রুমি টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে, স্বপ্ন শিক্ষক হবার :পাশে থাকবে হাসিমুখ ফাউন্ডেশন

S M Ashraful Azom
শিব্বির আহমদ রানা, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিননিধি: ইসমত আরা রুমি। অভাব যাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। যে মেয়ের দু বেলা ভাত জুটেনি, ভর পেটে স্কুলে যেতে পারেনি সেই রুমি সব বাধাকে ডিঙ্গিয়ে পেয়েছে টেলেন্টপুলে বৃত্তি!

বাঁশখালীর ৪নং বাহারচড়া ইউনিয়নের বাঁশখালা গ্রামে জন্ম তার। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে বাহারচরা রত্নপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছে সে। ২০১৭ সালে বাঁশখালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরিক্ষায়(পিএসসি)অংশগ্রণ করে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি লাভ করেছে রুমি। ক্ষুদে এই মেধাবী শিক্ষার্থী জন্মের ৪ বছর বয়সে মা' লুৎফুন্নেছা কে হারিয়েছে। মমতাময়ী মা' নাই যার সেই বুঝে মা হারানোর ব্যাথা কতটুকু বেদনাদায়ক।


তার সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবা শামশুল আলমের সংসারে তারা ৩ বোন ১ ভাই। তিন বোনই পড়া লেখা করে। ইসমত আরা সবার ছোট। পড়া লেখায় সে অদম্য ও মেধাবী। তার বড় ভাই শহরে শুটকীর ব্যবসা করে যৎসমান্য আয় করে। সংসারের টানা পোড়নে তাদের লেখা পড়ার খরচ যোগাতে অক্ষম বাবা। ছোট চাচা খাইরুজ্জামান এখন তাদের দেখা শুনা করে বলে জানান রুমি। দারিদ্রতার মধ্যে বেড়ে উঠা রুমি চালিয়ে যাচ্ছে পড়ালেখা।


তবে সংশয়ে কাজ করছে যদি মাঝপথে ঝড়ে পড়তে হয় তাকে। অভাবের সংসারে মেয়েটির মা নেই! সেটা ভাবতেই তার চোখে জল আসে। সে অনেক অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে। বড় হলে সে কি হবে এমন স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে বলেন- "আমি একজন আদর্শ শিক্ষক হবো। শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। শিক্ষা মানুষকে মহান করে। মানুষকে উন্নত মানসিকতায় নিয়ে যায়।


সমাজে শিক্ষা আলো ছড়ায়। শিক্ষা ছাড়া জাতীর উন্নতি অসম্ভব। তাই আমি শিক্ষার বিস্তারে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। বাঁশখালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার বাবা তুল্য কাঞ্চন গুপ্ত তিনি না হলে আমি বহু আগেই পড়া লেখা থেকে ছিটকে যেতাম। তিনি আমাকে বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়িয়েছেন। আমি এখানেই শিক্ষার গুরুত্বটা খুঁজে পেয়েছি। তাই আমি বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাই।"


মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখা স্বভাবজাত একটা অধিকারও বটে। অনেক সময় স্বপ্ন গুলো চুরি হয়ে যায় নানা বাঁধায়। জীবন চলমান প্রক্রিয়া। চলমান জীবনে নানা উত্থান পতনের ধ্বনী অনুরণিত হয়।


তারপরও স্বপ্ন দেখা থেকে মানুষ পিছু হটেনা। পশ্চিম বাঁশখালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম হাসিমুখ ফাউন্ডেশনের আর্তের সেবায় কাজ করছে খবর শুনে রুমিকে প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন। রুমির বড় স্বপ্ন সে একদিন বাঁশখালীর সেরা শিক্ষক কাঞ্চন গুপ্ত স্যারের মতো শিক্ষক হবেন। সমাজে শিক্ষার আলো জ্বালাবে। অন্ধ চক্ষুর আলো ফোটাবে। কিন্তু স্বপ্নের পথে বড় বাঁধা দারিদ্র্যতা। দারিদ্র্যতাকে জয় করেই স্বপ্ন পুরুণ সম্ভব।


বাঁশখালীতে আর্তের সেবায় কাজ করে হাসিমুখ ফাউন্ডেশন। যারা পড়ালেখার প্রতি তীব্র আগ্রহী, মেধাবী অথচ দরিদ্র্য তাদের পাশে স্বপ্নের সারথি হয়ে কাজ করছে হাসিমুখ ফাউন্ডেশন। রুমির দায়িত্ব নিল হাসিমুখ ফাউন্ডেশন। ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহরিয়ার বলেন, রুমি অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। আমরা চাইনা সে অর্থের অভাবে পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ুক। হাসিমুখ ফাউন্ডেশন তার পড়ালেখার সব দায়িত্ব নিয়েছে। হাসিমুখ রুমিদের হাসি ফুটাতে কাজ করে যাবে বললেন, ফাউন্ডেশন সহযোগী এস এম জসীম উদ্দীন। আজ থেকে রুমি হাসিমুখ ফাউন্ডেশন পরিবারের একজন।


তার পাশে হাসিমুখ ছায়া হয়ে থাকার আশ্বাস দেন গাজী কাইছার বিপ্লব। অপর সহ প্রতিষ্ঠাতা রাসেল চৌধুরী এই প্রতিবেদককে জানান ‘আমার বাঁশখালা গ্রামে গরীব অথচ মেধাবী, পড়তে আগ্রহী তাদের খুঁজে বের করে সারা বছরের শিক্ষা উপকরণ দিয়েছি হাসিমুখ ফাউন্ডেশন থেকে এবং পুরো ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত তাদের দায়িত্ব নিয়ে পাশে থাকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হাসিমুখ ফাউন্ডেশন



#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Know about Cookies
Ok, Go it!
To Top