মুস্তাফিজে গর্বিত সতীর্থরা

Seba Hot News
সেবা ডেস্ক:  এমনিতে ফেসবুক ট্রল তাঁর খুব পছন্দের নয়। তবু গত পরশু রাতের একটি ভীষণ মনে ধরে গেছে সৌম্য সরকারের। কী সেটি? শুনে নিন তাঁর মুখ থেকেই, ‘দাতা হাতেম তাই আর কৃপণ তাই।’
দানশীল আর কিপটে নিয়ে বাংলাদেশ দলের এ তরুণ ব্যাটসম্যানের মেতে ওঠার কারণ তাঁর এক সতীর্থই। তিনি মুস্তাফিজুর রহমান। মঙ্গলবার রাতে বেঙ্গালুরুর চিন্নাসোয়ামী স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের এ বাঁহাতি বোলিং-বিস্ময় নিজের আইপিএল অভিষেকে এমন আলো ছড়িয়েছেন যে তাতে মাতোয়ারা না হয়ে উপায়ও নেই। বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স যেখানে তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বোলারদের যাচ্ছেতাই পিটিয়ে দেদার রান তুলেছে, সেখানে মুস্তাফিজ ছিলেন একমাত্র ব্যতিক্রম। বিরাট কোহলির দল নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে হারিয়ে ২২৭ রান তুললেও নিজের ৪ ওভারে মাত্র ২৬ রান খরচায় ২ উইকেট তুলে নিয়ে অভিষেক রাঙিয়েছেন মুস্তাফিজ। এমন বোলিংয়ের পরই ফেসবুকে ওই ‘ট্রল’ একের পর এক শেয়ার হতে থাকে। সেটি চোখে পড়তেই সৌম্যও এমন অভিভূত যে গতকাল দুপুরে মিরপুরের ইনডোরে ব্যাটিং অনুশীলনে নামার আগেও তার রেশ, ‘ট্রলটা একেবারেই আক্ষরিক হয়েছে। মুস্তাফিজ রান দেওয়ায় খুব কিপটেমি করেছে। ওর দলের অন্য বোলাররা যেখানে মার খেয়ে ভূত হয়ে গেল, সেখানে ওকে বুঝেশুনেই খেলতে হলো বেঙ্গালুরুর ব্যাটসম্যানদের।’
আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর থেকে যেকোনো প্রতিপক্ষের কাছে যেমন, তেমনি আইপিএলেও মুস্তাফিজের ‘কাটার’ দুর্বোধ্যই হয়ে থাকল। যদিও ছোট্ট ক্যারিয়ারে টি-টোয়েন্টি তিনি খেলেছেন খুব কমই। গত বছর পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়েই তাঁর আন্তর্জাতিক অভিষেক যদিও, তবে একই ফরম্যাটে তাঁর ফিরতে ফিরতে দেশের মাটিতে এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চের এশিয়া কাপ। প্রথম তিন ম্যাচ খেলেই ইনজুরিতে ছিটকে পড়া মুস্তাফিজ ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গিয়েও বাইরে বসে থেকেছেন চার-চারটি ম্যাচ। এই বেঙ্গালুরুতেই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ দিয়ে তাঁর ফেরা। সেই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের ভোগানো এ বাঁহাতি পেসার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কলকাতায় সদ্যসমাপ্ত বিশ্বকাপের সেরা বোলিংও করেছেন। ২২ রানে ৫ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজকে আইপিএল অভিষেকেও আলো ছড়াতে দেখে শাহরিয়ার নাফীস একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেই গেলেন। ২০০৬-এর এপ্রিলে ফতুল্লা টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৮ রানের ইনিংস খেলা বাঁহাতি ওপেনার বলে দিলেন, ‘অল্প ম্যাচ খেললেও আমি বলব এই মুহূর্তে মুস্তাফিজই বিশ্বের সেরা টি-টোয়েন্টি বোলার। একটুও বাড়িয়ে বলছি না, বোলিং চাতুরীতে আমি ওর ধারেকাছে কাউকে আপাতত দেখছি না।’
আইপিএলে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই মুস্তাফিজ যা দেখালেন, তাতে যেন গর্বে বুকের ছাতি ফুলে উঠল মাহমুদ উল্লাহরও। মিরপুরের একাডেমি মাঠে ঢাকার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে শেখ জামাল ধানমণ্ডির অনুশীলনে যোগ দিতে এসে বলছিলেন, ‘যা চাচ্ছিলাম, মুস্তাফিজ ঠিক তা-ই করেছে। চাচ্ছিলাম ও এমন কিছু করুক যাতে আমাদের ক্রিকেটের বিজ্ঞাপনটা হয়। সতীর্থের এমন পারফরম্যান্সে আমি নিজেও খুব গর্ববোধ করছি।’ তবে সতীর্থরাই শুধু নন, মুস্তাফিজের পারফরম্যান্সে উচ্ছ্বসিতদের দলে আছেন নির্বাচক হাবিবুল বাশারও, ‘‘ও বরাবরই ‘স্মার্ট’ বোলার। আইপিএলেও নিজের সেই ‘স্মার্টনেস’ ধরে রেখে বোলিং করল। মুগ্ধ না হয়ে কোনো উপায় নেই।’’
বাংলাদেশের সফলতম ওয়ানডে বোলার আব্দুর রাজ্জাকও পরশু রাতে বুঁদ হয়ে দেখেছেন মুস্তাফিজের বোলিং। এ বাঁহাতি স্পিনার নিজেও আইপিএলে খেলেছেন। খেলেছেন মুস্তাফিজের দলের অন্য বোলারদের কচুকাটা করা সেই বেঙ্গালুরু রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্সের হয়েই। নিজের পারফরম্যান্স ভুলে যাওয়ার মতো হলেও মুস্তাফিজের ‘স্মরণীয়’ পারফরম্যান্সের এই দিকটিও রাজ্জাককে খুব টানছে, ‘জানতাম যে কিছুই ওকে নার্ভাস করতে পারবে না। পারেওনি। অন্য যেকোনো বোলার তাঁর প্রথম ম্যাচে যদি গেইল, কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স এবং শেন ওয়াটসনদের পর পর পেত, ভড়কে যেত নিশ্চিত। বড় কোনো নাম নিয়ে যে মুস্তাফিজ একটুও ভাবিত নয়, ওর পারফরম্যান্সই এর সাক্ষ্য-প্রমাণ দিয়ে দিচ্ছে।’ তাই হায়দরাবাদের একাদশে এখন থেকে মুস্তাফিজের নামটি নিয়মিত লেখা হতে বাধ্য!

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top