দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপিতে মতভিন্নতা

S M Ashraful Azom
দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপিতে ভিন্নমত দেখা দিয়েছে। দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে কোন কোন দায়িত্বশীল নেতার মতের অমিল সৃষ্টি হয়েছে। এই নেতারা বলে আসছেন যে নিরপেক্ষ থাকার শর্ত মানলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই নির্বাচনে রাজি তারা। এজন্য নেতারা সরকারের কাছ থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারান্টি, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার পূর্ণ বাস্তবায়ন চাচ্ছেন।
 
তবে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে বিএনপির অতীতের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি বলে গত শনিবার জানিয়েছেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, শেখ হাসিনার অধীনে নয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে।  সেই নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।
 
শনিবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতৃবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। এর এক সপ্তাহ আগে গত ২৫ জুলাই রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আইনজীবী নেতাদের সাথে মতবিনিময় কালে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘আগামী নির্বাচন তত্ত্ববাবধায়ক সরকারের অধীনেই হতে হবে এমন নয়। যে নামেই হোক না কেন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে।’
 
দলের একজন সিনিয়র নেতা মনে করেন,খালেদা জিয়ার বক্তব্যটি’কৌশলগত’। এ মুহূর্তে হুট করে নির্দলীয় বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে আসা দলের জন্য বিব্রতকর হবে। কারণ তখন প্রশ্ন দেখা দেবে, তাহলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে কেন বিএনপি গেল না, দুই দফা কেন আন্দোলন করলো। এটি বিএনপির জন্য এক ধরনের রাজনৈতিক পরাজয়ও হবে। কিন্তু এখন যেভাবে চলছে তা দীর্ঘস্থায়ী হলে তাতে দলের অবস্থা কী হবে তা নিয়েও দুঃশ্চিন্তা আছে।
 
দলীয় প্রধানের ২৫ জুলাইয়ের বক্তব্যের পর দলের নেতারা ’শর্তসাপেক্ষে’ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে কথা বলতে শুরু করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে বহাল রেখে নির্বাচন হলেও আপত্তি নেই। তবে নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই স্বরাষ্ট্র, তথ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে দূরে থাকতে হবে। বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনবেন না এমন গ্রহণযোগ্য কাউকে এই তিন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। তিনি বলেন, দলের বৈঠকে আমি আমার এই মতামত তুলে ধরবো।
 
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সরকার আলোচনায় রাজী থাকলে বিএনপি নির্দলীয় সরকারের ফমূর্লা দেবে।
 
বিএনপির ’থিঙ্কট্যাঙ্ক খ্যাত’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ও শত নাগরিক কমিটির প্রধান ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বর্তমান সরকার প্রধান বা রাষ্ট্রপতি স্বপদে থাকলেও নির্বাচনে বিএনপির আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে এজন্য বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ সরকারকেই নিতে হবে। তবে এমন পরিবেশ তৈরির জন্য সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই ব্যাপারে চূড়ান্ত সমঝোতার দরকার।
 
ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মতে, নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাচন পরিচালনার সঙ্গে জড়িত আইনশৃংখলাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের হতে হবে নিরপেক্ষ। মেয়াদ শেষে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচনকালীন সরকারে বর্তমান রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীকে স্বপদে রেখেই একটি সরকার গঠিত হবে। শর্ত চারটি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হলে নির্বাচনে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি থাকবে বলে আমার মনে হয় না ।
 
গত শনিবার বেগম জিয়ার বক্তব্যে- নির্দলীয় সরকারের দাবি থেকে সরে না আসার ঘোষণার পর গতকাল এক সাংবাদিক সম্মেলনের দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও মুখপাত্র  ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘বিএনপি মধ্যবর্তী নির্বাচন না, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নতুন নির্বাচন দাবি করে আসছে।’ নির্বাচনের প্রস্ততি সম্পর্কে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আগে নির্বাচনের সম্ভাবনা আসুক। এখনওতো এসব কল্পনা। নির্বাচন যখন আসবে তখন দেখা যাবে আমরা প্রস্তুত কিনা।’
 
এদিকে বিএনপির এই অবস্থান সম্পর্কে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার সঙ্গে আলাপকালে তারা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা ব্যক্ত করে বলেন, বর্তমান সংবিধানের আওতায় প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সমঝোতা চায় বিএনপি। তবে ’নিরপেক্ষ সরকারের’ অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি থেকে এখনই সরে আসতে নারাজ তারা এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ দাবিতে অনড় থাকতে চায় দলটি। শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে নির্বাচন করতে হলে শর্তসাপেক্ষে বিএনপি রাজি হবে। শর্তগুলো এখন প্রকাশ করতে চায় না বিএনপি। সমঝোতার আলোচনা এগুলে তখন শর্তগুলো সামনে আনা হবে।
ট্যাগস

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top