চট্টগ্রামে নদী ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

S M Ashraful Azom
চট্টগ্রামে নদী ভাঙন ও বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়ে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। গ্রামে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণে বর্ষাকালে পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকায় পানি উপচে পড়ে কাঁচা রাস্তা ভেঙে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীকে। অন্যদিকে পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙনে শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজে গাফিলতির কারণে সম্প্রতি বন্যায় অনেকেই বসতভিটা হারিয়েছেন। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও ভাঙন প্রতিরোধক কাজ ফেলে রাখা হয়েছে।
 
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে প্রায় ২৫ কিলোমিটার নদী ভাঙন কবলিত এলাকা রয়েছে। এসবের মধ্যে ৩/৪টি এলাকায় ভাঙন প্রতিরোধে কাজ চলছে। গত তিন বছর যাবত্ চট্টগ্রামে বড় ধরনের কোন বন্যা হয়নি। ফলে নদী ভাঙনও কম ছিল। সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে ব্যাপক নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদী ভাঙনে বসতভিটা বিলীন হয়ে যাওয়ায় শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। বর্ষণ অব্যাহত থাকলে নদী ভাঙনে আরো অনেক বসতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে ভাঙন কবলিত এলাকায় শতশত পরিবার বসতভিটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।
 
সূত্র আরো জানায়, চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে সাতকানিয়া উপজেলার ডলু খাল, আমিলাইশ, চরতি ইউনিয়নের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা, দ্বীপ চরতি, তুলাতলী, চন্দনাইশ উপজেলার চরবরমা, বৈলতলী,   খাগরিয়া, বাঁশখালী উপজেলার পুকুরিয়া, বুরুমচড়াসহ রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় নদী ভাঙন কবলিত এলাকা রয়েছে। এসব এলাকায় বছরের পর নদী ভাঙনে মানুষ একাধিকবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদী ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না থাকায় অসংখ্য মানুষ গ্রাম ছাড়া হয়ে জেলার পাহাড়ি এলাকা ও সুবিধামত স্থানে বসতি গড়ে তুলেছে।
 
চট্টগ্রাম জেলার কয়েকটি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাজে ধীরগতি এবং কাজ ফেলে রাখায় অনেক ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নের উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য নূরুল আমিন জানান, সম্প্রতি পাহাড়ি ঢলে নদী ভাঙনে অন্তত ২০টি বসতঘর, ১টি মসজিদ নদীতে ভেঙে গেছে। আরো দুইটি মসজিদ, ১টি মাদ্রাসা ও শতাধিক বসতঘর নদী ভাঙনে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। নদী ভাঙনের ৫ থেকে ১০ গজের মধ্যে এসব স্থাপনার অবস্থান। তিনি জানান, এই গ্রামে ৭০ মিটার নদী ভাঙন এলাকায় প্রতিরোধক স্থাপনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড কয়েকশত ব্লক ও বালির বস্তা নির্মাণ করে গত দুই বছর যাবত্ ফেলে রেখেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে না। ব্লকগুলো নষ্ট ও চুরি হয়ে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোন মাথা ব্যথা নেই। ব্লকগুলো যথাসময়ে বসানো হলে সম্প্রতি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর বসতভিটা রক্ষা পেতো।
 
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী বিদ্যুত্ কুমার সাহা ইত্তেফাককে বলেন, ‘উত্তর ব্রাহ্মণডেঙ্গা নদী ভাঙন প্রতিরোধ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে; কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ঠিকাদাররা কাজ ফেলে রেখেছে। ঠিকাদার ইচ্ছে করেই কাজ করছে না। নির্মিত ব্লকগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে।’
 
এদিকে শহরের মতো গ্রামেও ভারী বর্ষণে পানি আটকা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। অপরিকল্পিত রাস্তা ও বাড়ী-ঘর নির্মাণের কারণে পানি আটকা পড়ছে। রাস্তা নির্মাণের সময় পানি নিষ্কাশনে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা হয়নি। সাধারণত এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও সরকারিভাবে টিআর কাবিখার বরাদ্দের মাধ্যমে গ্রামের রাস্তাগুলো নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে এলজিইডি শুধু সরকার অনুমোদিত রাস্তাগুলোর উন্নয়ন কাজ করে থাকে।
 
এ ব্যাপারে এলজিইডি চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাছান আলী ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা প্ল্যানিং অনুসারে রাস্তার উন্নয়ন কাজ করি। পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো রাখা হয়। তবে জেলা পরিষদ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও উপজেলা প্রশাসনের টিআর-কাবিখার বরাদ্দের টাকায় নির্মিত রাস্তাগুলো অনেক ক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে করা হয়। ফলে বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি আটকা পড়ে জনদুর্ভোগ বাড়ে।’

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top