থেকে একটু ঢিলেমি আশা করাও বোকামি হবে ইঙ্গিত করে
তামিম ইকবালের এই উদ্বোধনী সঙ্গী বলেন, ‘ওরা ওয়ানডে সিরিজ হারার পর থেকেই
জয়ের জন্য ক্ষুধার্ত। আমরা খেলছি বিশ্বের এক নম্বর দলের সঙ্গে। এরা বাজে বল
কম করে, ভালো জায়গায় বল করে। চট্টগ্রামের উইকেট এমন ছিল, আপনি উইকেটে
থাকতে পারবেন কিন্তু শটস খেলতে পারবেন না। ওপেনার হিসেবে চেষ্টা করি আমরা
যতক্ষণ সম্ভব উইকেটে থাকার। আমরা বেশিক্ষণ উইকেটে থাকলে পরের
ব্যাটসম্যানদের জন্য খেলা সহজ হয়ে যায়। এবং তারা আরামে রান করতে পারে। এটাই
ওপেনারদের মূল পরিকল্পনা থাকে।’
আবহাওয়ার
পূর্বাভাস অনুযায়ী ঢাকা টেস্টেও হানা দিতে পারে বৃষ্টি। গত কয়েক দিনের
টানা বৃষ্টিও বলছে সে কথাই। প্রথম টেস্টের পর, অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম
জানিয়েছিলেন ম্যাচের ফলাফলে নিজেদের আক্ষেপের কথা। এবার ঢাকা টেস্টেও সেই
শঙ্কা। তবে ইমরুল জানালেন এত তাড়াতাড়ি অতসব চিন্তা মাথায় আনছেন না কেউ। আগে
খেলতে চান নিজেদের সেরা খেলাটা, ‘ফলাফল পরের ব্যাপার। ওদের সাথে ভালো করলে
অন্য দলগুলোর বিপক্ষে কাজে লাগবে।’
এদিকে,
প্রথম টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বলে মানা হচ্ছে লিটন দাসের
ব্যাটিংকে। মুশফিকের বদলে ইদানীং প্রায় প্রতি ম্যাচেই উইকেটের পেছনে
দাঁড়ানো লিটনের ব্যাটিংয়ের ধরণ টেস্টের সাথে কতটা মানানসই হবে ছিল সেই
শঙ্কা। তবে লিটনের সময়োপযোগী এক অর্ধশতক প্রমাণ করে, দলের প্রয়োজনে নিজেকে
পাল্টে নেয়ার ক্ষমতা আছে তার। লিটন তো বটেই দলের সবাইকে নিজের ইচ্ছামতো
খেলার স্বাধীনতা কোচ চান্দিকা হাতুরুসিংহে দিচ্ছেন বলে জানালেন ইমরুল, ‘কোচ
অবশ্যই সহায়তা করেন। প্রত্যেক খেলোয়াড়কে তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন। শটস
খেলার ব্যাপারে বাধা নাই। এটা আমার কাছে খুব ভালো লাগে। কোনা বাধ্যবাধকতা
নাই, তুমি তোমার মতো খেল। লিটন খুব ভালো খেলোয়াড়। আমি মনে করি ওর উজ্জ্বল
ভবিষ্যৎ আছে। যেভাবে ও ব্যাট করে এটা চালিয়ে যেতে পারলে ও অনেক উপরের
পর্যায়ে খেলবে।’